শত প্রতিকূলতার মাঝেও হাসেনা বানুর দৃষ্টান্ত স্থাপন
‘শুধু শাসন করে সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করা যায় না। পাশাপাশি ভালোবাসাও দিতে হয়’ এভাবেই কথাগুলো বললেন হাসেনা বানু (৭৩)। জীবননগর উপজেলার নিভৃত পল্লী উথলীতে বাস করেও স্বামীর অবর্তমানে নানা প্রতিকূলতার মাঝে ১১ সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই মহিয়সী নারী। হাসেনা বানুর ১০ ছেলে ও এক মেয়ে বর্তমানে দেশ বিদেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
উপজেলার উথলী গ্রামের বাড়িতে বসে কথা হয় এই মহিয়সী নারীর সঙ্গে। তিনি জানান, স্বামী সিরাজুল ইসলাম পেশায় দলিল লেখক ছিলেন। পরিবারের খরচ যোগাতে বড় ছেলে হামিদুর রহমান উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করে বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করেন। বড় ছেলের বয়স যখন ২৩/২৪ বছর তখন তার স্বামী মারা যান। গোটা সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে হাসেনা বানু ও বড় ছেলে হামিদুরের ওপর। এরপর শক্ত হাতে হাল ধরেন হাসেনা বানু। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে কোন মূল্যে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। এরপর স্বামীর রেখে যাওয়া ১৫ বিঘা জমিতে পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ ও ব্যবসা করতে দু’ ছেলেকে সহযোগিতাসহ অন্যান্য সন্তানদের লেখাপড়ার প্রতি নজর দেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হাসেনা বানুর দ্বিতীয় ছেলে হাসিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতকোত্তর করে ঢাকার আশুলিয়ায় ‘বিশ্বাস ইন্টান্যাশনাল’ নামে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। তৃতীয় ছেলে হালিকুর রহমান দর্শনা কলেজ থেকে বিকম পাস করে ১৯৯৭ সালে আমেরিকায় পাড়ি দিয়ে সেখানে গাড়ির ব্যবসা করছেন। চতুর্থ ছেলে সিদ্দিকুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর করে বর্তমানে তিনি স্টার পারটেক্স গ্রুপের উপ-মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পঞ্চম ছেলে মখলেছুর রহমান হংকং ও চীনের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে বর্তমানে কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। 
ষষ্ঠ ছেলে হুমায়ুন কবীর খুলনা বিআইটি থেকে পাস করে বর্তমানে ঝিনাইদহের মহেশপুরে পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে সহকারী মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সপ্তম ছেলে হারুন অর রশিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করে মেজ ভাইয়ের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। অষ্টম ছেলে মামুন-অর-রশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর করে বর্তমানে কুষ্টিয়া সরকারি কমার্সিয়াল কলেজে অধ্যাপনা করছেন। নবম ছেলে আমিনুল ইসলাম খুলনা বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর করে বাড়ির পার্শ্ববর্তী ডুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।
হাসেনা বানুর ১১ সন্তানের সধ্যে বর্তমানে আমিনুল ইসলামই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আছেন। ছোট ছেলে মোমিনুর রহমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি প্রকৌশলে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে বর্তমানে মাগুরা পল্লী বিদ্যুত সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। একমাত্র মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন ঢাকার লালমাটিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর করেছেন এবং তিনি গৃহিণী।
আমিনুল হক জানান, মায়ের সময়োপযোগী নির্দেশনা এই সংসারে সুখ এনে দিয়েছে। মায়ের শুভ ইচ্ছার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন বড় ভাই ও মেজ ভাই।
এসএস/এমএস