হাদি হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গ: গুজবে কান দিবেন না

সম্পাদকীয় ডেস্ক
সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৫৫ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

রায়হানুল ইসলাম

২০২৫ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে সংঘটিত শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের সমকালীন রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি জলবিভাজক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সংস্কার এবং নির্বাচনী প্রস্তুতির সন্ধিক্ষণে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্রের ওপর এই সুপরিকল্পিত হামলা কেবল একটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নয়, বরং এটি একটি গভীর রাজনৈতিক ও কৌশলগত চক্রান্ত। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে পরিমাণ বিভ্রান্তি এবং গুজবের ডালপালা ছড়িয়েছে।

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের এক তেজস্বী কণ্ঠস্বর শরিফ ওসমান হাদি অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তিনি 'ইনকিলাব মঞ্চ' নামক প্ল্যাটফর্মটি গঠন করেন, যা মূলত বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং প্রতিবেশী দেশের আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। বিশেষ করে ভারতীয় হস্তক্ষেপের সমালোচনা এবং জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে তার আপসহীন অবস্থান তাকে তরুণ প্রজন্মের মাঝে জনপ্রিয় করে তোলে।

২০২৫ সালের ১২ ডিসেম্বর যখন তার ওপর হামলা হয়, তখন তিনি ঢাকা-৮ আসন থেকে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের জন্য একজন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং নির্বাচনী সম্ভাবনা নির্দিষ্ট কিছু মহলের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফলে এই হত্যাকাণ্ডকে কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই; বরং এটি ছিল নির্বাচনী পরিবেশ অস্থিতিশীল করার একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ।

ঘটনার দিন হাদি মতিঝিলের খলিল হোটেল থেকে একটি অটোরিকশায় করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন। অটোরিকশা চালক মো. কামাল হোসেনের জবানবন্দি অনুযায়ী, পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে পৌঁছানোর পর একটি দ্রুতগামী মোটরসাইকেল তাদের রিকশাটিকে অনুসরণ করতে থাকে। মোটরসাইকেলে দুজন আরোহী ছিল এবং তারা অত্যন্ত কাছ থেকে হাদির মাথায় লক্ষ্য করে একটি নির্ভুল গুলি ছোড়ে। গুলির পরপরই হামলাকারীরা দ্রুত বিজয়নগরের গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। এই আক্রমণের ধরন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, হামলাকারীরা পেশাদার ঘাতক ছিল এবং তারা আগে থেকেই হাদির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তার অবস্থা 'ক্রিটিক্যাল' বলে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। টানা ছয় দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করার পর ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৩০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যু সংবাদ দেশে পৌঁছালে তাৎক্ষণিকভাবে দেশজুড়ে শোক এবং ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো আধুনিক ফরেনসিক এবং সিসিটিভি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তদন্তের মূল ভার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওপর ন্যস্ত করা হলেও র‍্যাব এবং বিজিবিও যুক্ত রয়েছে ছায়া তদন্তে। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, হামলাকারীরা যে মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করেছিল তা ছিল একটি 'হোন্ডা হর্নেট' ব্র্যান্ডের। এই সূত্র ধরে র‍্যাব-২ আব্দুল হান্নান নামে একজনকে আটক করে রিমান্ডে নেয়, কারণ তার নামে সুজুকি জিক্সার এবং ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের দুটি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত ছিল। তবে ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, সিসিটিভি ফুটেজে থাকা নম্বর প্লেটের শেষ ডিজিট '৬' হলেও হান্নানের মোটরসাইকেলের শেষ ডিজিট ছিল '৫'। তথ্যের এই অমিল এবং ব্র্যান্ডের পার্থক্যের কারণে আদালত পরবর্তীতে হান্নানকে জামিন দেন।

