করোনা আতঙ্কে দুশ্চিন্তা এবং ভালো থাকার উপায়

সম্পাদকীয় ডেস্ক
সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৫২ এএম, ২৮ মে ২০২০

অধ্যাপক জে. আলী

মহামতি গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, ‘তোমার চরম শত্রুও তোমার ততটা ক্ষতি করতে পারে না যতটা না পারে তোমার অনিয়ন্ত্রিত ও অসতর্ক চিন্তাধারা।’ আর এই অনিয়ন্ত্রিত চিন্তাধারা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে মানুষের দুশ্চিন্তার নব্বই ভাগ সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, সেনাকর্মকর্তা ও লেখক ছিলেন স্যার উইনস্টন লিউনার্দ স্পেনসার চার্চিল। তিনি ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ আমেরিকা মিত্রশক্তির বিজয়ের একজন প্রধান কারিগর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিবর্ণময় দিনগুলোতে তিনি দৈনিক ১৮ ঘণ্টারও অধিক সময় কাজ করতেন। এমন সময় তার কাছের একজন মানুষ তাকে প্রশ্ন করে, ‘সারাবিশ্বে চলছে মারাত্মক যুদ্ধ। এই যুদ্ধের জয়-পরাজয়ের ওপর দেশের ও বিশ্বের ভাগ্য নির্ভর করছে। এই যে প্রচণ্ড চাপ ও দায়িত্বের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন, এতে এই প্রচণ্ড দায়িত্ব সম্পর্কে আপনার দুশ্চিন্তা হয় কিনা?’

এই প্রশ্ন শুনে তিনি মিষ্টি হেসে জবাব দেন, ‘আমি দারুণ ব্যস্ত, দুশ্চিন্তা করার মতো প্রচুর সময় নেই আমার।’ এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর বলেছেন, ‘গবেষণাগার আর পাঠাগারেই শান্তি থাকে। কারণ কোনো মানুষ যখন বই পড়ে বা কোনো কাজে নিজেকে নিবদ্ধ রাখে তখন দুশ্চিন্তার মতো মারাত্মক রোগ তার কাছেও ঘেঁষতে পারে না।’

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য খ্রিস্টের জন্মের পাঁচশ বছর আগে গ্রিক পণ্ডিতরা আবিষ্কার করেছিলেন ‘অকুপেশনাল থেরাপি’। এ হলো কাজকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করার এক মনস্তাত্বিক নাম। তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষকে এ বিধান দিতেন। অর্থাৎ যারা ব্যক্তিগত, কর্মক্ষেত্র বা পারিবারিক চাপে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে অসহায় বোধ করতেন, কেউ কেউ আত্মহত্যার কথা ভাবতেন, কেউ জীবন সংসার অসার-মূল্যহীন বলে ভাবতেন, ভাবতেন নিজের অক্ষমতার কথা, ব্যর্থতার কথা এবং এভাবে যারা নীরবে নিঃশেষ করে দিতেন নিজেদের মূল্যবান জীবনটাকে। গ্রিক পণ্ডিতরা তাদের মানসিক শক্তি জোগাতেন আর বলতেন, ‘যেকোনো কাজের মাঝে ডুবে যেতে। কারণ তারা প্রমাণ করেছিলেন প্রচণ্ড কাজের চাপই পারে যে কাউকে দুশ্চিন্তার চাপ থেকে মুক্তি দিতে।’

