মুখে মাস্ক থাকছেই না!
সোমবার বিকেল ৫টা। রাজধানীর নীলক্ষেতের লেপ-তোষকের একটি বন্ধ দোকানের বারান্দায় বসে আছেন কয়েকজন তরুণ। তাদের প্রত্যেকের কাছে মাস্ক থাকলেও সঠিক নিয়ম মেনে কেউ তা পরিধান করেননি। কেউ হাতে নিয়ে বসে আছেন, কেউ আবার থুতনির নিচে নামিয়ে কথা বলছেন।
নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্বও মানেননি তারা। খুব কাছাকাছি বসে খোশগল্পে মত্ত। তাদের দেখে বিন্দুমাত্র বোঝার উপায় নেই রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, রাজধানীসহ সারাদেশে গত এক সপ্তাহে (২৫ মে থেকে ৩১ মে) পর্যন্ত সাড়ে ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এবং এ সময়ের মধ্যে ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধে দুই মাসেরও বেশি সময় সরকারি নির্দেশে সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি শেষে জীবন ও জীবিকার তাগিদে রোববার (৩১ মে) থেকে অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। গণপরিবহনও চলাচল শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানাসহ স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিনই বলছেন, আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। আপনি সুরক্ষিত থাকলে আপনার পরিবার সুরক্ষিত থাকবে ।
তারা বলছেন, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। তারা বারবার বাইরে বের হলে অবশ্যই মুখে মাস্ক পরিধান করার পাশাপাশি হাতের গ্লাভস সম্ভব হলে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) পরিধানে পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছে না।
গত কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক থাকলেও তারা সঠিক নিয়ম মেনে তা পরিধান করছে না। বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক নাকে মুখে না বেঁধে রেখে তা নামিয়ে থুতনির কাছে রাখছেন। এছাড়া নাকে-মুখেও হাত দিচ্ছেন অনেকে। শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখে খুব কাছাকাছি বসে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। এতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
তবে এর উল্টো চিত্রও দেখা গেছে। অনেকেই সঠিক নিয়ম মেনে মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস ব্যবহার করে রাস্তায় চলাফেরা করছেন।
রাজধানীর হাতিরপুলে কয়েকজন তরুণের কাছে মাস্ক খুলে রাখার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, মাস্ক পরে থাকলে দম বন্ধ লাগে। এ কারণে কিছু সময়ের জন্য তা খুলে রাখেন।
কারওয়ান বাজার এলাকার এক রিকশাচালক বলেন, গরমে রিকশা চালাতে জান এমনি বের হয়ে যেতে যাইতে চায়, এরপর বেশিক্ষণ মাস্ক পরে থাকলে আরও খারাপ লাগে। তাই মাঝে মাঝে খুলে রাখেন বলে জানান তিনি।
এমইউ/এমএসএইচ/এমএস