২৪ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আদালতের কাছে সংগৃহীত কার্তুজ এবং বুলেটের ব্যালিস্টিক পরীক্ষার আবেদন জানান। সিআইডির ব্যালিস্টিক শাখা এখন এই আলামতগুলো পরীক্ষা করছে যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এগুলো কোন ধরনের পিস্তল থেকে ছোড়া হয়েছিল এবং অতীতে অন্য কোনো হত্যাকাণ্ডে একই অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল কি না। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং সিসিটিভি ফুটেজের ডিজিটাল এনহান্সমেন্টের মাধ্যমে হামলাকারীদের চেহারা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

হামলাকারীরা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্ত এলাকায় অনুসন্ধান চালায় বিজিবি। অনুসন্ধানে পালিয়ে যাওয়ার সময় অভিযুক্ত যে মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করেছিলেন সেটি উদ্ধার করেছেন তারা। কিন্তু কোন পথে তারা ভারত প্রবেশ করেছে এই বিষয়ে এখনো কোনো বিস্তারিত তথ্য ও বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যে কারনে অনেকে মনে করছেন অপরাধী হয়ত দেশেই গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তবে এই তথ্যেরও কোনো নির্ভরযোগ্য ভিত্তি নেই।

তদন্তের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাঁক সাভারের 'গ্রিন জোন রিসোর্ট'। গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ এবং তার সহযোগী আলমগীর শেখ এই রিসোর্টে অবস্থান করেছিলেন।

১২ ডিসেম্বর ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত তারা দুজন নারীসহ রিসোর্টের একটি কক্ষে অবস্থান করেন। সিসিটিভি ফুটেজে তাদের প্রবেশ এবং প্রস্থানের স্পষ্ট দৃশ্য থাকলেও রিসোর্টের রেজিস্ট্রেশন খাতায় তাদের কোনো নাম পাওয়া যায়নি। এটি প্রমাণ করে যে, রিসোর্টের কর্মীদের সহায়তায় তারা তাদের পরিচয় গোপন রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজে আলমগীরের গায়ে যে চাদরটি দেখা গিয়েছিল, সেটিই হত্যাকাণ্ডের সময় তার পরনে ছিল বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, এই রিসোর্টেই হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা এবং অস্ত্র সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। রিসোর্টে অভিযুক্তদের সাথে অবস্থান করা দুই নারী সদস্যের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, শরিফ ওসমান হাদির রক্ত একটি জাতীয় শোক। এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করতে হলে আমাদের আবেগ ও বিবেকের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে তা শেয়ার করা বা সেই তথ্যের ভিত্তিতে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রকারান্তরে প্রকৃত অপরাধীদেরই সহায়তা করে। 'গুজবে কান দিবেন না'-এই স্লোগান কেবল মুখের কথা নয়, বরং এই সময়ে আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। বিচার বিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে অচিরেই এই অন্ধকারের যবনিকা ঘটবে, এটিই এখন সকলের একান্ত কামনা।

হাদি হত্যাকাণ্ড কেবল একটি রাজনৈতিক বিদ্বেষের ফল নয়, বরং এর পেছনে বিশাল অঙ্কের অর্থের লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন যে, প্রধান আসামি ফয়সালের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রায় ২১৮ কোটি টাকার সমমূল্যের চেক বই উদ্ধার করা হয়েছে। সিআইডির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই অর্থের একটি বড় অংশ দেশের বাইরে থেকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে হত্যাকাণ্ডের আগে এবং পরে সন্দেহভাজনদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের চিত্র পাওয়া গেছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, কোনো প্রভাবশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ডে অর্থায়ন করেছে যাতে দেশে অরাজকতা তৈরি করা যায়। এই বিশাল অর্থের উৎস খুঁজে বের করতে সিআইডি এখন বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে সমন্বয় করছে।

এদিকে হাদি হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে যে চরম অস্থিরতা তৈরি হলে, এই সুযোগে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী নিয়ে ঘটনা অন্যখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে নানা ধরণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। ওসমান হাদির মৃত্যুর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বেশ কিছু গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই গুজবগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল জনমনে ভারতের বিরুদ্ধে উত্তেজনা তৈরি করা এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করা। হাদির মৃত্যু সংবাদ দেশে পৌঁছানোর পর ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ ডিসেম্বর এবং ২০ ডিসেম্বরের বিক্ষোভ কর্মসূচিগুলো বিভিন্ন স্থানে সংঘাতময় রূপ নেয়।

