ঈদে এমন নিঃসঙ্গতা আগে দেখেনি রেল
মুসলিম বিশ্বের দুটি ঈদ নানা উৎসবের ডালা মেলে ধরে। নতুন পোশাকের পাশাপাশি প্রিয়জনদের কাছে ফেরা এর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু এবার করোনাকালের জন্য অনেকেই রাজধানী বা অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহর থেকে প্রিয়জনের কাছে ফিরতে পারছেন না। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঈদে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলেও তা হিতে বিপরীত হয়েছে। এ নিয়ে সমাজে শ্রেণি-বৈষম্য প্রকট হয়েছে বলে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতামত দিচ্ছেন, প্রতিবাদ করছেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামীকাল রোববার অথবা সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। অন্যান্য সময় ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য রেলস্টেশনগুলোতে টিকিটের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ বাধে। রাতভর লাইনে দাঁড়িয়ে সকালে টিকিট মিললে সব কষ্ট ভুলে যান যাত্রীরা। অগ্রিম টিকিট পাওয়ার পর চলে ট্রেনে ওঠার যুদ্ধ। তারপর সেই শিকড়ের উদ্দেশে আনন্দযাত্রা। প্রিয়মুখের পরশ পাওয়া। কিন্তু এবার এর কিছুই নেই।
শনিবার রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে কেবলই নীরব-নিস্তব্ধতা। নেই কুলি ও হকারদের হাঁকডাক। যাত্রীর পদচারণা তো নেই-ই বরং প্লাটফর্মে নিশ্চিন্তে সারি সারি কুকুর শুয়ে আছে। কয়েকটি পণ্যবাহী ট্রেন চললেও তার ছিটেফোটা দেখা গেল না। হয়তো ট্রেনগুলো পণ্য আনতে বেরিয়ে পড়েছে কোনো জনপদের দিকে। কমলাপুরে পত্রিকা, বইয়ের দোকান, রেস্তোরাঁ সব বন্ধ।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ও সাশ্রয়ী এই যাতায়াত মাধ্যম গত ২৪ মার্চ থেকে বন্ধ। স্বাধীনতার পর এইরকম দীর্ঘসময় ট্রেন বন্ধ থাকেনি। এমনকি কখনও এভাবে বন্ধ হবে তা কল্পনাও করেননি কেউ। শুধু স্বাধীনতার পর কেন ব্রিটিশদের শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এই ধরনের বিপর্যয় দেখেনি দেশবাসী। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক রুটের রেল বন্ধ থাকলেও দেশজুড়ে টানা রেল বন্ধের ঘটনা এই প্রথম। ফলে রেলের যেমন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তেমনি যাত্রীরাও পড়েছেন অথৈ সাগরে। যেন করোনাকালের নিঃসঙ্গতা ঘিরে ধরেছে পুরো রেল বিভাগই।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দুই মাস ধরে ট্রেন বন্ধ হলেও আবার কবে চালু হবে তার সমাধান কারও কাছে নেই। এই অনিশ্চয়তা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে যেমন হতাশা আছে, তেমনি মন ভালো নেই রেলে কর্মরতদেরও। এমনকি সাবেক কর্মকর্তারাও এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর ট্রেনের অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে, সংস্কার হয়েছে রেলপথ। কিন্তু কোনোকালেই এত দীর্ঘসময় বন্ধ থাকেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে কত যুদ্ধই তো দেখেছে এসব রেললাইন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে পাকিস্তান ইস্টার্ন রেলওয়েকে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে’ নামকরণ করার পর অনেক আন্দোলনের ঝড় বয়ে গেছে রেলের ওপর। কেউ কেউ আন্দোলনের নামে উপড়ে দিয়েছে লাইন। কেউবা আবার রেল পুড়িয়ে কয়লা করেছে। তবুও যাত্রী ও পণ্য নিয়ে নিরলস চলেছে ট্রেন।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকার কর্তৃক পরিচালিত দেশের একটি মুখ্য পরিবহন সংস্থা। প্রায় ২৫ হাজার নিয়মিত কর্মচারীসহ রেলওয়ের মোট ২৯৫৫.৫৩ কিলোমিটার রুট রয়েছে। দেশের এক প্রান্তকে অন্যপ্রান্তের সাথে সংযোজন করার জন্য রেলপথ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থলপরিবহন ব্যবস্থা। তাই রেলপথের সার্বিক উন্নতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এইচএস/বিএ/এমকেএইচ