মেরুল বাড্ডায় গরুর হাট যেন উৎসবের মাঠ
ঢাকার ব্যস্ত শহরে কোরবানির ঈদ মানেই এক অন্যরকম চিত্র। আর সেই চিত্রের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে মেরুল বাড্ডার গরুর হাট। চারদিকে গরুর হাঁকডাক, ক্রেতা-বিক্রেতার কোলাহল, দরদামের টানাপোড়েন আর চোখে পড়ার মতো মানুষের ভিড় সব মিলিয়ে যেন হাট নয়, এক বিশাল উৎসবের মেলা বসেছে এখানে। ছবি: মাহবুব আলম
-
শহরের নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষজন পছন্দের গরু খুঁজতে ছুটে আসছেন মেরুল বাড্ডায়, কেউ দেখছেন, কেউ দর কষছেন, কেউবা কিনে ফেলার পর গরুর গলায় তুলে দিচ্ছেন নতুন দড়ি।
-
ধর্মীয় অনুভব, পারিবারিক প্রস্তুতি আর হাটের চেনা আবহ মিলিয়ে এই জায়গাটা যেন কেবল কেনাবেচার নয়, বরং উৎসবেরই একটি রঙিন অঙ্গন।
-
ছবিতে ধরা পড়েছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। কেউ দর কষছেন, কেউ হাত ঘুরিয়ে গরুর দাঁত দেখছেন, আর কেউবা গরুর মালিকের সঙ্গে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে দাম নিয়ে লম্বা আলোচনায় ব্যস্ত। যেন এক বিশেষ আয়োজন। শুধু গরু কেনা নয়, বরং একটি উৎসবের আবহ, যার প্রতিটি মুহূর্তে রয়েছে উত্তেজনা, আবেগ ও ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ।
-
ঘাম, মাটি, খড় আর গরুর গায়ের মিশ্র ঘ্রাণ; একসঙ্গে তৈরি করেছে এক নিজস্ব ‘হাটের সুবাস’। হাঁটতেই দেখা মিলছে সারি সারি গরু, কেউ রাজশাহী থেকে এসেছে, কেউ নওগাঁ, আবার কেউ মেহেরপুর বা কুষ্টিয়ার প্রান্তিক খামার থেকে। ছোটখাটো গড়নের দেশি গরু থেকে শুরু করে বড়সড় শাহওয়াল, সিন্ধি কিংবা ব্রাহমানি জাতের গরুও দেখা যাচ্ছে হাটে।
-
গরুগুলোও বুঝি বুঝে গেছে সময় শেষের দিকে। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে হাটে এসেছে, দিনের পর দিন চেয়েছে, দাঁড়িয়ে থেকেছে কাঠের পাটাতনের ওপর। অনেকেই তাদের কিনে নেয়ার পর মুঠো মুঠো খড় খাওয়াচ্ছেন, মাথায় পানি ঢালছেন। এক ধরনের ‘প্রস্তুতি’ চলছে যেন শেষ যাত্রার আগে কিছুটা যত্ন, ভালোবাসা দিয়ে।
-
প্রতিটি গরু কেনার পেছনে রয়েছে গল্প; কেউ বোনের জামাইয়ের পছন্দমতো গরু খুঁজছেন, কেউ মায়ের ইচ্ছা ছিল বলে হালকা রঙের গরু খুঁজছেন।
-
বাবার কোলে চড়ে হাটে এসেছে ছোট্ট শিশু।
-
মেরুল বাড্ডার এই গরুর হাট শুধু বেচাকেনার স্থান নয়, বরং এক জীবন্ত চিত্রনাট্য-যেখানে ধর্মীয় দায়িত্ব, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, পারিবারিক আলোচনা আর একধরনের আবেগ মিলেমিশে তৈরি করে এক অনন্য সামাজিক পরিবেশ।