পুরোপুরি মুক্ত করা কঠিন, তবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব : সালমান এফ রহমান
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, দেশের বাস্তবতার প্রেক্ষিতে কোনো এলাকা পুরোপুরি করোনামুক্ত করা কঠিন কাজ, তবে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
তিনি বলেন, জীবন ও জীবিকা দুটোই চালু রাখার উপায় বের করতে হবে, এজন্য ব্যাপক সচেতনতা বাড়িয়ে প্রত্যেক ব্যক্তিকে করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) তার নির্বাচনী এলাকায় ‘অগ্রসর দোহার-নবাবগঞ্জ টেলিমেডিসিন সেবা’ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
সালমান এফ রহমান করোনার কারণে যেসব প্রবাসী চাকরি হারাচ্ছেন তাদের পুনর্বাসনে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও নবাবগঞ্জে আন্তর্জাতিকমানের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা জানান।
অনলাইনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে একাত্তর টেলিভিশনের বার্তা প্রধান শাকিল আহমেদ কর্মসূচির ধারণা তুলে ধরে বলেন, কোনো দুর্যোগ একা মোকাবিলা করা যায় না। বিশেষ করে প্রতিটি এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে আসলেই করোনা দুর্যোগ পার হওয়া সম্ভব।
সেজন্য অগ্রসর দোহার নবাবগঞ্জ নামের দুর্যোগকালীন এ প্ল্যাটফর্মে এলাকার সব পেশাজীবী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনকে এক মঞ্চে আনা হচ্ছে। প্রথম কর্মসূচি হিসেবে এ অঞ্চলের ১৪ জন ডাক্তার সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টেলিফোনে দরকারি চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব আলী নুর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রবাসী অধ্যুষিত এ অঞ্চল ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় এখানে করোনা মোকাবিলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সংক্রমণের হার কমিয়ে আনতে সচেতনতার বিকল্প নেই। প্রয়োজনে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম বাড়ানো হবে, একই সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের নিয়ে আইসোলেশন সেন্টার ও করোনা পরীক্ষার সুযোগ বাড়ানোর নির্দেশনা দেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নবাবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সালাউদ্দিন মনজু, দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার, লেখক দন্তস্য রওশন, এশিয়ান টিভির সিনিয়র রিপোর্টার লাবণ্য ভূঁইয়া, নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইমলাম, দোহার উপজেলা স্বস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমাদুল হাসান খান সুমন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, দোহার নবাবগঞ্জ পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি আনিসুর রহমান খান, ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, ডা. শ্যামলাল পাল, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার , ডা. মেসবাহ উদ্দিন ও সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডার স্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা। অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন দোহার নবাবগঞ্জের প্রকৌশলী, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা।
সালমান এফ রহমান বলেন, করোনাকে ভয় না পেয়ে তা মোকাবিলা করেই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দোহার-নবাবগঞ্জে আধুনিক টেলিমেডিসিন সেবা নিয়ে আমার ব্যাপক চিন্তা রয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমন্বয় করা হবে। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে রোগীরা যাতে ভিডিও কলের মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। দুই উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্যবীমা করার চিন্তাভাবনা চলছে।
সালমান এফ রহমান অগ্রসর দোহার-নবাবগঞ্জ টেলিমেডিসিন সেবা কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা থাকলে অনেক ভালো কাজ করা সম্ভব। করোনা সংকটের প্রথম থেকে দোহার ও নবাবগঞ্জকে নিরাপদ রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর বলেন, আন্তর্জাতিক নার্সিং ইনস্টিটিউটের বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে দোহার-নবাবগঞ্জের জন্য পিসিআর ল্যাবের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি অগ্রসর দোহার-নবাবগঞ্জের টেলিমেডিসিন সেবা কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।
অগ্রসর দোহার-নবাবগঞ্জের বিষয়ে এশিয়ান টিভির সিনিয়র রিপোর্টার লাবন্য ভূইয়া বলেন, শেকড়ের টানেই আমাদের সবার এ উদ্যোগ। আমরা দোহার-নবাবগঞ্জের মানুষের পাশে থাকতে চাই। আমরা সরকারের পাশাপাশি জনগণকে সেবা দিতে সবাইকে একত্রিত করে একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে কাজ করতে চাচ্ছি।
অনুষ্ঠান শেষে উদ্ধোধন করা হয় টেলিমেডিসিন সেবা। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ 01893-808322 নম্বরে ফোন করে যেকোনো স্বাস্থ্যসেবা পাবেন দোহার-নবাবগঞ্জবাসী।
এফএইচ/এএইচ/এমএস