‘প্রভাব খাটিয়ে’ টিকা নিচ্ছে অপ্রাপ্তবয়স্করা

নাজমুল হুসাইন
নাজমুল হুসাইন নাজমুল হুসাইন , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:১৮ পিএম, ০৩ জুলাই ২০২১

দেশজুড়ে করোনা টিকার জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে। অনেকেই কয়েক মাস আগে নিবন্ধন করেও টিকা পাচ্ছে না। সরবরাহ বন্ধ থাকায় কিছুদিন টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। গত কয়েক দিন থেকে আবারও নতুন করে টিকাদান শুরু হয়েছে।

এদিকে যেখানে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কিছু পেশার লোকজন ছাড়া ৪০ বছরের নিচে সাধারণ কোনো নাগরিক টিকার জন্য নিবন্ধনই করতে পারবেন না সেখানে আজ কয়েকজন অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরীকে টিকা নিতে দেখা গেছে।

শনিবার দুপুরে (৩ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) টিকাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

এখানে আজ ছয় থেকে আটজন অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরীকে ফাইজারের টিকা নেয়ার বিষয়টি জাগো নিউজের প্রতিবেদকের দৃষ্টিগোচর হয়। কিন্তু তারা কীভাবে টিকা নিচ্ছে সেটা জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বিষটি এড়িয়ে যায়।

টিকাকেন্দ্রে দায়িত্বরত চিকিৎসক (উপ-পরিচালক) খোরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি মাত্র খেয়াল করলাম। কীভাবে তাদের টিকার নিবন্ধন হলো সেটি দেখা হবে।’

jagonews24

এরপর পরিচয় গোপন করে কথা হয় কয়েকজন টিকা কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা বলেন, ‘প্রভাবশালী পরিবারের কয়েকজন শিশু টিকা নিচ্ছে জোর করেই। উপর লেভেল থেকে তাদের বিষয়ে তদবির রয়েছে।’

এদিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক যারা টিকা নিয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। যদিও প্রথমদিকে তারা বলছিলেন, নিবন্ধন করেই তারা টিকা নিচ্ছেন।

অপ্রাপ্ত বয়স্ক ওইসব কিশোর-কিশোরীদের তো জাতীয় পরিচয়পত্রই নেই। তাহলে টিকার নিবন্ধন কীভাবে হলো? অথবা তাদের টিকার নিবন্ধন কার্ড কার নামে? দেখতে চাইলে তারা দেখায়নি। টিকা নেয়ার পর সবাই দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।

শনিবার বিএসএমএমইউতে চার শতাধিক মানুষকে ফাইজারের করোনা টিকা দেয়া হয়েছে। এই কেন্দ্রের পাশাপাশি আরও সাতটি কেন্দ্রে এদিন ফাইজারের টিকা দেয়ার তথ্য জানিয়েছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ।

jagonews24

টিকাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ফাইজারের টিকা নেয়ার জন্য মানুষের আগ্রহ অনেক। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ টিকা নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এর মধ্যে অল্প বয়সের এসব শিশু টিকা নিয়েছে, যা উপস্থিত সবাইকে অবাক করেছে।

বিএসএমএমইউয়ের দুটি বুথে একসঙ্গে চারজন করে গ্রহীতাকে টিকা দেয়া হচ্ছিল। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। সকালে গণমাধ্যমের ভিড় ছিল। দুপুরের পরে যখন তাদের উপস্থিতি ছিল না তখন ওই ঘটনা ঘটে।

সেখানে টিকা নেয়ার পর একরামুজ্জামান নামে একজন বলেন, ‘হঠাৎ সিরিয়ালের মাঝখানে কিছু বাচ্চা প্রবেশ করলো। তাদের টিকা দেয়া হলো। কিছু বুঝতে পারলাম না। পরে নার্সকে জিজ্ঞাস করলে, বলে স্যারের নির্দেশ। পলিটিক্যাল লোক।’

এ বিষয়ে কথা বলতে বিএসএমএমইউ’র ভিসি ডা. শারফুদ্দিন আহমেদকে শনিবার বিকেলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, শিশুদের টিকা দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদিও ফাইজারের টিকা ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বছরের মে মাসে শিশুদের এ টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) কর্তৃপক্ষ। তারও আগে ১২ বছর বয়সী শিশুদের টিকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কানাডা সরকার।

এনএইচ/এমআরআর/এসএইচএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।