আমেরিকার সাহিত্য জগতে সবচেয়ে খ্যাতিমান কবি ছিলেন হেনরি ওয়ার্ডওয়ার্থ লং ফেলো (১৮০৭-১৮৮২) । তিনি ছিলেন আটটি ভাষায় সুপণ্ডিত ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির নামকরা অধ্যাপক। এই মহান আমেরিকান কবির প্রথম স্ত্রী ম্যারি পটার ১৮৩৫ সালে মারা যান সন্তান প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ফ্রান্সিস অ্যাপলেটন মারা যান আগুনে পুড়ে। রান্না করার সময় অসাবধানতাবসত তার জামায় আগুন লেগে যায় এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই মৃত্যুর পর কবির জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠল। ছোট ছোট তিনটি শিশু তার ঘরে মা-হারা। তিনি এমন শোকগ্রস্ত হলেন যে তার মনে হতে লাগল যেকোনো সময় তিনি পাগল হয়ে যাবেন। এরপর তিনি বুঝতে পারলেন- ‘ব্যস্ত থাকা স্নায়ুর পক্ষে কতটা ভালো’। এরপর তিনি সমস্ত দুশ্চিন্তা ঝেড়ে লেগে পড়লেন তিন সন্তানের মায়ের দায়িত্বে। একেবারেই তাদের মায়ের মতোই গোসল করান, খাবার তুলে খাওয়ান, বেড়াতে নিয়ে যান, গল্প শোনান, শিশুসুলভ খেলা করেন। তিনি কিছুদিন পর উপলব্ধি করলেন আগের সেই মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা তার নেই এতটুকুও। ‘ছেলেদের ঘণ্টা’ নামের বইতে সন্তানদের সাথে কাটানো এই মুহূর্তগুলো অমর করে গেছেন। এ সময় তিনি ইতালির মহাকবি দান্তের বিশ্ববিখ্যাত মহাকাব্য ‘কমেডি ডিভাইন’ এর ইংরেজি অনুবাদ করে ফেলেন। আর এসব সংসারী কাজ ও লেখালেখি করতে গিয়ে তিনি একেবারে নিজেকে ভুলে যান এবং ফিরে পান মানসিক শান্তি।

আমাদের অনেকেই নিজেদের কাজের মধ্যে হারিয়ে যেতে বেগ পেতে হয় না কিন্তু কাজের পরবর্তী সময়টায় হলো মারাত্মক। কারণ কাজের পর যখন আমাদের অবসর কাটানোর কথা তখনই দুশ্চিন্তার কালোমেঘ আমাদের ঘিরে ধরে। আর তখনই মনে হয় যেন জীবনে কিছুই হলো না।

আমরা যখন ব্যস্ত থাকি না তখন আমাদের মন শূন্য হয়ে যায়। পদার্থবিদ্যার প্রতিটি ছাত্রই জানে প্রকৃতি শূন্যতা পছন্দ করে না। জ্বলন্ত বাল্বের মধ্যে যে শূন্যতা, বাল্বটা ভাঙলেই সেটা আর থাকে না- প্রকৃতি তখন বাতাস দিয়ে সেটা পূর্ণ করে দেয়। ঠিক তেমনি আমাদের কর্মহীন মন প্রকৃতি ভরাট করতে চায়। কিন্তু কী দিয়ে? স্বভাবতই আবেগ দিয়ে, কারণ প্রাণিকুলের মধ্যে একমাত্র মানবজাতিই প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ। আর এই আবেগ থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উৎপত্তি হয়- দুশ্চিন্তা, ভয়, ঘৃণা, ঈর্ষা ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জঙ্গলে বাস করা বাঘের শক্তি। এইসব আবেগের এতই ক্ষমতা যে এরা শান্তি আর সুখকে ঘরছাড়া করে দেয়।

কলম্বিয়া শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক জেমস এল মুর্শেল চমৎকারভাবে এ বিষয়টি ব্যাখা করেছেন। তিনি বলেন, ‘দুশ্চিন্তা আপনার কাজে মগ্ন থাকার সময় ভর করে না বরং দিনের কাজের শেষেই মাথায় এসে জড়ো হয় বা ভর করে।’ সে সময় আপনার কল্পনাগুলো উদ্ভট হতে চায়। সমস্ত রকম অসম্ভব কথা মনে আসে। তখন জীবনে ঘটে যাওয়া ছোটখাট ভুলকে বিরাট বলে মনে হয়। এই সময় আপনার মনটা মোটরচালিত হয়ে চলে, কোনো রকম বোঝা এই মোটর টানে না। মোটর এত জোরে চলে যেন মনে হয় মনকে পুড়িয়ে ভেঙে নিঃশেষ করে দেয়। তাই দুশ্চিন্তা তাড়ানোর একমাত্র কার্যকরী পন্থা হলো গঠনমূলক কিছু করা এবং ব্যস্ত থাকা।

