বন্ধু কেমন আছিস বল?
‘বন্ধু কেমন আছিস বল? তোর খবর কী? অনেক দিন পর দেখা দোস্তো! কি করছিস এখন?’ অনিচ্ছা সত্ত্বেও নির্মম বাস্তবতার বাইরে চলার ক্ষমতা পৃথিবীতে কারো নেই। ঘুরে ফিরে একই গোলকে উল্টে-পাল্টে পড়ে নানাভাবে। ছাত্রজীবনে এর চড়াই উৎরাইটা যেনো একটু বেশিই।
স্কুল-কলেজ পেরিয়ে শক্ত বন্ধন তৈরি হওয়ার অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠ হলো বিশ্ববিদ্যালয়। এর পরিধি আর ব্যপকতা এতোই বিশাল যে মাঝে মাঝে সঙ্গায়ণেও হিমশিম খেতে হয়। সম্মান, স্নাতকোত্তর শেষ করে প্রায়শই ছিটকে বের হতে বিশ্ববিদ্যালয় তথা আর্শীবাদখ্যাত ‘ছাত্রজীবন’ থেকে। কিন্তু তাতে কী জীবন থেমে থাকে? আবার যদি কখনো দেখা হয়ে যায় সেই কফি হাইজে, চায়ের আড্ডায় কিংবা গান-গল্প-গিটারে।
হয়তো সে সুযোগ আসেও। কাজে লাগানোটাই ‘আসল’ কথা। এমনই এক চিত্র ধরা পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায়। বিভিন্ন বিভাগের হীরক, সুবর্ণ ও রজত জয়ন্তীতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি বছরের শুরু থেকেই এসব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভাগগুলোতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে অ্যালামনাই পুনর্মিলনী।
চলতি বছরে অর্থনীতি, উদ্ভিদবিদ্যা, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, সমাজবিজ্ঞান ও ইংরেজি বিভাগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ১৯ ফেব্রুয়ারি ভ‚তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের দু`দিনব্যাপী অ্যালামনাই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ গত ১৯-২০ মার্চ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের হীরকজয়ন্তী ও অ্যালামনাই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে ২২-২৩ জানুয়ারি অর্থনীতি বিভাগ হীরক জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী উদযাপন করেছে। একই সময়ে উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সুবর্ণ জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী, ২৫ জানুয়ারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের রজত জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী এবং ১১-১২ ফেব্রুয়ারি ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় অ্যালামনাই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়া ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী ও পুনর্মিলনী এবং ১২-১৩ মার্চ পরিসংখ্যান বিভাগের ৫৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছরের অক্টোবরে গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের রজতজয়ন্তী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হয়ে যাওয়া বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এসব অনুষ্ঠান উপলক্ষে আবারও ফিরে এসেছেন প্রাণের মতিহারের সবুজ চত্বর রাবি ক্যাম্পাসে। তাদের চোখে-মুখে হারানো দিনগুলো আবারও হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সেই আড্ডা-গল্প, ক্যাম্পাস চষে বেড়ানো, নাচ-গান, হাসি-ঠাট্টা, গল্প-গুজব হয়তো আর আসবে না ফিরে। তারপরও দু-এক দিনের জন্য ক্যাম্পাসে আসতে পেরে অনেকেই নিজেকে সেই দিনগুলোতে ফিরে নেয়ার ‘বৃথা’ চেষ্টা করছেন বলে জাগো নিউজকে মন্তব্য করেন সাবেক শিক্ষার্থীর অনেকেই। 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শামীমা সুলতানা জাগো নিউজকে জানান, ২৫ বছর পর যখন ক্যাম্পাসে পা রাখলাম, হঠাৎই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। মনে হলো এইতো সেদিন, প্যারিস রোডে বন্ধুরা মিলে গান গাচ্ছি আর হাঁটছি। দিনগুলোর কথা মনে পড়লে জল আর চোখে আটকায় না।
দীর্ঘদিন পর শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব, ছোট-বড় ভাইদের এবং প্রিয় ক্যাম্পাসকে আবারও দু`চোখ ভরে দেখতে পারার আশায় শত ব্যবস্তার মাঝেও ছুটে এসেছেন। এর মধ্যে অনেকেই এসেছেন পরিবার-পরিজনদের নিয়ে।
কথা হয় আমিনুল হক নামে পরিসংখ্যান বিভাগের এক সাবেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি তার ছোট মেয়েকে নিয়ে এসেছেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়-বিভাগ দেখাতে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, ‘আমার মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয় দেখাতে নিয়ে এসেছি। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখাতে চাই ওকে।’
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা-গল্পে মেতে উঠেছেন সাবেকরা। সাবেকদের সঙ্গে মেতে উঠেছেন বর্তমানরাও। পরস্পর বিনিময় করছেন একে-অপরের অনুভূতি, ভালো লাগার দিনগুলোর কথা ও বিভিন্ন স্মৃতি জড়িত ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচের বিভিন্ন ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর, ইবলিশ চত্বর, আমবাগান চত্বর, শহীদ মিনার, গ্রন্থাগার, বদ্ধভূমি, চারুকলাসহ বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিতে ও ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। অনেককেই বন্ধুদের এক সঙ্গে পেয়ে গান-বাজনা করতেও দেখা গেছে।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৯৯৩-৯৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজাউল করিম জাগো নিউজকে জানান, ‘আসলে সব ভালো লাগা বোঝানো যায় না। তবে সময়টা আর আগের মতো নেই। সব বন্ধুরা আবার যদি হৈ হুল্লোড় করতে পারতাম, অনেক ভালো লাগতো।
সব মিলিয়ে চলতি বছরে ক্যাম্পাস ফিরেছে নতুন রূপে। এ বছর জয়ন্তী উৎসবগুলো যেনো বেশিই ধরা দিয়েছে। পুরনো মুখগুলো নতুন করে পেয়ে আনন্দ অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছেন। অনেকে আবার চলতি বছরে অন্যান্য পুনর্মিলনীতে ক্যাম্পাসে আসার আনন্দে অধীর আগ্রহে প্রহর গুণছেন।
এসএস/এমএস