খেতাব কেড়ে নিলেই কি জিয়াকে মুছে ফেলা যাবে?

আল জাজিরা সাইক্লোন থামার আগেই রাজনীতিতে নতুন ঝড় তুলেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকা। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘বীর উত্তম’ খেতাব পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান; পরবর্তীতে যিনি বাংলাদেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন এবং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর জামুকার সভায় জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জামুকার সিদ্ধান্তটি সুপারিশ আকারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সরকারই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকা এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের মদদ দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। দৃশ্যত এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কারণ কোনো আদালত এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেননি। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পরের কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সময়কার খেতাব বাতিল করা যৌক্তিক কিনা, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
আপনি পছন্দ করতে পারেন, অপছন্দ করতে পারেন; কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের জনগণের বিশাল একটা অংশ জিয়াউর রহমানকে পছন্দ করেন, আবার অপছন্দ করেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। সমস্যাটা হলো যারা পছন্দ করেন তাদের কাছে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জনক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। আবার যারা অপছন্দ করেন, তাদের চোখে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণার পাঠকমাত্র, বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা, গণতন্ত্র ও রাজনীতিকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া শাসক, রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতিকে কঠিন করে ফেলার মন্ত্রক, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রশ্রয়দানকারী, নিষ্ঠুর, বিশ্বাসঘাতক। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির অনিবার্য চরিত্র জিয়াউর রহমানকে নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণ খুব একটা চোখে পড়ে না। দুই পক্ষই কট্টর; হয় জিয়া খুব ভালো, নইলে খুব খারাপ। কিন্তু একজন মানুষের মধ্যে ভালো মন্দের মিশেল থাকতেই পারে, থাকাটা অস্বাভাবিকও নয়। জিয়াউর রহমানও একজন মানুষ। তার মধ্যে ভালো-মন্দ দুই-ই থাকতে পারে। কিন্তু একপক্ষের লোকজন তার মধ্যে কোনো দোষ খুঁজে পান না, বিপক্ষের লোকজন কোনো গুণ খুঁজে পান না। মজাটা হলো, দুইপক্ষের বিশেষণগুলোর বেশিরভাগই কোনো না কোনো মাত্রায় তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমার বিবেচনায় জিয়াউর রহমান একজন চতুর, সুযোগসন্ধানী ও ভাগ্যবান সৈনিক কাম রাজনীতিবিদ। এটাও সত্য ভাগ্য সাহসীদের পক্ষেই থাকে।
মুক্তিযুদ্ধের পর একই ব্যাচের দুজন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা সেনাপ্রধান পদের দাবিদার ছিলেন- সফিউল্লাহ এবং জিয়া। বঙ্গবন্ধু কে এম সফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান করেন। সফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান করা হলেও ক্ষুব্ধ জিয়াউর রহমানকে সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে উপপ্রধান করা হয়, যদিও বাংলাদেশের সেনা কাঠামোতে উপপ্রধান পদ নেই। কিন্তু সান্ত্বনা পুরস্কারে খুশি হতে পারেননি জিয়াউর রহমান। তার নানা অসন্তোষের খবর কানে যায় ঊর্ধ্বতনদের। জিয়াউর রহমানের চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। জিয়াউর রহমানকে জার্মানির রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ একাধিকবার লিখেছেন, জিয়াউর রহমান তাকে ধরে বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে আনুগত্যের কসম খেয়ে নিজের বদলির আদেশ ঠেকাতে পারেন। একবার ভাবুন, বঙ্গবন্ধু যদি শক্ত থাকতেন এবং জিয়া যদি রাষ্ট্রদূত হয়ে যেতেন তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস কী হতো? এখন হয়তো আমরা তাকে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসেবে চিনতাম। জিয়াউর রহমান চতুর ও ভাগ্যবান বলেই সাবেক রাষ্ট্রদূত না হয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি হতে পেরেছেন।
জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মূল অভিযোগ, বঙ্গবন্ধুর হত্যা ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়া। এটা ঠিক শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমানই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রে জিয়াউর রহমান অংশ নিয়েছেন, এমন কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়ায়ও এ ধরনের কোনো প্রমাণ মেলেনি। ’৭৫-এর মার্চে কর্নেল ফারুক জিয়াউর রহমানের সাথে দেখা করে ইনিয়ে বিনিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কথা বলেন। উপ-সেনাপ্রধান ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে জিয়ার দায়িত্ব ছিল ফারুকের কাছ আরও কিছু কথা বের করে, তাদের পরিকল্পনা পুরোটা জেনে তাৎক্ষণিকভাবে ফারুককে গ্রেফতার করা এবং রাষ্ট্রপতিকে সতর্ক করা।
