স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বিদেশিরা এসে ছবক দেওয়া লজ্জার: শাহিদুজ্জামান

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৩২ এএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩

‘আমরা যে বিপদের মধ্যে আছি, এটি বিদেশিদের এসে বোঝানোর কিছু নেই। বিদেশি চাপে নয়, দেশ বাঁচাতে হবে জনগণকেই। যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ভারত আমাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে ঠিক, কিন্তু এখানে তাদের স্বার্থও আছে। আর আমাদের স্বার্থ হচ্ছে, দেশটাকে বাঁচানো। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছি, অথচ এখনো বিদেশিরা এসে ছবক দেয়। এটি তো লজ্জার। কোথায় যাওয়ার কথা ছিল, আর কোথায় যেতে পেরেছি এটি নিয়ে ভাবলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

বলছিলেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. এম শাহিদুজ্জামান। আসন্ন নির্বাচন ও আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতা নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জাগো নিউজের কাছে।

চলমান রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশের সব সর্বনাশের মূল রাজনীতি। আমরা আমাদের রাজনীতিটা ঠিক করতে পারিনি। ক্রমাগতভাবে আমরা গর্তের দিকে গেছি, অন্ধকার গর্ত। যেখান থেকে বের হওয়ার সহসা কোনো উপায় নেই।

‘রাজনীতির এই অন্ধকার পথ থেকে বের হওয়ার জন্য উপায় বের করতে হবে। বিকল্প খুঁজতে হবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরেও ভাবতে হবে। এরা ক্রমাগতভাবে মিথ্যা বলে। মিথ্যা বলতে একটুও বুক কাঁপে না রাজনীতিকদের। রাজনীতিকদের সঙ্গে মূলধারার মিডিয়াও মিথ্যা বলে যাচ্ছে। এ কারণে মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আস্থা রাখছে। এতে তো গণমাধ্যমের কাঠামো দুর্বল হয়ে গেলো।’

আরও পড়ুন>> ‘রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হলে রাষ্ট্রও দুর্বল হয়ে যায়’

এই বিশ্লেষক মনে করেন, ‘জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে গেলে এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ভেঙে দিতে হবে। ভেঙে দেওয়ার একটি উপায় নির্বাচন। কিন্তু এই কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এই কমিশন একটা খবিশ। বিশেষ সুবিধার জন্য হা করে আছে। আগেরগুলোর মতোই জালিয়াতি নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। ইভিএম মেশিন কেনার জন্য কোটি কোটি টাকা নষ্ট করছে। জনগণের টাকা লুট করছে। এই মেশিন কেনার জালিয়াতি দিয়েই কমিশনের ব্যর্থতা প্রমাণ হয়।’

‘আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে মানুষ আর ভরসা রাখছে না। মানুষ বিরক্ত। গণমানুষকে নিজেদের শাসন করার একটু সুযোগ করে দিতে হবে। কাঠামো ভেঙে পুরোনোরা এলেও সমস্যা নেই। রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মানুষের আর দাঁড়ানোর জায়গা নেই।’

আরও পড়ুন>> ‘কারও দায়িত্ব পালনে গাফিলতি থাকলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিতে পারে’

‘এখানে মানুষের শক্তির দ্বারগুলো একের পর এক রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীলদের রাজনৈতিক বিবেচনায় বসানো হয়। এতে সেনাবাহিনী আর বিশেষ কোনো সংস্থা হিসেবে হাজির হতে পারছে না। রাজনীতির যে বাজে উন্মাদনা বিরাজ করছে তা দমাতে হলে রাজনৈতিক শিষ্টাচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ যোগ করেন এম শাহিদুজ্জামান।

সংবিধানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানটা গিলে ফেলা হয়েছে নিজেদের স্বার্থে। ১৬ বার সংশোধন করে এই সংবিধান আর জনগণের নেই। এটি সরকারগুলোর সম্পদ করে ফেলা হয়েছে। সংবিধানের দোহাই দিয়েই অপশাসন, জুলুমনীতি চালু রাখা হয়।’

আরও পড়ুন>> ‘পাহাড়িদের সঙ্গে ইসলামিক জঙ্গিদের যোগাযোগ থাকার কথা নয়’

‘এই জুলুমনীতি চলতে থাকলে আগামীতে দেশ ভেঙে যাবে। তখন কেউ আর রক্ষা পাবো না। যে বিপদের ভয়ে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চাইছে না, সেই বিপদ আরও জেঁকে বসবে যদি আবার নির্বাচন একতরফা হয়। এই বিপদের কথা জেনেই সরকারের লোকেরা পাগলের মতো প্রলাপ করছে। বিদেশি চাপ না থাকলে মন্ত্রী-এমপিরা এত মিথ্যা কথা বলতেন না। মিথ্যা দিয়ে ভয় ঢাকার চেষ্টা করছে। আগামী প্রজন্ম পুরো মিথ্যার ওপর ভর করে বেড়ে উঠছে এবং সমাজের সর্বত্রই এর প্রভাব পড়ছে।’

এএসএস/এএসএ/জেআইএম

‘আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে মানুষ আর ভরসা রাখছে না। মানুষ বিরক্ত। গণমানুষকে নিজেদের শাসন করার একটু সুযোগ করে দিতে হবে। কাঠামো ভেঙে পুরোনোরা এলেও সমস্যা নেই। রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মানুষের আর দাঁড়ানোর জায়গা নেই।’

‘বাংলাদেশের সংবিধানটা গিলে ফেলা হয়েছে নিজেদের স্বার্থে। ১৬ বার সংশোধন করে এই সংবিধান আর জনগণের নেই। এটি সরকারগুলোর সম্পদ করে ফেলা হয়েছে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।