ঘাটের মরা ওসি রেজাউল
বাড়ি উত্তরাঞ্চলে। পড়াশোনাও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই পুলিশ প্রশাসনের অনেকের নাক সিটকানি সহ্য করতে হয়েছে। তবুও নিজ যোগ্যতায় পেয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নেয়া মেধা মূল্যায়ন পরীক্ষায় সকল অফিসারকে পেছনে ফেলে হয়েছিলেন প্রথম। এরপর যোগ্যতার ফসল হিসেবে পান রুপনগর থানার দায়িত্ব। কিন্তু ৬ মাসও যায়নি। প্রত্যাহার করে নেয়া হলো তাকে।
সম্প্রতি রাজধানীর ৫টি থানার ওসিকে পরিবর্তন করে নতুনদের দায়িত্বে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি থানার যথোপযুক্ত কারণ থাকলেও রুপনগর থানার ওসিকে পরিবর্তনের সঠিক কারণ জানা যায়নি। বলছিলাম ওই থানার ওসি মো. রেজাউল হাসানের কথা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডিএমপি এলাকায় বেশ কয়েকটি থানার ওসিদের যোগসাজশে পুলিশ সদস্যরা ব্যাপক অনিয়ম ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ ছিল। যাত্রাবাড়ী থানার ওসির বিরুদ্ধে ছিল জমি দখল, মাদক, হোটেলের মাছ ও সবজি আড়ৎ থেকে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ। এবিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুইবার তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছিল। উত্তরখান থানার ওসি মো. ইউনুস আলী ও শাহজাহানপুর থানার ওসি মো. মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধেও ছিল একই অভিযোগ।
অন্যদিকে, শাহআলী থানা এলাকায় চা দোকানি বাবুলকে চুলায় ফেলে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তেরর স্বার্থে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় ওসি এ কে এম শাহীন মন্ডলকে।
তবে রুপনগর ছিল ভিন্ন। অন্যান্য থানার চেয়ে আয়তনে ও জনসংখ্যায় ছোট হলেও রুপনগর থানাটি গুরুত্বপূর্ণ বেরিবাধ এলাকার নিরাপত্তা ও মাদকের জন্য। গত বছরের ৬ আগস্ট এই থানায় নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়েছিলেন মো. রেজাউল হাসান। যোগদানের পর তিনি মাদকের বিরুদ্ধে এক রকম জেহাদ ঘোষণা করেন। ফলে নড়েচড়ে বসেছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
এরই অংশ হিসেবে অল্প সময়েই তিনি রুপনগরের মাদকের ২টি বড় স্পট বন্ধ করেছিলেন। দায়িত্ব নেয়ার পর বেরিবাধ এলাকায় অপ্রীতিকর কিছুও ঘটেনি।
থানা সূত্র জানায়, এখানে মূলত: মাদক স্পট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা পেতো সরকারদলীয় লোকজন। মাদক স্পট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওসিকে সরানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে সবাই।
রুপনগরের রজব কমিশনার মাদক স্পট থেকে মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা পেতেন। মাদক স্পট বন্ধ করাই কাল হয়ে দাঁড়ায় ওসি রেজাউলের। ওসির সঙ্গে বিরোধ শুরু হয় সরকারদলীয় রজবের। ওসিকে সরানোর সব ধরণের চেষ্টাই করেন তিনি। শেষে সফলও হন তিনি। আর এতে ঘাটের মরা ওসি রেজাউল।
থানা সূত্রটি আরও জানায়, ওয়ারি ইন্সপেক্টর (তদন্ত) দায়িত্ব শেষে রুপনগরে ওসি হিসেবে যোগদান করেন রেজাউল হাসান। ডিএমপির মেধা মূল্যায়ন পরীক্ষায় তিনি প্রথম হয়েই ওসির দায়িত্ব পান। এর আগে যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, সূত্রাপুরে এবং ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
রুপনগরে এসেই তিনি থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়েছেন। মাদককে জিরো টলারেন্স দেখনোর জন্য নিয়মিত অভিযান শুরু করেছেন। এজন্য স্থানীয়দের কাছ থেকে সহযোগিতামূলক সমর্থনও পেয়েছেন তিনি।
কিন্তু সম্প্রতি কয়েকটি থানার কিছু পুলিশ সদস্যদের অপরাধের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে পুলিশ বাহিনী। এজন্য ডিএমপি থেকে প্রত্যাহার ও সাসপেন্ডের পাশাপাশি বদলি শুরু হয়। এর মধ্যে ওসি রেজাউলকে বদলি করার যথোপযুক্ত কারণ মেলেনি।
তবে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, জনস্বার্থে ৫ থানার ওসিদের বদলি করা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার এ আদেশ দিয়েছেন। অনতিবিলম্বে এ বদলি আদেশ কার্যকর হবে।
এব্যাপারে রুপনগরের সদ্য বদলি হওয়া ওসি মো. রেজাউল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। পুলিশে যোগদানের পর থেকে শৃঙ্খলা রক্ষায় পিছু হয়নি। ডিএমপি কর্তৃপক্ষ যে আদেশ দিয়েছেন তা মানতে আমি বাধ্য। এর বেশি কিছু বলতে পারি না।
জেইউ/একে/আরআইপি