‘মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বাড়লে আমরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো’

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৩৩ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২৪
জাগো নিউজ গ্রাফিক্স

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সামরিক ব্যক্তিত্ব, লেখক ও গবেষক। ২০০৭-২০১২ সাল পর্যন্ত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পত্রিকায় কলাম লিখছেন নিয়মিত।

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান পরিস্থিতি এবং এর প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। এ সংঘাতে পারমাণবিক বোমার ব্যবহার হবে বলে মনে করেন না এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক। তার মতে, ইরান অনেক পুরোনো দেশ এবং তাদের একটি দায়িত্বশীল ঐতিহ্য আছে। ইরান এখন অন্য মুসলিম দেশগুলোর নীতির ব্যাপারে গুরুত্ব দেবে।

এম সাখাওয়াত হোসেনের মতামত নিয়ে লিখেছেন সায়েম সাবু

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আলামত দেখছেন অনেকেই। আপনার পর্বেক্ষণ কী? এমন প্রশ্নে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বিশ্বযুদ্ধের যে রূপ সেভাবে আমরা কোনো যুদ্ধ হয়তো দেখবো না। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা করছেন অনেকে, আমি ঠিক সেভাবে ভাবছি না। তবে মধ্যপ্রাচ্যে একটা যুদ্ধ হবে সেটা বলা যেতেই পারে। আর সেটি হলে একধরনের বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ঠিক এরকম একটি ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছি। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমশই জটিলতা তৈরি হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

‘ইরান সহজেই ইসরায়েলকে ছাড় দেবে না। ইরান সরকার তার শক্তিমত্তা নিয়ে অনেক কিছুই বলেছে। দীর্ঘদিন ধরেই তারা বোঝাতে চাইছে সামরিক শক্তিতে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। ইরানের জনগণের মধ্যে একধরনের উচ্চ আকাঙ্ক্ষাও তৈরি হয়েছে। এ আকাঙ্ক্ষা থেকে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করবে।’

বিশ্বযুদ্ধের যে রূপ সেভাবে আমরা কোনো যুদ্ধ হয়তো দেখবো না। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা করছেন অনেকে, আমি ঠিক সেভাবে ভাবছি না। তবে মধ্যপ্রাচ্যে একটা যুদ্ধ হবে সেটা বলা যেতেই পারে। আর সেটি হলে একধরনের বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলে হামলা করার আগে ইরান ১৩ দিন সময় দিয়েছিল। ঘোষণা দিয়ে হামলা করেছে। এটি নজিরবিহীন। কিন্তু ইরানকে সে সময় দেওয়া হয়নি। ইরানের হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, ইসরায়েলি হামলায় ঘটেছে। এটি একটি ফ্যাক্টর। মানুষ হত্যা না করেও হামলা করা যায় ইরান তা দেখিয়েছে।’

চলমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়া কী তা দেখতে হবে উল্লেখ করে এই বিশ্লেষক বলেন, ‘আসলে পশ্চিমারা কীভাবে নেবে তার ওপর অনেক কিছুই ঘটতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে বলেছেন তোমার সঙ্গে আমি প্রতিক্রিয়া জানানোর মধ্যে নেই। বাইডেনের (যুক্তরাষ্ট্রে) নির্বাচন সামনে। আর ইরান তো একা ইসরায়েলের জন্য হুমকি নয়। হুতি, হিজবুল্লাহ, হামাসের মতো সশস্ত্র সংগঠনগুলো মিলে ইসরায়েলকে নিশানা করছে। তারা চাইলে এসব অঞ্চলে কোনো প্রকার বাণিজ্যিক জাহাজ চলতে দেবে না। এরই মধ্যে ঝামেলা তৈরি হয়েছে। এর শিকার যুক্তরাষ্ট্রও হবে।’

ইরান তো একা ইসরায়েলের জন্য হুমকি নয়। হুতি, হিজবুল্লাহ, হামাসের মতো সশস্ত্র সংগঠনগুলো মিলে ইসরায়েলকে নিশানা করছে। তারা চাইলে এসব অঞ্চলে কোনো প্রকার বাণিজ্যিক জাহাজ চলতে দেবে না। এরই মধ্যে ঝামেলা তৈরি হয়েছে। এর শিকার যুক্তরাষ্ট্রও হবে।

মধ্যপ্রাচ্য বা গাজায় ইসরায়েল যা করছে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ তা সমর্থন করছে না উল্লেখ করে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘গাজা ইস্যুতে গোটা বিশ্ব ভাগ হয়ে গেছে। ইউক্রেনেও পশ্চিমা শক্তি খুব ভালো অবস্থানে নেই। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মনে করা হয়েছিল রাশিয়া ভেঙে পড়বে। তার কিছুই ঘটলো না। বরং যুদ্ধ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়া জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। চীন যুক্ত হয়ে গেছে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক বোমা ইরানের হাতেও আসতে পারে। যদিও ইরানের পারমাণবিক বোমা বানাতে আরও ৬ মাস লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

‘তবে আমি মনে করি না পারমাণবিক বোমার ব্যবহার হবে। কারণ ইরান অনেক পুরোনো দেশ এবং তাদের একটি দায়িত্বশীল ঐতিহ্য আছে। ইরান এখন অন্য মুসলিম দেশগুলোর নীতির ব্যাপারে গুরুত্ব দেবে। যেমন জর্ডান তাদের আকাশসীমা মুক্ত রাখার কথা বলে ইসরায়েলকে সমর্থন করেছে। জর্ডানের মানুষ তাদের সরকারের নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে। প্রতিনিয়ত বিক্ষোভ করছে। এই চাপ জর্ডান সরকার কীভাবে সামলাবে তা দেখার আছে। ইরান এখন মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের মতের ওপর গুরুত্ব দেবে।’

আমরা কোনো কথা বলি না। আমরা সবসময় রিঅ্যাকশন করি। অ্যাকশনে যাওয়ার মতো আমাদের কোনো অবস্থান নেই। আমরা ইরান নাকি ইসরায়েলের পক্ষে তা কেউ জানি না। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বাড়লে আমরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। যুদ্ধ বাধলে আমাদের রেমিট্যান্স হারাতে হবে।

‘আমরা কোনো কথা বলি না। আমরা সবসময় রিঅ্যাকশন করি। অ্যাকশনে যাওয়ার মতো আমাদের কোনো অবস্থান নেই। আমরা ইরান নাকি ইসরায়েলের পক্ষে তা কেউ জানি না। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বাড়লে আমরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। যুদ্ধ বাধলে আমাদের রেমিট্যান্স হারাতে হবে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে। এমনিতেই বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আরও বিপদ হবে। কারণ, তেলের দাম বাড়লে বাংলাদেশের অর্থনীতি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে’- যোগ করেন এ নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

এএসএস/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।