১৮ ডিসেম্বর রাতে 'প্রথম আলো' এবং 'দ্য ডেইলি স্টার' পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ ছিল, এই গণমাধ্যমগুলো জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা এবং হাদির কর্মকাণ্ডকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করেনি। এই হামলায় প্রায় ৭২ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সংবাদপত্রের মুদ্রণ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। দেশের কিছু জায়গায় অমানবিক সহিংসতার খবর পাওয়া যায়। ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাস নামে এক যুবককে ব্লাসফেমির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তবে র‍্যাবের তদন্তে দেখা গেছে যে উক্ত যুবক কোনো ধর্মবিদ্বেষী মন্তব্য করেননি। এছাড়া চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশনের বাসভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়, যার ফলে কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

আল জাজিরা এবং ফ্রান্স ২৪-এর মত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নাম ব্যবহার করে ভয়াবহ অপপ্রচার ও ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা একটি ভিডিওতে দাবি করা হয় যে, আল জাজিরা নিশ্চিত করেছে যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' (RAW) এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, আল জাজিরার ১৯ ডিসেম্বরের আসল প্রতিবেদনে এমন কোনো তথ্য ছিল না। একইভাবে ফ্রান্স ২৪-এর নামে ছড়ানো ভিডিওটি ছিল ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের একটি পুরনো ঘটনার ফুটেজ। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বারবার নাগরিকদের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।

হাদি হত্যাকাণ্ডের পর সরকার এবং ইনকিলাব মঞ্চের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কিছুটা মতানৈক্য দেখা দিলেও উভয় পক্ষই দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার বিষয়ে একমত হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং তথ্য উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন যে, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা হবে, যেখানে ৯০ দিনের মধ্যে রায় প্রদান করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, শহিদ শরিফ ওসমান হাদির খুনিদের ভারতে পাওয়া গেলে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এই হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট ২০২৬ সালের ৭ জানুয়ারির মধ্যে জমা দেওয়া হবে। চার্জশিট জমা দেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দ্রুত বিচার কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ইনশাআল্লাহ, বর্তমান সরকারের সময়ে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হবে। এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রধান আসামি ফয়সালের স্ত্রী, বাবা এবং মা রয়েছেন।

শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এখন একটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ, ২১৮ কোটি টাকার চেক এবং প্রধান আসামিদের নিকটাত্মীয়দের জবানবন্দি এই মামলার জট খুলতে বড় ভূমিকা রাখছে। তবে গুজব এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ এই মামলার বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার একটি ঝুঁকি সব সময়ই বজায় রাখে।

সরকারের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পলাতক প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদকে গ্রেপ্তার করা এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেটওয়ার্কটিকে জনসমক্ষে আনা। যদি এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত মাস্টারমাইন্ডদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়, তবেই কেবল দেশের মানুষের মধ্যে আইনের শাসনের ওপর আস্থা ফিরে আসবে। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কীভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার করে পুরো সমাজকে অস্থির করে তুলতে পারে। আর এই কঠিন সময়ে ইনকিলাব মঞ্চের মতো সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ এবং সাধারণ জনগণের গুজববিমুখতা জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার প্রধান চাবিকাঠি।

আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, শরিফ ওসমান হাদির রক্ত একটি জাতীয় শোক। এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করতে হলে আমাদের আবেগ ও বিবেকের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে তা শেয়ার করা বা সেই তথ্যের ভিত্তিতে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রকারান্তরে প্রকৃত অপরাধীদেরই সহায়তা করে। 'গুজবে কান দিবেন না'-এই স্লোগান কেবল মুখের কথা নয়, বরং এই সময়ে আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। বিচার বিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে অচিরেই এই অন্ধকারের যবনিকা ঘটবে, এটিই এখন সকলের একান্ত কামনা।

লেখকঃ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।