জর্জ বার্নার্ড শ (জুলাই ১৮৫৬-নভেম্বর ১৯৫০) ছিলেন একজন আইরিশ নাট্যকার এবং লন্ডন হল অব ইকোনোমিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা (এই লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্সের ছাত্র ছিলেন আমাদের দেশের খ্যাতনামা পণ্ডিত অধ্যাপক রাজ্জাক স্যার)। ইউরোপে শেক্সপিয়ারের পর তিনিই সবচেয়ে বিখ্যাত নাট্যকার। তিনি ৬০ এর অধিক নাটক রচনা করেছেন এছাড়াও তিনি ছিলেন একাধারে প্রাবন্ধিক, উপন্যাসিক এবং ছোট গল্পকার। জর্জ বার্নার্ড শ’র একটি মহৎগুণ ছিল, আর তা হলো সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হাস্যরসের ছন্দাবরণে তিনি অত্যন্ত দক্ষশিল্পীর হাতে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। শিক্ষা, বিয়ে, ধর্ম, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা এবং শ্রেণি সুবিধা ও মানুষের কল্যাণকামী জীবনের জন্যেই উৎসর্গকৃত ছিল তার লেখা। তিনি ১৯২৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। এই মহান লেখক বলেছিলেন, ‘দুঃখী হয়ে ওঠার আসল রহস্য হলো আপনি সুখী বা দুঃখী তা ভাবতে পারার মতো অফুরন্ত সময় থাকা।’

অর্থাৎ আপনি যদি কাজের মাঝে ব্যস্ত না থাকেন, আপনার যদি অবসর থাকে অঢেল তাহলেই কেবল আপনি সময় পাবেন দুশ্চিন্তা করার, নিজের দুঃখবোধকে সামনে টেনে এনে আরও দুঃখ জাগানিয়া গল্প তৈরি করার। আপনার যদি এসব নিয়ে ভাবনার সময়ই না থাকে কাজের চাপে তাহলে দুশ্চিন্তা আপনার বাড়ির কাছেও আসতে পারবে না। বড় আঘাত মানুষকে যতটা না কাবু করে তার চেয়েও বেশি ক্ষতি করে ছোট ছোট দুশ্চিন্তা। এটা তার প্রতিদিনের ভালো থাকাকে সমূলে বিনষ্ট করে দেয় এবং বড় বড় প্রাপ্তিকে বাধাগ্রস্ত করে দেয়। নির্বল, নিস্তেজ করে একেবারে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় সেই বিখ্যাত গাছটির মতো।

আমেরিকার কলোরাডোতে লঙ পাহাড়ের গায়ে এক বিশাল গাছের ধ্বংসাবশেষ এখনও টিকে আছে। প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা বলেন, গাছটি বেঁচে ছিল প্রায় চারশ বছর। নাবিক কলম্বাস যখন আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে আমেরিকা আবিষ্কারের সময় ১৪৯২ সালে সান সালভাদারে নামেন তখন এই গাছটি ছিল শিশু। আর প্লাইমাউথে যখন ঔপনিবেশিকরা আসে তখন সেটা অর্ধেক বড়। ওই গাছটির ওপর চৌদ্দবার বজ্রপাত হয় (ঠাডা পড়ে) এবং কত যে তুষার ঝড় বয়ে গেছে ওপর দিয়ে কিন্তু ওর কোনো ক্ষতিই করতে পারেনি। অবশেষে একঝাক ক্ষুদ্র পোকা গাছটিকে একেবারে শুইয়ে দেয়। এইসব পোকা গাছটির ভেতরের সব শক্তি কুড়ে কুড়ে খেয়ে নেয়। এই বিশাল অরণ্যের দৈত্য যে বয়সের ভারে নুয়ে পড়েনি, বজ্রপাত তাকে শেষ করতে পারেনি, মারাত্মক তুষারঝড় তাকে কাবু করতে পারেনি সে কিনা সামান্য পোকার আক্রমণে শেষ হয়ে গেল। যে পোকাকে মানুষ দু আঙুলে টিপে মারতে পারে।

