আসছে নতুন আইন

অনলাইনে জুয়ার শাস্তি ৩ বছরের জেল

মাসুদ রানা
মাসুদ রানা মাসুদ রানা , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:০৭ পিএম, ২৪ মে ২০২৩
নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে অনলাইন জুয়া-ছবি জাগো নিউজ

জুয়া প্রতিরোধে নতুন আইন করছে সরকার। এজন্য নতুন ‘জুয়া আইন, ২০২৩’ এর খসড়া করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। মূলত ১৮৬৭ সালের ‘দ্য পাবলিক গ্র্যাম্বলিং অ্যাক্ট’ যুগোপযোগী করে নতুন আইনটি করা হচ্ছে।

নতুন আইনে অনলাইন জুয়া অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। কারণ অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে; এ জুয়ার খপ্পরে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। অনলাইন জুয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও খুনের ঘটনাও ঘটছে। পাতানো খেলা বা ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কথাও জোরেশোরে শোনা যায়, তাই এ বিষয়টিও রয়েছে খসড়া আইনে।

খসড়া আইনে জুয়ার শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। আগের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল ৫০০ টাকা জরিমানা ও তিন মাসের জেল।

আরও পড়ুন: বাড়ছে অনলাইন জুয়ায় আসক্তি, খোয়া যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা

তবে সরকার চাইলে পর্যটন বা বিশেষায়িত এলাকা, কোনো হোটেল বা ক্লাবকে এ আইনের আওতামুক্ত রাখতে পারবে বলেও খসড়ায় জানানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮৬৭ সালের জুয়া আইন হালনাগাদ করতে জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব লিপিকা ভদ্রকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি গত ফেব্রুয়ারি মাসে আইনের খসড়াটি জমা দেয়।

জননিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন খসড়া আইনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়গুলোর মতামত নেওয়া হচ্ছে। শিগগির আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় খসড়াটি চূড়ান্ত করে তা মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।

আরও পড়ুন: অনলাইন জুয়ায় বুঁদ রিকশাচালক-দিনমজুররাও

জননিরাপত্তা বিভাগের আইন ও শৃঙ্খলা অনুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান জুয়া আইনটি দেড়শ বছরেরও বেশি পুরোনো। এ আইন দিয়ে হাল আমলের জুয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কারণ এখন জুয়ায় তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়টি যুক্ত হয়েছে, যা আইনের আওতাভুক্ত নয়। একইসঙ্গে শাস্তিও খুবই কম। তাই জুয়ার আধুনিক পর্যায়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নতুন আইন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে শাস্তিও কয়েকগুণ বাড়ানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন: অনলাইন জুয়ায় হাজার কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৯

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এস এম রেজাউল মোস্তফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা নতুন জুয়া আইনের একটি খসড়া করে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার বা মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছি। অনেক মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে মতামত পেয়েছি। আরও কিছু মতামত পেলে আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং করে খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেব। আমরা আশা করছি, শিগগির আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং করতে পারবো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন আইনে অনলাইন জুয়া, খেলা নিয়ে জুয়া- সব বিষয়ই রাখছি। যেহেতু পুরোনো আইনটি যুগোপযোগী করা হচ্ছে, তাই ২০২৩ সালের আলোকে যা যা রয়েছে সবই আমরা অন্তর্ভুক্ত করবো।’

আরও পড়ুন: অনলাইন জুয়ায় সর্বস্বান্ত অনেকে, গ্রেফতার যুবক

খসড়া আইন অনুযায়ী ‘জুয়া খেলা’ বলতে বোঝাবে সরকার বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদন ছাড়া সব ধরনের বাজি ধরা, অর্থ কিংবা পণ্যের বিনিময়ে প্রতিযোগিতামূলক সব ধরনের হাউজি, সব ধরনের লটারি, অর্থ বা আর্থিক মূল্যমানের কোন পণ্যের বিনিময়ে ভাগ্য কিংবা ভাগ্য ও দক্ষতার সংমিশ্রনে কোনো আর্থিক ঝুঁকিপূর্ণ খেলা। ‘বাজী (বেটিং)’ ও ‘বাজীকর’-এর সংজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে খসড়া আইনে।

অনলাইন বেটিং ও ম্যাচ ফিক্সিং

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ বা অন্য কোনো অনলাইন বা ইলেক্ট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যমে খেলাধুলা বা এ সংক্রান্ত অন্য কোনো বিষয়ে বাজি ধরলে বা বাজি ধরার জন্য নগদ বা ক্যাশবিহীন ব্যাংকিং লেনদেন (যেমন- ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি) বা মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন (যেমন- বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায়, পেপল ইত্যাদি) বা বিট কয়েনসহ অন্য যে কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি ইত্যাদি বা অন্য কোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন করলে তবে তা অনলাইন বেটিং বা জুয়া হবে।

আরও পড়ুন: মোবাইলের লুডুতে জুয়া!

