ক্যান্সার সচেতনতা সৃষ্টির লড়াকু সৈনিক ডা. রাসকিন


প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, ০৪ মার্চ ২০১৬

দেশে মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধ  ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রায় দুই যুগ ধরে নিরলস পরিশ্রমের পাশাপাশি যারা স্বোচ্চার ভূমিকা রেখে চলেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের ইপিডেমিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন।

গুণী এই চিকিৎসকের ধ্যান, জ্ঞান, মন-মনন সর্বত্র জুড়েই শুধু ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দৃঢ় প্রত্যয়। ক্যান্সার কি, কেন হয় আর কি ধরনের আগাম সতর্কতা অবলম্বন করলে ভয়াবহ এই মরণ ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকা যায়- এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করাকেই তিনি ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। সে লক্ষ্যে সচেতনতামূলক বার্তা নিয়ে সারাদেশের বিভিন্ন জেলার বস্তি, গার্মেন্টস, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় চষে বেড়াচ্ছেন।

এক সময় স্তন ও জরায়ু মুখের ক্যান্সার সম্পর্কে যে নারীরা কথা বলতে লজ্জাবোধ করতেন, তাদের মধ্যে রোগটি সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে লজ্জার দেয়াল ভেঙ্গে ফেলার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন ডা. রাসকিন। গোটা অক্টোবর মাস জুড়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা মাস পালন ও জরায়ু মুখের ক্যান্সার রোধে জনসচেতনতায় ‘জননীর জন্য পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচি চালুর মাধ্যমে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

প্রায় দুই যুগের পথচলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. রাসকিন জানান, ১৯৯০ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ইন্টার্নশীপ শেষ করে ১৯৯৩ সালে তিনি  জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে যোগদান করেন। এর আগে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার চাকরি হলেও যোগদান করেননি। ক্যান্সার রোগ সম্পর্কে খুব বেশি জানা না থাকলেও মেডিকেলে পড়াশুনা করার সময় থেকে অবচেতন মনে এ রোগটি সম্পর্কে আগ্রহ জম্মে তার। ক্যান্সার হাসপাতালে যোগদানের পর এ রোগে আক্রান্তদের সঙ্গে একান্তে আলাপ করে বাড়ি, ঘর, আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চাইতেন। তিনি দেখতেন অধিকাংশ রোগীই ক্যান্সারের সর্বশেষ ধাপ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। গ্রামেগঞ্জে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন। সচেতনতার অভাবে আগাম রোগটি সনাক্ত না হওয়ায় টাকা পয়সা খরচ করেও অকাল মৃত্যু হচ্ছে অধিকাংশ রোগীর।

ক্যান্সার হাসপাতালে যোগদানের ১০ বছর পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি ১৫ দিনের ফেলোশীপে অংশ নিয়ে ক্যান্সার রোগটির প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে তার অর্ন্তদৃষ্টি খুলে যায়। কেরালায় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. নায়ারের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার সময় ডা. রাসকিন কমিউনিটি ভিত্তিক অনকোলজি (ক্যান্সার) চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান লাভ করেন। তিনি জানতে পারেন স্থানীয় ভিত্তিক দ্রুত ক্যান্সার শনাক্তকরণ কেন্দ্রে কিভাবে হেলথ প্রোভাইডাররা এলাকায় গিয়ে ক্যান্সার রোগী আগাম শনাক্ত ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠাচ্ছেন।

ডা. রাসকিন দেশে ফিরে এসে মানুষের কাছে কিভাবে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। প্রথমে বাংলাদেশ ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব হন। পরবর্তীতে ক্যান্সার প্রতিরোধ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (সিসিপিআর) প্রতিষ্ঠা করেন। গত প্রায় দুই যুগে তিনি দেশের ৫৯টি জেলায় ঘুরে ঘুরে ক্যান্সার রোগটি কি, এ রোগের লক্ষণ, কিভাবে আগাম শনাক্ত করা যায়, কোথায় চিকিৎসা পাওয়া যায় ইত্যাদি তথ্য মানুষকে জানিয়েছেন। সম্প্রতি নারীদের ব্রেস্ট ও জরায়ুর মুখের ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেছেন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ডা. রাসকিন বলেন, কয়েক বছর আগেও নারীরা স্তন ও জরায়ু মুখের ক্যান্সার নিয়ে কথা বলতে সংকোচবোধ করতেন। এটি নিছক লজ্জার বিষয় বলে খোলামেলা আলোচনা করতে চাইতেন না। সচেতনতা সৃষ্টি সম্ভব হওয়ায় নারীরা এখন স্বপ্রণোদিত হয়ে স্তন ও জরায়ুর মুখের ক্যান্সার শনাক্ত করতে আসছেন। স্তন ও জরায়ুর মুখেরসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের গুরত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন ডা. রাসকিন। তার মতে, ক্যান্সার রোগের আগাম প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও আক্রান্ত হলে হাত পা গুটিয়ে বসে না থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয় সে সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সরকারিভাবে বিভাগীয় পর্যায়ে একটি করে ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মিত হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ক্যান্সার জাতীয় সম্মেলন: শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর শহীদ ডা. মিলন হলে অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী ক্যান্সার জাতীয় সম্মেলন। সকাল সাড়ে ১০টায় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান। গাইনোকলজিক্যাল অনকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় এই সম্মেলনের আয়োজক ক্যান্সার প্রতিরোধ ও গবেষণা কেন্দ্র- সিসিপিআর। ডা. রাসকিন এ সংগঠনটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

জানা গেছে, বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে ফুসফুস, স্তন, জরায়ু- মুখ, মুখগহ্বর- এই চারটি প্রধান ক্যান্সারের সঙ্গে শিশুদের ক্যান্সার, ক্যান্সার স্ক্রিনিং, ও পেলিয়েটিভ বা প্রশমন চিকিৎসা, রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধের উপর হবে আলোচনা হবে।

এমইউ/এমএমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।