কিন্তু তা না করে, ‘তোমরা জুনিয়ররা চাইলে এগুতে পারো’, বলে ফারুককে এক ধরনের গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে দেন। একই সঙ্গে জিয়া আরও একটি কাজ করেন। এরপর ফারুককে আর সাক্ষাৎ দেননি। এখানেই জিয়ার সুযোগসন্ধানী চরিত্র ফুটে ওঠে। জুনিয়ররা যদি কিছু ঘটিয়ে ফেলে ক্রিমের বড় অংশটা তো সিনিয়র হিসেবে তার পাতেই উঠবে। যদি তারা ব্যর্থ হয় বা ধরা পড়ে যায়, তাহলে নিজের সম্পৃক্ত না থাকার প্রমাণ দিতে পারবেন। ১৫ আগস্টের নৃশংসতার খবর শোনার পর শেভ করতে থাকা জিয়ার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, 'প্রেসিডেন্ট কিলড। সো হোয়াট। ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার। আপহোল্ড দ্য কনস্টিটিউশন।' রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর খবর শুনে যে উপ-সেনাপ্রধান এতটা নির্মোহ থাকতে পারেন, তাকে আপনি চাইলে নিষ্ঠুর বলতেই পারেন। তবে জিয়া অনুরাগীরা বলেন, সংবিধান সমুন্নত রাখতে বলার মধ্যে কোনো অপরাধ নেই।
১৫ আগস্টের পরপর ক্রিমের দেখা না পেলেও ক্ষমতার ক্রিমটা সোনার থালায় সাজিয়ে জিয়াউর রহমানের পাতে তুলে দেয়া হয় নভেম্বরে। পুরো ব্যাপারটা আসলে ভাগ্যের। ৩-৭ নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহে জিয়াউর রহমান আরও অনেক সেনা কর্মকর্তার মতো মারা যেতে পারতেন। জীবন বাঁচাতে জিয়া লিখিতভাবে পদত্যাগও করেছিলেন। ১৫ আগস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে পাল্টা ক্যু করতে গিয়ে প্রাণ দিলেন খালেদ মোশাররফ। গৃহবন্দি থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে এলেন জিয়া। তাকে আপনি ভাগ্যবান বলবেন না তো, কী বলবেন? একবার ভাবুন তো ৭ নভেম্বর যদি তাহেরের বিপ্লব সফল হতো, তাহলে ইতিহাসে জিয়ার স্থান কোথায় হতো? কর্নেল তাহেরের ইউটোপিয়ান বিপ্লবের ফসল ঘরে তুললেন জিয়া। আর যেই তাহের তার জীবন বাঁচালো তাকেই দ্রুত ঝুলিয়ে দিলেন ফাঁসিতে।
তাহেরের ফাঁসিতেই শেষ হয়নি জিয়ার নিষ্ঠুরতা। বরং বলা যায় শুরু। পদ যাই হোক, ’৭৫-এর ৭ নভেম্বর থেকে ’৮১-এর ৩০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বেসর্বা ছিলেন জিয়াউর রহমান। বলা হয়, সেনাবাহিনীতে জিয়া খুব জনপ্রিয় ছিলেন। সেই 'জনপ্রিয়' জিয়াকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বারবার সেনা অভ্যুত্থানের মুখে পড়তে হয়েছে এবং তিনি সেগুলো মোকাবিলা করেছেন নিষ্ঠুরভাবে। জিয়াউর রহমানের আমলে কত সেনা সদস্যকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনও অজানা। শেষ পর্যন্ত তেমনই এক সেনা অভ্যুত্থানেই প্রাণ দিতে হয় তাকে।
সেনানায়ক থেকে জননায়কে পরিবর্তনের ধাপে জিয়াউর রহমান দারুণ কিছু পদক্ষেপ নেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ১৯ দফা কর্মসূচি, কৃষি বিপ্লবের ডাক, দেশজুড়ে ঘুরে ঘুরে খাল কেটে দারুণ জনপ্রিয়তা পান জিয়া। মৃত্যুর পর তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়ে। ১৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসের টালমাটাল সময় মানুষ একটু স্থিতিশীলতা চেয়েছিল, যা দিতে পেরেছিলেন জিয়া। এটা মানতেই হবে তখন জিয়ার নেতৃত্বেই খেই হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ আবার উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসে। কিন্তু এই স্থিতিশীলতার আড়ালে জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতির স্থায়ী ক্ষতি করেছেন। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের সূচনা ঘটেছে তার হাত ধরেই। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও তার সময়ে, তার প্রশ্রয়েই রাজনীতিতে অর্থ আর অস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু। তার চেয়েও বড় ক্ষতি তিনি করেছেন বাংলাদেশের মৌলিক চেতনায়। নিজে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন, রাজাকার আব্দুল আলীমকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। পাকিস্তানের নাগরিক গোলাম আযমকে দেশে আসার সুযোগ দিয়েছেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে জামায়াতসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। সংবিধানে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢুকিয়েছেন। সব মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে দ্রুত সাম্প্রদায়িক ইসলামী রাষ্ট্রে বদলে ফেলেন, যেখানে একাত্তরের পরাজিত শক্তি গর্ত থেকে বেরিয়ে দাপটের সাথে রাজনীতি শুরু করে।
১৫ আগস্টের আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রে জিয়ার সরাসরি ভূমিকা না থাকলেও পরে তিনি যা করেছেন তা রীতিমতো অপরাধ। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করেছেন। মুশতাকের করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বহাল রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে রেখেছেন। জিয়ার আমলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিলেন, যার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত।
