‘কাঁথা-বালিশ সব ভিইজ্যা গেছে, সারা রাইত ঘুমাইতে পারি নাই’
‘ঝড়-বৃষ্টির দিনে আমাগো কষ্টের শেষ নাই। দেখেন না গতরাতের বৃষ্টিতে কাঁথা-বালিশ সব ভিইজ্যা গেছে, সারা রাইত ঘুমাইতে পারি নাই।’
বুধবার (২৭ মে) দুপুরে রাজধানীর নীলক্ষেত পলাশী রাস্তার ফুটপাতে ভেজা কাঁথা-বালিশ দেখিয়ে কথাগুলো বলছিল ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে। পাশেই বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়ে তার বড় বোন। ছোট বোনের কথায় সায় দিচ্ছিলেন তিনি। অল্প বয়সী এক তরুণ রিকশা থেকে একটি তোশক নামিয়ে ফুটপাতে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন।

নীলক্ষেত থেকে পলাশী অভিমুখী রাস্তার দুই পাশের ফুটপাতে কয়েকটি ভাসমান পরিবারের বাস। পলিথিন টাঙিয়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করে তারা। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির দিন এলেই তাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঝড়ো হাওয়ায় তাদের পলিথিনের ঘর উড়ে যায়। বৃষ্টিতে ভিজে যায় বিছানার চাদর, কাঁথা, বালিশ। ফলে নির্ঘুম রাত কাটে তাদের।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত রাতের প্রবল ঝড় ও বৃষ্টিতে রাজধানীর হতদরিদ্র ভাসমান মানুষগুলোর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। করোনাভাইরাসকে তারা যতটুকু ভয় না পায় তার চেয়ে বেশি ভয় পায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-বৃষ্টিকে। করোনা সংক্রমণের ভয় রাস্তাঘাটে লোকজন কম থাকায় এসব ভাসমান শ্রমজীবী মানুষের আয় কমে গেছে। তাদের পুরুষ সদস্যরা কেউ রিকশা চালায়, কেউ ভ্যান চালিয়ে কাঁচামাল বিক্রি করেন। নারী সদস্যরা বাসাবাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন।
বর্তমানে করোনার কারণে মানুষের চলাচল কমে যাওয়ায় পুরুষ সদস্যদের আয় নেই বললেই চলে। আর করোনা সংক্রমণের ভয়ে বাসায় গৃহপরিচারিকাও রাখতে চাচ্ছে না অনেকে। ফলে বর্তমানে মানুষের সাহায্যের ওপর নির্ভর করে তাদের বেঁচে থাকা।

আবহওয়া অধিদফতর থেকে জানা গেছে, গতকাল দিবাগত রাত ২টার পর থেকে এমন ঝড়ো হাওয়া এবং বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বুধবার সকাল পর্যন্ত ঢাকায় ৬৩ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানীতে বাতাসের গতি ছিল ৭৮ কিলোমিটার।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গতরাতে প্রথম ঝড় ও বৃষ্টিতে অনেক সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেছে। কোথাও কোথাও গাছের বড় বড় ডাল ভেঙে পড়ে আছে। বাংলামোটরের অদূরে পূর্ব দিকের ঢেউটিনের প্রাচীর ভেঙে পড়ে আছে। আজিমপুর পুরাতন কবরস্থান উত্তর দিকের সীমানা ঢেউটিনের প্রাচীর ভেঙে গেছে। শাহবাগ জাতীয় লাইব্রেরির সামনের একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের ডাল ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া তেজগাঁও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এমনকি অনেক অফিস বিল্ডিংয়ের ভেতরের গাছগুলো ঝড়ে ভেঙে গেছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী কয়েকদিন আবারও বজ্র বিদ্যুৎসহ ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে তাপমাত্রা কমতে পারে। সেই সঙ্গে ময়মনসিংহ ও সিলেটের কিছু কিছু জায়গায় মাঝারি ধরণের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এদিকে সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এমইউ/এমএসএইচ/এমকেএইচ