বর্ষা এলেই ভাসে রাজধানী
বৃষ্টির ফোঁটা নামা মানেই ঢাকাবাসীর মনে তৈরি হয় অজানা এক শঙ্কা। কারণ এখানে বৃষ্টি মানেই দুর্ভোগ, হাঁটুপানি, যানজট আর অসহ্য কষ্টের দিন। রাজধানীর পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে এই দুর্ভোগের মূল কেন্দ্রে রয়েছে একটিই নাম কুতুবখালী খাল। ছবি: বিপ্লব দীক্ষিৎ
-
এই খালটি রাজধানীর ধোলাইপাড়, যাত্রাবাড়ী ও শনিরআখড়া এলাকা ঘিরে থাকা লাখো মানুষের বসবাসের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
-
বর্ষাকালে ঢাকার পূর্বাংশের বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম হিসেবেই কুতুবখালী খাল পরিচিত। অথচ বছরের পর বছর ধরে খালটি খনন না হওয়া, দখল-দূষণে প্রায় মৃত হয়ে পড়া ও পানিপ্রবাহ বন্ধ হওয়ার কারণে আজ এটি নিজেই জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
-
খালের দুই পাশ দখল হয়ে গেছে। কোথাও দোকান, কোথাও আবর্জনার স্তূপ।
-
বৃষ্টির পানি নামার কোনো পথ খাল খুঁজে পায় না। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই ডুবে যায় রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয় ধোলাইপাড়, শনিরআখড়া ও যাত্রাবাড়ীর আশপাশে।
-
রাজধানীর উন্নয়ন প্রকল্পে কাগজে-কলমে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। খাল খনন, জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে নেয়া হয় নানা প্রকল্প। কিন্তু বাস্তব চিত্র বদলায় না। প্রতিবার বর্ষার আগে আশ্বাস আর প্রতিবার বর্ষার পরে ক্ষোভ।
-
বিশেষজ্ঞদের মতে, কুতুবখালী খাল নিয়মিত খনন ও পরিষ্কার না করলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যাবে। তখন পুরো পূর্ব-দক্ষিণ ঢাকা চরম জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে, যার প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও জনজীবনের ওপর।
-
এলাকাবাসীর অভিযোগ, খালপাড়ের প্রভাবশালী মহল খালের জায়গা দখল করে ব্যবসা গড়ে তুলেছে। কোথাও নির্মাণসামগ্রী রাখার জায়গা, কোথাও আবার স্থায়ী বসতঘর। এদের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালীদের ছায়া। আর খালের বুকজুড়ে প্রতিদিন পড়ে নতুন নতুন আবর্জনা, প্লাস্টিক ও নর্দমার ময়লা।
-
সমাধান খুব জটিল নয়; শুধু প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক উদ্যোগ এবং নাগরিক সচেতনতা।
-
খালটিকে নিয়মিত খনন ও পরিষ্কার করতে হবে। দখল উচ্ছেদ করে খালের স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে দিতে হবে। খালপাড়ের সৌন্দর্য ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা ইউনিট গঠন করা যেতে পারে।
-
স্থানীয়দের সচেতন করে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট চালু করতে হবে। এভাবে পরিকল্পিতভাবে এগোলে কুতুবখালী খাল আবারও ঢাকার জলনিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। কুতুবখালী খাল শুধু একটি জলপথ নয়, এটি একটি শহরের শ্বাস-প্রশ্বাস। ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে একটি খাল যখন মৃতপ্রায়, তখন তা গোটা শহর ব্যবস্থাপনারই ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে ওঠে। এখনও সময় আছে, এই খালটিকে বাঁচাতে হবে। নয়তো অচিরেই ঢাকার মানুষকে ভাসমান জীবন নিয়েই কাটাতে হবে পুরো বর্ষাকাল।