ঢাবিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ


প্রকাশিত: ০৪:০৯ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগে প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ছয়জন আবেদনকারীর মধ্যে মৌখিক পরীক্ষায় একজনকে ডাকা হয়েছে। এছাড়া ডাক না পাওয়া পাঁচ প্রার্থীর দুইজনের প্রবন্ধ ও প্রকাশিত বই রয়েছে। তবে কোনো ধরণের প্রবন্ধ প্রকাশ না হলেও ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য মৌখিক পরীক্ষায় ডাক পেয়েছেন দীপ্তি রানী দত্ত নামের এক প্রার্থী।

এদিকে, ছয় প্রার্থীর মধ্যে মাত্র একজনকে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়েছে বলে বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. মলয় বালা স্বীকার করলেও শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।  

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৭ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে প্রাচ্যকলা বিভাগে অধ্যাপকের একটি শূন্য পদের বিপরীতে তত্ত্বীয় বিষয় পড়ানোর জন্য শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ থেকে একজন এবং ব্যবহারিক বিষয়ে পড়ানোর জন্য প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে একজনকে অস্থায়ী প্রভাষক পদের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তত্ত্বীয় বিষয় পড়ানোর জন্য আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ অথবা জিপিএ ৪ দশমিক ২৫ এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগ অথবা সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩ দশমিক ৫০ থাকতে হবে। আর ব্যবহারিক বিষয়ে পড়ানোর জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হতে হবে প্রাচ্যাকলা বিভাগ থেকে। তবে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী না থাকলে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা যেতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, তত্ত্বীয় বিষয়ে ছয়জন এবং ব্যবহারিক বিষয়ে ১২ জনসহ মোট ১৮ প্রার্থী আবেদন করেন। গত জানুয়ারির শেষ দিকে তত্ত্বীয় বিষয়ে ছয়জন আবেদনকারীর মধ্য একমাত্র দীপ্তি রানী দত্তকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছে।
 
বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, দীপ্তি রানী দত্ত ২০০৬ সালে চারুকলা অনুষদের অংকন ও চিত্রণ বিভাগ থেকে স্নাতক পরীক্ষায় ২য় বিভাগে পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

অন্যদিকে, আবেদনকারীদের মধ্যে তাসলিমা বেগম ও শ্বাশ্বতী মজুমদার নামের দুই প্রার্থীও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বর্তমানে দু’জনই বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া এ দু`জনের প্রবন্ধ ও প্রকাশিত বই রয়েছে।

ভুক্তভোগী ও বিভাগের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক অভিযোগ করেন, পূর্ব পরিকল্পিকভাবে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে মাত্র একজনকে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষার জন্য একজন প্রার্থীকে ডাকা শিক্ষক নিয়োগের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

তারা আরো বলেন, এর মূল কারণ যোগ্য প্রার্থীদের ডাকা হলে বিভাগের চেয়ারম্যান ও অনুষদের ডিনের মতাদর্শী অযোগ্য প্রার্থী বাদ পড়বে। দেশের সবোর্চ্চ বিদ্যাপীঠে এ ধরনের ঘটনা খুবই লজ্জাজনক।

জানতে চাইলে প্রাচ্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মলয় বালা জাগো নিউজকে বলেন, চারটি ক্যাটাগরি মেনে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ছাড়াও এসএসসি এবং এইচএসসির ফলাফল রয়েছে। তবে এখানে যারা আবেদন করছে এ চার ক্যাটাগরিতে কারও সেটা নেই। তাই শর্ত শিথিল করা হয়েছে।

ছয়জন আবেদন করলেও মৌখিক পরীক্ষায় কেন একজনকে ডাকা হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ভালো জানেন।
 
শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রশ্নই আসে না একজনকে ডাকার। আমরা যোগ্যতা সম্পন্নদের মৌখিক পরীক্ষায় ডেকেছি। যারা এসব তথ্য দেয় তারা না জেনে দেয়।

তবে মৌখিক পরীক্ষায় একজনকে ডাকার বিষয় বিভাগীয় চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন বলে জানালে তিনি বলেন, তিনি  কিভাবে বলেন? হয়তো বাকীদের হাতে মৌখিক পরীক্ষার চিঠি পৌঁছায়নি। তাই বলে তো একজনকে ডাকা হয়নি। এসব তথ্য যারা দেয় তারা ভুল দেয়।

এমএইচ/আরএস/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।