সেলুনেও বিক্রি হচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার!
সাইনবোর্ডে লেখা সেলুন, কিন্তু ভেতরে অন্য ব্যবসা। এই করোনাকালের সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা সেলুনের ভেতরেও মজুত করে অধিক মূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করছে।
শুধু সেলুনেই নয়, এলপি গ্যাস ও ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন সিলিন্ডারের দোকানেও করোনায় গুরুতর অসুস্থদের জন্য অত্যাবশ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করা হচ্ছে। যার কোনো অনুমোদন নেই, বৈধতা নেই, নেই অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানও।
রাজধানীর তেজগাঁও কলোনি বাজার মার্কেট যা হকার্স মার্কেট নামেও পরিচিত, সেখানে মঙ্গলবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অভিযানকালে অনুমোদন না নিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত বিক্রি ও ভাড়ায় চালানোর অভিযোগে একটি নাম সর্বস্ব সেলুনসহ তিন প্রতিষ্ঠানকে মোট ১১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
র্যাব-৩ এর সহযোগিতায় এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেকসহ তিন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
অভিযানের ব্যাপারে ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ বসু জাগো নিউজকে বলেন, মেসার্স তাহের ইন্টারপ্রাইজ মূলত এলপি গ্যাসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তারা করোনাকালে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন না নিয়ে এলপি গ্যাসের ব্যবসার আড়ালে অক্সিজেন সিলিন্ডারও বিক্রি করে আসছিল, সঙ্গে ভাড়ায় সিলিন্ডার সরবরাহ করছিল।
পলাশ বসু বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার মূলত এক ধরনের ড্রাগ, যা ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া মজুত বা বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবেই তা করে আসছিল। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবু তাহের কুরাইসিকে পাঁচ লাখ টাকা ও সহযোগী ইয়াসিনকে ৩ লাখ জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তেজগাঁও কলোনী বাজারের পাশেই একটি সেলুন। কিন্তু সেই সেলুন ব্যবসার আড়ালে ভেতরে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত দেখা যায়, যা বিক্রির জন্য রেখেছেন বলে স্বীকার করেন সেলুনের মালিক গোকুল।
প্রতিষ্ঠানটির কোনো অনুমোদন নেই, তাছাড়া সেলুনের আড়ালে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি এক ধরনের প্রতারণাও। সেলুনের মালিক গোকুলকে ভোক্তা অধিকার আইনে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এছাড়া একই মার্কেটের এসএসকে এন্টারপ্রাইজ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানকেও একই অভিযোগে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ বসু বলেন, মূলত ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবসা করে এসএসকে এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু সেখানেও অভিযান পরিচালনা করে মেডিকেল অক্সিজেন দেখা যায়। কোনো অনুমোদন নাই, এক্সপার্ট অপিনিয়ন, এক্সপার্ট টেকনিসিয়ানও নেই। এছাড়া বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই।
তবে মালিক ইমাম হোসেন শাকিল স্বীকার করেছেন, তিনি মূলত ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন সিলিন্ডারে ব্যবসা করেন, তবে সম্প্রতি তিনি মেডিকেল সিলিন্ডার বিক্রির জন্য মজুত করেছিলেন। প্রথমবারের মতো সতর্কতার জন্য প্রতিষ্ঠানটির মালিত শাকিলকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযানে উপস্থিত ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের বরাতে পলাশ বসু বলেন, জব্দ সিলিন্ডারগুলো আসলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন নাকি মেডিকেল অক্সিজেন সেটা আমরা কেউ জানি না। যেহেতু যথাযথ অনুমোদন নেই, সেজন্য বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া যদি কোনোভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডারের কথা বলে ভেতরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন ঢোকানো হয়, তাহলে বাসাবাড়িতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। রোগীর সুস্থতার চেয়ে অসুস্থতা বেশি কিংবা ইনফেকশন বেশি হতে পারে। তিন প্রতিষ্ঠান থেকেই শতাধিক সিলিন্ডার জব্দ করা হয়েছে।
জেইউ/এমএসএইচ/পিআর