আমরাও ঠিক এই গাছের মতো জীবনযুদ্ধের ঝড়-ঝাপ্টা আর বড় হিমবাহের ধাক্কা সহ্য করতে পারি কিন্তু হেরে যাই ছোট ছোট দুশ্চিন্তার কাছেই। সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন দুশ্চিন্তার অভ্যাস কাটানোর নিয়ম হলো ছোটখাট সব ব্যাপারে দুশ্চিন্তা না করে তা ভুলে যাওয়া। মনে রাখবেন জীবনটা ছোট বলেই এত মহৎ। যার জন্য ভয় পাচ্ছেন তা নাও ঘটতে পারে। জেনারেল জর্জ কুক যিনি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত রেড ইন্ডিয়ান গবেষক। তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ইন্ডিয়ানদের সমস্ত দুশ্চিন্তা আর অসুখী ভাবের কারণ তাদের কল্পনাপ্রসূত দুশ্চিন্তা। আসলে বাস্তবে যা আদৌ ঘটেই না।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও তাই পরিলক্ষিত হয়। যেমন- আজ মনে হয় ট্রেন ধরতে পারব না, ট্রেন না ধরা পর্যন্ত টেনশন। আজ বস বকবেন, বস না বকা পর্যন্ত টেনশন। অফিসে গিয়ে দেখলেন বস ফুরফুরে মেজাজে সবার সাথে মজা করছেন। আজ মনে হয় অফিসে লেট হবে, অথচ লেট হলো না। বউ মনে হয় বাসায় মেয়েটাকে মেরেছে। বাসায় মনে হয় একগাদা মেহমান এসেছে। সবার ইনক্রিমেন্ট হবে শুধু আমারটা?

গ্যাসের সমস্যায় ডান পাশে বুক ব্যথা করলে আমরা অনেকে দুশ্চিন্তা করি এই বুঝি হার্টের সমস্যা হলো অথচ হার্ট থাকে বুকের বাম পাশে। বর্তমানে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো করোনায় হয়তো আমাকেই ধরবে অথচ করোনায় মারা যায় শতকরা তিনজন। আর করোনা কাউকে ধরে না যদি সে নিজে করোনার কাছে না যায়। অথচ বেশিরভাগ মানুষ ঘরে বসেই দুশ্চিন্তায় অস্থির। এখন প্রশ্ন হলো করোনার কারণে অফিস-আদালত, কলকারখানা বন্ধ, কীভাবে একজন কর্মজীবী নিজেকে ব্যস্ত রাখবেন।

আপনার সাথে একমত হয়েই বলছি- মোবাইল/সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় না দিয়ে ঘরের কাজে স্ত্রী বা বাবা-মাকে সময় দিন, হাত লাগান, যেমন- বাসন মাজা, ঘর মোছা, ঝাড়ু দেয়া, ঘরের ঝুল পরিষ্কার করা, টয়লেট পরিষ্কার করা। ইউরোপ-আমেরিকার সাহেবরা এগুলো সবসময়ই করেন আর আমরা এগুলোকে বুয়ার কাজ বলে মনে করি। বাবা-মা করলে সমস্যা নেই, স্ত্রীরা তো এসব সব সময়ই করেন। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সন্তানদের সাথে সময় কাটান, ঘুড়ি বানাতে পারেন, লুডু বা দাবা খেলতে পারেন, মহাবিশ্ব বা মহাকাশ নিয়ে বিভিন্ন কুইজ করতে পারেন শিশুরা এসব পছন্দ করে। নতুন কোনো রান্নার পদ নিজে নিজে করতে পারেন।

ভালো বই পড়তে পারেন। ভালো বইয়ের খোঁজ পেতে বইপোকাদের আড্ডাখানা বা বইপড়ুয়াদের আড্ডাতে ঢু মারতে পারেন। যে কাজগুলো অফিসিয়াল ব্যস্ততার কারণে এতদিন করতে পারেননি সেগুলো নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে পারেন। নতুন যেসব আইডিয়া এতদিন মাথায় ঘুরপাক খেত সেগুলো লিখে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করতে পারেন। সবচেয়ে বড় আশার কথা হলো আমাদের দেশ সোনার দেশ, এ বছর ধানের ফলন মারাত্মক, আপনি না খেয়ে মরবেন না। আর সবার সমস্যা হলে আপনারও হবে। শুধু বাড়তি টেনশন নেয়ার দরকার নেই।