এছাড়া নিজ বা অন্যের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে অনলাইন বেটিং সাইট বা অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করেন বা হোস্টিং দেন বা জুয়ার এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বা মাসিক ভাড়া বা অন্য কোনো প্রতিশ্রুতিতে দেশে বা বিদেশে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন বা এ উদ্দেশ্যে পরামর্শের জন্য ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিচালনা করেন তবে তাও অনলাইন জুয়ার আওতাভুক্ত হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

‘পাতানো খেলা (ম্যাচ ফিক্সিং)’ বলতে আগে থেকে কোনো প্রতিযোগিতামূলক খেলা বা খেলার অংশ বিশেষের ফলাফল নির্ধারণ করে খেলাকে বোঝাবে এবং এটা স্পট ফিক্সিংকে (তাৎক্ষণিকভাবে কোন খেলা বা খেলার অংশ বিশেষের ফলাফল নির্ধারণ) অন্তর্ভুক্ত করবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

অনলাইন জুয়া এখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র-প্রতীকী ছবি

অনলাইন জুয়া এখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র-প্রতীকী ছবি

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, অনলাইন বেটিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল বা সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।

আরও পড়ুন: অনলাইন জুয়া প্ল্যাটফর্মের ৫ সদস্য গ্রেফতার

পাতানো খেলার খেলোয়াড়, আয়োজনকারী বা অন্য যারা এতে অংশগ্রহণ করেছেন বা ওই খেলাকে পাতানো করতে যারা বাজি ধরেছেন, সবাই এ আইনের অধীনে অপরাধী বলে গণ্য হবেন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল বা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

যে অপরাধে যে শাস্তি পেতে হবে

খসড়া আইন অনুযায়ী, প্রকাশ্য স্থান, ঘর, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণে, প্রাচীরবেষ্টিত স্থান বা যানবাহন বা ইলেক্ট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যমে যে কেউ জুয়া খেলার উদ্দেশ্যে অর্থ আদান-প্রদান করলে তিনি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

পুলিশের হাতে আটক অনলাইন জুয়াড়িরা-ফাইল ছবি

পুলিশের হাতে আটক অনলাইন জুয়াড়িরা-ফাইল ছবি

কোনো স্থান বা যানবাহন বা ইলেক্ট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যমে বাজি বা জুয়ার উদ্দেশ্যে কাউকে উপস্থিত দেখতে পাওয়া গেলে তিনি সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। জুয়া খেলতে এসেছেন প্রমাণিত না হলেও যে কোনো বাজি বা জুয়া খেলার স্থানে কোনো ব্যক্তি উপস্থিত থাকলে তিনিও জুয়া খেলার উদ্দেশ্যে উপস্থিত ছিলেন বলে গণ্য হবে এবং বাজি বা জুয়া খেলার জন্য নির্ধারিত দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

যদি কোনো ব্যক্তি বাজিকর হিসাবে কাজ করেন তাহলে তিনি সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

গ্রাম পর্যায়েও মোবাইলে এমন জুয়া খেলতে দেখা যায়-ছবি

গ্রাম পর্যায়েও মোবাইলে এমন জুয়া খেলতে দেখা যায়-ফাইল ছবি

এ আইনের অধীনে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ অফিসার কোনো সাধারণ জুয়ার আখড়ায় প্রবেশ করে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করলে ওই ব্যক্তি নিজের নাম ঠিকানা জানাতে অস্বীকার করলে বা মিথ্যা নাম বা ঠিকানা দিলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেট দোষী সাব্যস্ত করলে যে কোনো যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ ধার্য করতে পারবেন। জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করলে ম্যাজিস্ট্রেট তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দিতে পারবেন।

এই আইনের অধীনে করা অপরাধের শাস্তি ভোগ করার পর কোনো ব্যক্তি যদি ফের অপরাধ করেন তাহলে তিনি ওই অপরাধের জন্য এই আইনে সর্বোচ্চ যে শাস্তি রয়েছে এর দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে অর্থপাচারেরও অভিযোগ আছে-প্রতীকী ছবি

অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে অর্থপাচারেরও অভিযোগ আছে-প্রতীকী ছবি

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার বাইরে এ আইনে কোনো অপরাধ করলে তাকে এই আইনের অধীনে এমনভাবে বিচার করা যাবে যেন তিনি ওই অপরাধ বাংলাদেশের ভেতরে করেছেন।

আওতামুক্ত ঘোষণা

সরকার ইচ্ছা করলে কোনো পর্যটন এলাকা বা বিশেষায়িত এলাকা, হোটেল বা ক্লাবকে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে এই আইনের আওতামুক্ত ঘোষণা করতে পারবে বলে খসড়া জুয়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরএমএম/এসএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।