এটা মানতেই হবে মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল এবং বীরোচিত। ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকায় পাকিস্তানি হারাদারদের ক্র্যাকডাউনের পর বেলাল মোহাম্মদরা কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার শুরু করেন। ২৬ মার্চ সেখান থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান প্রথম বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য বেলাল মোহাম্মদরা প্রথমে মেজর রফিককে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি আসতে না পারায় বেলাল মোহাম্মদ নিজে পটিয়ায় গিয়ে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আসেন। কালুরঘাটে বেলাল মোহাম্মদের 'আমরা তো সব মাইনর, আপনিই একমাত্র মেজর। আপনি কিছু বলুন' এই আহ্বানকে সিরিয়াসলি নিয়ে জিয়াউর রহমান প্রথমে নিজেকে 'হেড অব দ্য স্টেট' বললেও পরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। জিয়াউর রহমানের আগে এম এ হান্নান ছাড়াও কয়েকজন বেতার কর্মী স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছেন। তারপরও ওই সময়ে একজন সেনা কর্মকর্তার কণ্ঠে এ ধরনের ঘোষণা মানুষকে দারুণ উজ্জীবিত করেছিল। পাকিস্তান এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশকে দারুণ শক্ত বার্তা দিয়েছিল সেই ঘোষণা। এখানেও ভাগ্যের দেখা পেয়েছেন জিয়া। বেলাল মোহাম্মদের ডাকে সাড়া দিয়ে মেজর রফিক যদি সময় মতো আসতেন, তাহলে হয়তো এই সুযোগটা তিনিই পেতেন। যেভাবেই হোক ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় উপস্থিত থেকে জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে নিজের স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধেও তার ভূমিকা ছিল বীরোচিত। তিনি ছিলেন সেক্টর কমান্ডার। তার নামের আধ্যাক্ষরে গঠিত 'জেড' ফোর্সেরও অধিনায়ক ছিলেন তিনি। জিয়া বিরোধীরা বলেন, তিনি কোনো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি। কমান্ডাররা যুদ্ধের কৌশল ঠিক করেন, তাদের সবাইকে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে হয় না। স্বাধীনতার পর জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সর্বোচ্চ 'বীর উত্তম' খেতাব পেয়েছেন। আজ যখন আওয়ামী লীগ জিয়াকে বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা বা আইএসআই'র চর বলে, তখন কিন্তু তারা আসলে তাজউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন একাত্তরের প্রবাসী সরকার এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। আইএসআই'র চরকে কেন প্রবাসী সরকার সেক্টর কমান্ডার বানিয়েছিল? বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধাকে কেন বঙ্গবন্ধু সরকার বীর উত্তম খেতাব দিয়েছিল? কেন উপ-সেনাপ্রধান বানিয়েছিল?
জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া ২১ বছর বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করে রেখেছিলেন, তাকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। ইতিহাসে যার যার স্থান নির্ধারিত। কাউকে ছোট করা যাবে না, বড়ত্বও আরোপ করা যাবে না। বিএনপি জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর সমান করার অনেক চেষ্টা করেছে, পারেনি, পারা সম্ভবও নয়। ২১ বছর জিয়া-এরশাদ-খালেদা যা করেছে; এখন আওয়ামী লীগ তাই করছে। জিয়ার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টাও সফল হয়নি, জিয়ার নাম মুছে ফেলার চেষ্টাও সফল হবে না। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। ইতিহাসেই সবার অবস্থান নির্ধারিত।
জিয়াউর রহমানের মতো মুক্তিযোদ্ধার খেতাব কেড়ে নেয়ার প্রস্তাবের নেপথ্যে হিংসার রাজনীতিই যে মুখ্য, তা স্পষ্টত। তবে পদক কেড়ে নিলেও মানুষের মন থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেলা যাবে না। বরং অতি উৎসাহীদের এ প্রস্তাবনা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। কারণ এখন পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে আনা আওয়ামী লীগের সবগুলো অভিযোগই রাজনৈতিক। তাই অপ্রমাণিত রাজনৈতিক অভিযোগের ভিত্তিতে আপনি কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। তারচেয়ে বড় কথা হলো, আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় আছে, ততদিনই তাদের অবস্থান থাকবে। ভবিষ্যতে কখনো বিএনপি বা আওয়ামী লীগবিরোধী কোনো শক্তি ক্ষমতায় এলে পাল্টে যেতে পারে অবস্থান। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত চার খুনি ডালিম, নূর, রাশেদ ও মোসলেহউদ্দিনের খেতাব বাতিল করা যেতে পারে। কারণ তারা আদালত কর্তৃক দণ্ডিত। কিন্তু জিয়াউর রহমান তা নন। তাই জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জিয়ার খেতাব বাতিলের যে প্রস্তাব করেছে, আশা করি সরকার তা প্রত্যাখ্যান করবে। রাজনীতিকে প্রতিহিংসার জায়গা থেকে বের করে আনতে হবে।
এইচআর/জেআইএম