দ. আফ্রিকা থেকে ফিরলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ সংক্রমিত আফ্রিকা মহাদেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে এলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনাভাইরাসের আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ মোকাবিলার প্রস্তুতি সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ওমিক্রন করোনার নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট, এটি সাউথ আফ্রিকায় দেখা দিয়েছে। এটা আফ্রিকার অনেকগুলো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেকগুলো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বাংলাদেশে কীভাবে ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রথমত হলো যাতে না আসে, ঠেকানো যায়, সেই চেষ্টা করা। যদি আসে, কীভাবে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করবো, আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয়ে কাজ করবো, বিদেশ থেকে যারা আসবে তাদের কীভাবে গ্রহণ করবো, কোয়ারেন্টাইন করবো সে বিষয়ে আলোচনা করেছি।
ওমিক্রন ডেল্টা থেকেও বেশি সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আক্রান্ত হলে রোগীর মৃদু লক্ষণ থাকে। রোগী দুর্বল হয়, হালকা কাশি থাকে, জ্বর হয় না। যে কারণে বোঝা মুশকিল।
‘আমাদের হাসপাতালগুলো প্রস্তুত আছে। করোনা নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা মোকাবিলায় যেসব অবকাঠামো তৈরি করেছি এগুলো সেই অবস্থায়ই আছে। বরং আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেডও ১৮ হাজার আছে, ১২০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনও আছে। লিকুইড অক্সিজেনের পরিমাণও অনেক, প্রায় ৩০০ টনের কাছাকাছি বাংলাদেশ তৈরি করছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশ বা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যখন কেউ আসবে, আমরা তাদের আসতে নিরুৎসাহিত করতে চাইবো। তাদের সঙ্গে আমাদের যাতে কোনো ফ্লাইট না থাকে। ওখান থেকে যারাই আসুক তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে বাধ্যতামূলক। সেটা হোম কোয়ারেন্টাইন নয়, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন। সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে, সেই কোয়ারেন্টাইন ম্যানেজমেন্ট খুব শক্ত হতে হবে। আমরা চাই সশস্ত্র বাহিনীর ব্যক্তিরা সেই কোয়ারেন্টাইন ম্যানেজ করবেন।
তিনি আরও বলেন, অন্য দেশগুলো যেখানে এখনো ওমিক্রন ইনফেক্টেড হয়নি সেখান থেকে টেস্টের সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু অন্য কোনো দেশেও যদি এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়, সেই দেশের লোক এলে আমরা ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের কথা ভাবছি। এটাই আমরা করবো।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে বলা হয়েছে, যাকে হোটেল কোয়ারেন্টাইন করতে দেওয়া হয়েছে, তারা অনেক সময় হোটেলে থাকেনি। ফাঁকি দিয়ে বের হয়েছে, বাড়িতে পর্যন্ত চলে গেছে। আমরা এ বিষয়ে শক্ত হওয়ার জন্য বলেছি।’
দিয়াবাড়ীতে আগের করা কোয়ারেন্টাইনের স্থানটি থাকলে সেখানেও প্রায় ১০০ হোটেলে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হবে বলে জানিযেছেন মন্ত্রী।
কোয়ারেন্টাইনের খরচ কে বহন করবে- জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খরচটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজে বহন করবেন। কেউ যদি না পারেন তখন আমরা বিবেচনা করবো।’
‘টেস্টের বিষয়ে আমরা ৭২ ঘণ্টার পরিবর্তে চিন্তা-ভাবনা করছি ৪৮ বা ২৪ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা যায় কিনা। কিন্তু কমিয়ে আনবো। আমাদের সীমান্তে মনিটরিংটা আরও জোরদার করতে বলা হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র যেখানে অনেক লোক যাওয়া-আসা করে সেটাকেও একটু কমিয়ে আনা যায় কিনা- এ বিষয়গুলো আমরা আলোচনা করেছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব জেলায় চিঠি দেবো। জেলা কমিটি উপজেলা কমিটি, ইউনিয়ন কমিটিকেও জানাবো। তাদের দায়িত্ব আমরা বলে দেবো। আমরা চাই সামজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান সীমিত করা হোক। নতুন করে কোনো অনুষ্ঠানে গ্রামগঞ্জে ও উপজেলায় যাতে না নেওয়া হয়, সেদিকেও আমরা একটা পরামর্শ দেবো।’
ওমিক্রন মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের কাছে চিঠি দেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মসজিদের মাধ্যমেও যাতে আলোচনা হয়, ভুল মেসেজ না দেওয়া হয়। এটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে করার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘চলাচলের সময় কেউ মাস্ক না পরলে জরিমানা করা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বলেছি তারা যাতে একটা ন্যাশনাল মনিটরিং সে তৈরি করেন। এই সেলের মাধ্যমে সব জেলা ও উপজেলায় খোঁজখবর রাখবে ও তড়িৎগতিতে সিদ্ধান্ত নেবে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা যেসব সভা করে থাকি। এখন থেকে সভাগুলো, ফিজিক্যাল প্রেজেন্সগুলো একটু কমিয়ে দিয়ে ভার্চুয়াল সভার দিকে যাওয়ার জন্য। সব মিনিস্ট্রি যাতে করে এবং আমরাও সেটা ফলো করবো ও এ বিষয়ে পরামর্শ দেবো।’
ইউরোপের দেশগুলোতেও ওমিক্রন ছড়িয়েছে, ওইসব দেশ থেকে লোকজন আসার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইউরোপে ছড়িয়েছে আমরা জানি, কিন্তু অল্প। তাই ঢালাওভাবে তো আমরা ফ্লাইট বন্ধ করতে পারবো না। যারা সংক্রমিত দেশ থেকে আসবে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আমরা জোর দেবো। যে ১৫-২০টি দেশে ওমিক্রন ছড়িয়েছে সেসব দেশকে আমরা আলাদাভাবে দেখবো। প্রয়োজন হলে কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টাও জোরদার করবো।’
সভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণাল ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/এমআরআর/এএসএম