সাক্ষাৎকারে সাবেক আইজিপি

সেদিন রিজার্ভ পুলিশ রিকুইজিশন দেওয়া হলো না কেন?

তৌহিদুজ্জামান তন্ময়
তৌহিদুজ্জামান তন্ময় তৌহিদুজ্জামান তন্ময় , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২২

ঢাকার আদালত চত্বর থেকে সম্প্রতি ফিল্মি স্টাইলে পুলিশ সদস্যদের চোখে স্প্রে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য তারা। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হন বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. নূরুল আনোয়ার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন তৌহিদুজ্জামান তন্ময়।

নুরুল আনোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, আদালতের পক্ষে পেশকার ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর নিয়ে মামলার তারিখ নির্ধারণ করেন। অর্থাৎ, তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত। এর একটি কপি দেওয়া হয় আদালতে থাকা কোর্ট পুলিশকে। কপি দেওয়া হয় পাবলিক প্রসিকিউশন ও জেলখানায়। শুরুটা হয় আদালত থেকে এবং শেষ হয় জেলখানা পর্যন্ত।

আরও পড়ুন >>> ফিল্মি স্টাইলে জঙ্গি ছিনতাই, ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি

‘ভয়ংকর চরিত্রের আসামি, দুর্ধর্ষ আসামি, মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কিংবা ন্যূনতম ১৪ বছরের জেল হয়েছে এমন যে কোনো আসামি জেলখানা থেকে বের করলে তাকে ডান্ডাবেড়ি পরাতে হবে। সেটা হাসপাতাল কিংবা আদালত যেখানেই নেওয়া হোক। এর মধ্যে কোনো শর্টকাট নেই। তবে আসামি যখন ডকে ওঠানো হবে তখন ডান্ডাবেড়ি খুলে দিয়ে চারপাশে পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে থাকে। আবার যখন আদালতের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে তখন ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতের হাজতখানায় নিতে হবে।

প্রথম ভুল জেলখানার

সাবেক এই আইজিপির মতে, প্রথমে যদি জেলখানা থেকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আনা হতো তাহলে আসামিদের এভাবে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা তারা করতো না। কারণ ডান্ডাবেড়ি ভেঙে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। সব তালা এক মডেলের চাবি দিয়ে খোলাও সম্ভব নয়। আমার প্রশ্ন, ঘটনাস্থলে একটি নকল চাবি পাওয়া গেছে। এই নকল চাবি কোথা থেকে এলো? জেলখানা থেকে ওইদিন (রোববার) জঙ্গিদের কোন হ্যান্ডকাফ পরানো হবে তা কোনো একজন ব্যক্তি আগে থেকেই চিহ্নিত করে রেখেছিলেন তাদের হাতে পরানোর জন্য। সেই হ্যান্ডকাফের নকল চাবি বানানো হয়েছে। নিশ্চয় এটি জেলখানা থেকেই হয়েছে।

আরও পড়ুন >> তিন মাস আগে কারাগারে পরিকল্পনা, নেতৃত্বে আয়মান

দ্বিতীয় ভুল স্কটপার্টি জিএমপি পুলিশের

মো. নূরুল আনোয়ার বলেন, স্কটপার্টি হিসেবে গাজীপুর মেট্রোপলিটন (জিএমপি) পুলিশ যখন আসামি সিরিভ করতে গেলো তাদের উচিত ছিল জেলখানাকে বলা- ১২ জন জঙ্গি ভয়ংকর আসামি, তাদের ডান্ডাবেড়ি না পরালে আমরা আসামি নিয়ে যাবো না। জিএমপি পুলিশ তা করেনি। দ্বিতীয় ভুলটি তাদের।

গাজীপুর পুলিশের উচিত ছিল সাধারণ স্কটপার্টি ছাড়াও সামনে পেছনে দুটি সশস্ত্র দল দেওয়া। তারা আদালতে আনবে এরপর আদালতের কার্যক্রম শেষে স্কট করে নিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন >> পরীমনির জন্য শত পুলিশ, দুর্ধর্ষ জঙ্গির নিরাপত্তায় একজন!

তৃতীয় ভুল কোর্ট পুলিশের

সাবেক এই আইজিপি বলেন, জেলখানা থেকে যখন আদালতে আনা হলো তখন কোর্ট পুলিশ বা প্রসিকিউশন পুলিশের পয়েন্ট আউট করা দরকার ছিল। স্কটপার্টি ও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এই আসামিদের এভাবে রাখলে যে কোনো সময় ছিনতাই কিংবা পালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু কোর্ট পুলিশ তা করেনি। তারা সাধারণ আসামিদের মতো জঙ্গিদের নেওয়ার চেষ্টা করেছে।

আরও পড়ুন >> পলাতক দুই জঙ্গির হাতে মোটা অঙ্কের টাকা দেয় মেহেদী: সিটিটিসি

চতুর্থ ভুল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের

‘আদালতের দায়িত্বে থাকেন একজন ডিসি প্রসিকিউশন। তার প্রাথমিক রেসপনসিবিলিটি ছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এমন আসামি আদালতে আসবে তিনি জানতেন। সেদিন কেন তিনি রিজার্ভ পুলিশ রিকুইজিশন দিয়ে আনেননি? অবহেলা না কি ষড়যন্ত্র? এটা ডিসি প্রসিকিউশনের ব্যর্থতা, অদক্ষতা ও অযোগ্যতা। এর কোনো ক্ষমা নেই। আমরা দেখলাম একজন ইন্সপেক্টর ও এসআই-কনস্টেবলকে বহিষ্কার করা হলো। ডিসি প্রসিকিউশনকে আগে বহিষ্কার করা দরকার ছিল।’

দায় এড়াতে পারেন না আরও যারা

মো. নূরুল আনোয়ার আরও বলেন, মানুষের জন্যই বিচারব্যবস্থা। বিচারক ভালো করেই জানেন আসামি কারা। কারণ অর্ডার তিনিই করেছেন। তার উচিত ছিল ডিসি প্রসিকিউশনকে বলা আসামিদের পাহারার ব্যবস্থা করা। এটা কো-অপারেশন। পাবলিক প্রসিকিউটরও এখানে দায় এড়াতে পারেন না।

টিটি/এএসএ/জেআইএম

প্রথমে যদি জেলখানা থেকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আনা হতো তাহলে আসামিদের এভাবে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা তারা করতো না। কারণ ডান্ডাবেড়ি ভেঙে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। সব তালা এক মডেলের চাবি দিয়ে খোলাও সম্ভব নয়।

জেলখানা থেকে যখন আদালতে আনা হলো তখন কোর্ট পুলিশ বা প্রসিকিউশন পুলিশের পয়েন্ট আউট করা দরকার ছিল। স্কটপার্টি ও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এই আসামিদের এভাবে রাখলে যে কোনো সময় ছিনতাই কিংবা পালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু কোর্ট পুলিশ তা করেনি।

আদালতের দায়িত্বে থাকেন একজন ডিসি প্রসিকিউশন। তার প্রাথমিক রেসনসিবিলিটি ছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এমন আসামি আদালতে আসবে তিনি জানতেন। সেদিন কেন তিনি রিজার্ভ পুলিশ রিকুইজিশন দিয়ে আনেননি? অবহেলা না কি ষড়যন্ত্র?

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।