পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময় কোনো দেশ মানবতার কথা বলেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:২৯ এএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে খুনিরা যখন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে তখন পৃথিবীর কোনো দেশ মানবতার কথা বলেনি। শোকবার্তাও পাঠায়নি। আজকে সেসব দেশই মানবতার জন্য হুঙ্কার দেয়। কিন্তু একটি পরিবারের এতগুলো মানুষকে হত্যার পরও সেদিন কারও মুখে কোনো কথা শোনা যায়নি।

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ অডিটোরিয়ামে জাতীয় শোক দিবস-২০২৩ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইনের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা যাবে না, এমন কালো আইন তখন করা হয়েছিল। খুনির বিচার করা যাবে না, এমন কালো আইন পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই।

ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২১ বছর সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে সেই কালো আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ব্যবস্থা করেন এবং জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেলের ভেতরে জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসীদের সম্পূর্ণভাবে মূলোৎপাটন করা। আমাদের বিরুদ্ধে যেসব দল আছে তারা সন্ত্রাস ও খুনখারাবিতে বিশ্বাস করে এবং তারা যখন সরকারে এসেছে তখন এসব কাজই করেছে।

বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় দেশের চিত্র তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সময়ে দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটে। সরকারি মদতে বাংলা ভাইয়ের উত্থান ঘটে। প্রকাশ্যে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা করে। আদালতে বিচার চলাকালীন বোমাবাজি করে মানুষ হত্যা করে। বিদেশি একজন রাষ্ট্রদূত সিলেটে মাজারে গিয়েছেন, সেখানেও গ্রেনেড হামলা করে এবং পুলিশসহ তিনজন নিহত হন। রাষ্ট্রদূতসহ অর্ধশতাধিক আহত হন।

তিনি বলেন, দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশ চলাকালে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়। সে ঘটনায় ২৪ জন মানুষ নিহত হন, প্রায় ৩০০ জন আহত হন। আমরা ওই রকম সন্ত্রাসের দেশ আর দেখতে চাই না। বিএনপি-জামায়াতের সরকার আমরা চিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭৫ এর আগে যেভাবে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল সাম্প্রতিককালেও সেরকম ষড়যন্ত্র চলছে। আপনারা এসব ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ থাকবেন। আওয়ামী লীগ জনগণে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণই এদেশের মালিক। তারা চাইলেই আমরা সরকারে আসবো, না চাইলে আসবো না। তবে আমরা সন্ত্রাসীদের হাতে দেশটাকে তুলে দিতে চাই না। আমরা দেশটাকে জিহাদিদের হাতে তুলে দিতে চাই না।

তিনি সবার উদ্দেশে বলেন, যদি আমরা সন্ত্রাসীদের হাতে দেশকে তুলে দিতে না চাই, জিহাদিদের হাতে তুলে দিতে না চাই, দুর্নীতিবাজদের হাতে তুলে দিতে না চাই তাহলে আমাদের প্রত্যেকের একটি দায়িত্ব আছে, সেটি হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দেশ কেমন ছিল সেটি সবাইকে জানানো।

বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস আর নিরাপত্তাহীনতার কারণে মানুষকে তখন বাইরে বের হতেও ভয়ে থাকতে হতো। অভিভাবকেরা স্কুল-কলেজে সন্তানদের পাঠাতে ভয় পেত। আমরা সে অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না।

তিনি বলেন, যদি আপনারা সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যৎ চান তাহলে শেখ হাসিনার সরকারকে আবার জয়যুক্ত করবেন। বাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সিদ্ধান্ত আপনাদেরই নিতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং সেগুলো তিনি বাস্তবায়ন করে দেখাচ্ছেন। নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়েছেন। দেশের জনগণের কল্যাণ কীভাবে করা যায় শেখ হাসিনা সবসময় সে চিন্তাই করেন।

উন্নত বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি, সাবেক সচিব মো. শহিদ উল্লা খন্দকার, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. মশিউর মালেক এবং তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি ড. হারুন অর রশিদ।

আইএইচআর/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।