করোনা : হাজারের বেশি শেষকৃত্যে কোয়ান্টাম
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিপর্যস্ত জনজীবন । দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্ত ও মৃতের মিছিল। করোনা ছোঁয়াচে ভাইরাস হওয়ায় তৈরি হয়েছে মানবিক সংকট। নিকটাত্মীয়ের শেষ বিদায়ে পর্যন্ত অংশ নিচ্ছেন না স্বজনরা। এমনই এক পরিস্থিতিতে করোনায় মৃতদের সৎকারে এগিয়ে এসেছে সেচ্ছাসেবী সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন।
করোনায় হাজারো মৃতের শেষ যাত্রায় পাশে ছিল এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সারাদেশে করোনায় আক্রান্ত কিংবা উপসর্গে মৃতদের শেষ বিদায় জানাতে হাজির হচ্ছেন কোয়ান্টাম দাফন কার্যক্রমের স্বেচ্ছাসেবী দল। যার যার ধর্মের রীতি অনুযায়ী সম্মানের সঙ্গে মরদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন করছেন তারা।
গত ৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে সর্বধর্মীয় মানুষের শেষ যাত্রার সেবায় চলছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের এ দাফন সেবা।
কোভিড-১৯ দাফন কার্যক্রমের সমন্বয়ক ছালেহ আহমেদ বলেন, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান সব ধর্মের জন্যই আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে আমরা দাফন বা সৎকার কার্য সম্পন্ন করছি। সারাদেশেই সুসংগঠিতভাবে সেবাদানে নিয়োজিত আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দল। এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ ও সাসপেক্টেড হাজারেরও অধিক মরদেহের শেষকৃত্যে জড়িত ছিল আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দল।
৪ জুন পর্যন্ত সারাদেশে মোট ১ হাজার ৫৫ জনের মরদেহ দাফন-কাফন, সৎকার বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে মুসলিম দাফন ও কাফনে ৮৯১ জন, সনাতন ১৫২ জন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ৯ জন এবং খ্রিস্টান ধর্মের ৩ জনের শেষ বিদায়ে পাশে ছিল কোয়ান্টাম।
ছালেহ আহমেদ জানান, ধর্মীয় বিধান মেনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ অনুযায়ী দাফন সম্পন্ন করে যাচ্ছি আমরা। মুসলিমদের যথাযথ ধর্মীয় বিধান মেনে গোসল-অজুসহ কাফনের কাপড় থেকে শুরু করে জানাজা পড়িয়ে যথাযথ নিয়মে কবরস্থ করা হয়। মুসলিম ছাড়াও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য রয়েছে আমাদের দক্ষ সনাতন দল। খ্রিস্টান কিংবা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যবস্থা। এছাড়া মহিলাদের জন্য রয়েছে আলাদা মহিলা দল।
পাবনার দক্ষিণ রাঘবপুরে গত ১১ জুন মৃত্যুবরণ করেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জেমস সুব্রত গোস্বামী। খ্রিস্টীয় রীতি-নীতি মেনেই তার সমাধি করে কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবক দল। পরিবারের কয়েকজনের উপস্থিতিতে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী, জলশুদ্ধি, দেহশুদ্ধি, আত্মাশুদ্ধি, চিতাপূরক মন্ত্র কিংবা আত্মার প্রশান্তির জন্যে শান্তিমন্ত্র উচ্চারণপূর্বক ধূপ বা চন্দন কাঠের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে দাহ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। সৎকার কাজে থাকে প্রশিক্ষিত ব্রাহ্মণের উপস্থিতি। কখনো পরিবারের কেউ উপস্থিত না থাকলে নিজেরাই মুখাগ্নি করেন কোয়ান্টাম সনাতন দলের স্বেচ্ছাসেবকরা। একইভাবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের রীতি মেনে দাহ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবক দল।
করোনার এই সময়ে সারাদেশকে ২৩টি জোনে ভাগ করে চলছে কোয়ান্টামের দাফন সেবা। রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, যশোর, বগুড়া, রংপুর, পাবনাসহ দেশের যেকোনো প্রান্তের জন্য প্রস্তুত রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল। প্রয়োজনে এক জেলা থেকে ওজু-গোসল ও কাফনের কাপড় পরিয়ে সমন্বয় করে অন্য জেলায় দাফন কাজ সম্পন্ন করছেন কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্যরা।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সাল থেকে বেওয়ারিশ লাশসহ মৃতের সম্মানজনক শেষ বিদায় জানাতে কাজ করছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। মানবিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা কোভিড-১৯ দাফন কার্যক্রম শুরু করে।
এইচএস/এমএফ/এমএস