এই দুশ্চিন্তা দূর করার বিষয়ে কার্যকরী পরামর্শ দিয়েছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির স্বনামধন্য প্রফেসর উইলিয়াম হার্ভার্ড। তিনি বলেন, ‘দুশ্চিন্তা দূর করার একমাত্র কার্যকরী ওষুধ হলো ধর্মে বিশ্বাস রাখা।’ কোনো মানুষই জীবনের রহস্য এখনও ব্যাখ্যা করতে পারেনি। আমরা রহস্যেই আবৃত। আমাদের মানবদেহটাই সবচেয়ে বড় রহস্য, আর মন আরও রহস্যময়। বাড়িতে যে বিদ্যুৎ আসে সেটাও তাই। একটা দেয়াল ফুটো হয়ে গাছ বেরোনোও এক অপার রহস্য। জানালার বাইরে সবুজ ঘাসও তাই। চার্লস এফ কেটারিং নামক আমেরিকান এক ধনকুবের ঘাস কেন সবুজ হয় তা জানার জন্য নিজের পকেট হতে অ্যান্টিক কলেজকে বছরে হাজার হাজার ডলার দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি জানতে পারি ঘাস কী করে সূর্যালোক, জল আর কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে খাদ্য আর শর্করায় পরিণত করে, তাহলে পুরো মানব সভ্যতাকেই পরিবর্তন করতে পারব।’

আপনার গাড়ির ইঞ্জিনের কাজও কম আশ্চর্য নয়। জেনারেল মোটরসের রিসার্চ ল্যাবরেটরিগুলো কোটি কোটি ডলার খরচ করে জানার চেষ্টা করেছে ‘সিলিন্ডারের এক স্ফূলিঙ্গ কীভাবে মোটর চালায়।’ অনুরূপভাবে আমাদের শরীরের, বিদ্যুৎ, ইঞ্জিন ইত্যাদির রহস্য না জানলেও এসব ব্যবহারে আমাদের বাধা নেই। তাই প্রার্থনা ও ধর্মের রহস্য বুঝি না বলে তা উপভোগ করতে পারব না এমন কোনো কথা নেই। আর এ জন্যই মহাজ্ঞানী স্যান্ডায়ন বলেছেন, ‘মানুষ জীবন কী তা জানার জন্য জন্মায়নি, জন্মেছে তা উপভোগের জন্য ‘

আমি ধর্মের ব্যাপারে কথা বলছি বলে মনে হচ্ছে, আসলে তা নয়। আমি ধর্মের এক নতুন উপলব্ধি লাভ করেছি। ধর্ম নিয়ে মতভেদ আছে, থাকতেই পারে; সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। কিন্তু ধর্ম আমার কী করতে পারে তা নিয়ে আমার ভাবনা আছে। যেমন আছে বিদ্যুৎ, ভালো খাদ্য নিয়ে, এগুলো আমার ভালো জীবনযাপনে সাহায্য করে, কিন্তু ধর্ম তার চেয়েও বেশি করে। ধর্ম দেয় সম্পূর্ণ আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ। যেকোনো মানুষকে সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন কাটাতে সাহায্য করে। এ প্রসঙ্গে সাড়ে চারশ বছর আগে ইংল্যান্ডের মহান দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন বলেছেন, ‘অল্প দর্শনে (পড়াশোনায়) মানুষ নাস্তিক হয়, কিন্তু দর্শনের (পড়াশোনার) মধ্যে ঢুকলে তাকে ধার্মিক হতেই হয়।’ ড. এ এ ব্রিল বলেছেন,- ‘সত্যিকারে যে ধর্মপরায়ন তার মনোরোগ জন্মায় না।’ মনস্তাত্ত্বিকরা জানেন- প্রার্থনা আর ধর্মাকাঙ্ক্ষা সমস্ত প্রকার দুশ্চিন্তা দূর করে, দূর করে উদ্বেগ, ভয় আর অন্যান্য অর্ধেক রোগ।

পরিশেষে বলব- এই মহামারি করোনা আতঙ্কে অনেকেই দুশ্চিন্তায় আছেন। যেমন- চাকরিটা থাকবে কিনা, চাকরি থাকলে বেতন পাব কিনা, বাড়িভাড়া, সন্তানের স্কুলের বেতন দেব কীভাবে, করোনা আর কিছুদিন থাকলে তো না খেয়েই মরে যাব ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব হাজারটা দুশ্চিন্তা নিজে নিজেই তৈরি করে মনোরোগ পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। অথচ ইতিহাস বলে পৃথিবীর কোনো মহামারিই দীর্ঘদিন মানবজাতিকে ভোগায়নি। তাই উপরোক্ত বিষয়গুলো মনে নিয়ে নিজেকে বারবার বলুন- যা হবার হবে, আজকের দিনটা বাঁচি ভালোভাবে পরিবার-ন্তানদের নিয়ে, ভবিষ্যতে কী হবে তা আল্লাহ ভালো জানেন।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও অধ্যাপক, দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স।

এইচআর/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।