আস্থার মূর্ত প্রতীক শেখ হাসিনাই
মো. আওয়াল কবির জয়
স্বপ্ন বিকাশের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রোজ ঘুমাতে যাই। অথচ রাত পোহালেই স্বপ্নসিঁড়িতে পা রাখতে পাই। ঠিক ভোরের আভার মতো সব পরিষ্কার হয়ে আসছে। জীবনমান, উন্নয়ন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা সামাজিক নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আজ বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারছি। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘বাংলাদেশ’ এক বিস্ময়ের নাম। উন্নয়নের সিঁড়িতে ভর করে বাংলাদেশ এমন গল্প বলতে পারে, তা যেন অনেকেরই অজানা ছিল।
ভারত-পাকিস্তানের বিশ্লেষকরা বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে ঈর্ষা প্রকাশ করছেন। ভারতের নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা করছেন। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়।
একটি দেশের উন্নয়ন যাত্রা নিয়ে অন্যরা আলোচনা করতেই পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। বাংলাদেশের গঠনের পূর্ব এবং পরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই চ্যালেঞ্জগুলো সামনে আসবে। হাজারো অসামাঞ্জস্য রেখে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে হয়েছে ২৩টি বছর। যে ২৩ বছর ছিল বাঙালি জাতিসত্তাকে দমিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে শুধুই শোষণ আর বঞ্চনার।
বাঙালি জাতির ত্রাতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কাঠামো ভেঙে দিতে পেরেছিলেন এই শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে জয়গান গেয়েই। বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশ একই সত্তায় মোড়ানো। সদ্য স্বাধীন একটি দেশকে যখন আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই বহিঃশক্তি এবং দেশীয় ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয় জাতির স্থপতিকে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে বিশ্বাঘাতকদের পদভারে প্রকম্পিত হতে থাকে বাংলাদেশ, সেই কম্পন থামিয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধুরই কন্যা শেখ হাসিনা।
বিশ্বাস, আস্থা আর ভালোবাসায় ক্রমশই বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনা। আপসহীন নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়ার নামই শেখ হাসিনা। সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে শেখ হাসিনা আজ বিশ্বনেতাও বটে। নানা বিষয়েই নন্দিত হচ্ছেন বিশ্বমহলে। বিশেষ করে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মহানুভবতার যে নিদর্শন রেখেছেন, তা বিশ্বনেতাদের কাছে নিঃসন্দেহে অনুসরণীয়। বিশ্বমহল প্রশংসা করছে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার, বাংলাদেশের নেতৃত্বের।
আমরা দেখেছি, ধর্মান্ধ এবং জঙ্গিগোষ্ঠীর বাড়বাড়ন্ত উগ্রতা। গোটা বিশ্বই জঙ্গিবাদের বিস্তারে দিশেহারা। বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায়। অথচ জঙ্গিদের নির্মমতা প্রত্যক্ষ করেই শেখ হাসিনায় ভরসা রেখেছেন সাধারণ মানুষ। আর সাধারণ মানুষের সেই বিশ্বাসের প্রতিদানও দিয়েছেন তিনি। কোনো প্রকার মাথানত না করে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে জঙ্গিবাদের জাল ছিন্ন-ভিন্ন করে দিতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনার দুঃসাহসী পদক্ষেপের কারণেই জঙ্গিদের কাছে হেরে যায়নি বাংলাদেশ। হারেনি মানুষ। অথচ এই অপশক্তিতে ভর করেই বিভিন্ন মহল সরকার পতনের পাঁয়তারা করেছিল। সাধারণ মানুষের আস্থার কারণেই ধোপে টেকিনি ষড়যন্ত্র। জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনার সাহসিকতা আর পলিসি বিশ্ব দরবারে আজ রোল মডেল।
দুর্নীতির চোরাপথে সরকারের ভালো কাজগুলো ম্লান হচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়ার রেওয়াজ শেখ হাসিনাই প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমরা দেখেছি, বিগত বিএনপি-জামায়াতের সময়ে দুর্নীতির খড়গ। কথিত হাওয়া ভবন ছিল দুর্নীতির আঁতুড় ঘর। খোদ বিএনপি প্রধান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে জেল খাটছেন। বিএনপি নেতা তারেক রহমানের দুর্নীতির খবর সবারই জানা। রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্নীতিকে উসকে দেয়া হলেও খালেদা জিয়ার সরকার কোনো একটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।
অথচ শেখ হাসিনা দলের প্রভাবশালী নেতাদেরও এই প্রশ্নে ছাড় দিচ্ছেন না। মামলা, গ্রেফতার, সাজা সবই দেখতে পাচ্ছি। সময়ের ব্যবধানে দুর্নীতির মূলোৎপাটন হবেই, এ ভরসা সাধারণ মানুষ একমাত্র শেখ হাসিনাতেই রাখতে পারেন। কারণ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো বিষয়গুলো অতি-দক্ষতার সঙ্গে সামলে এনে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন, ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবেই।
লেখক
শিক্ষক, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সাবেক সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ
এইচএ/এমএস