পাখি-প্রেমীদের মিলনমেলা টঙ্গী বাজার
টঙ্গীর ঐতিহ্যবাহী বাজারে প্রতি রোববার সকাল যেন অন্যরকম প্রাণের স্পর্শে ভরে ওঠে। এখানে শুধু সবজির গন্ধ বা মসলার সুবাস নয়, শোনা যায় পাখির কিচিরমিচির, কবুতরের ডাকে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। এই বাজারটি বিশেষভাবে পরিচিত পাখি, কবুতর ও অন্যান্য পোষা প্রাণীর জন্য। তাই এ দিনটি স্থানীয়দের কাছে শুধু হাটের দিন নয়, এটি হয়ে ওঠে পাখি-প্রেমীদের এক মিলনমেলা। ছবি: মাহবুব আলম
-
রোববার সকাল হতেই হাটে জড়ো হতে থাকেন পাখি, কবুতর, হাঁস, মুরগি এবং বিড়ালপ্রেমীরা। কেউ নিজের পোষা প্রাণী বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন, আবার কেউ বা নতুন করে শখের প্রাণী খুঁজতে আসেন।
-
দরদামের আলাপ, পাখির রঙ-বর্ণ, প্রজাতি এবং যত্নের কৌশল নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা চলে।
-
এ হাটের মূল আকর্ষণ কবুতর ও নানা প্রজাতির রঙিন পাখি। শখের কবুতরপ্রেমীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে নিজের পছন্দের জাত বেছে নেন। কেউ খোঁজেন দামি রেসিং কবুতর, আবার কেউ শুধু শখের বসে ঘরের ছাদে উড়ানোর জন্য সাধারণ জাতের কবুতর কিনতে চান।
-
হাটে পাখির পাশাপাশি পোষা বিড়ালের উপস্থিতিও নজরকাড়ে। দেশি-বিদেশি জাতের বিড়াল চোখে পড়বে এই বাজারে।
-
আবার মাঝে মাঝে দেখা মেলে বিরল প্রজাতির পাখিরও, যা শখের সংগ্রাহকদের জন্য বাড়তি আনন্দের। অনেকেই এ হাট থেকে পাখি কিনে খাঁচায় সাজিয়ে রাখেন, কেউ আবার খোলা ছাদে তাদের উড়তে দেন।
-
এ হাটের আসল রঙ আসে দরদামের কৌশলে। একজন ক্রেতা যখন প্রিয় পাখিটি হাতে নিয়ে দাম ঠিক করার চেষ্টা করেন, তখন বোঝা যায় শখের দাম কতটা। বিক্রেতারা শুধু লাভের জন্য আসেন না; অনেক সময় দেখা যায়, নিজের যত্নে বড় করা পাখিটি অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার আগে তারা নিশ্চিত হন সঠিক যত্ন পাবে কি না। এতে তৈরি হয় এক ধরনের সম্পর্ক, যা টাকার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।
-
শুধু কেনাবেচার জন্য নয়, অনেকেই আসেন এই হাটে আলাপচারিতার জন্য। একই শখের মানুষরা একে অপরের সঙ্গে গল্প করেন, নতুন অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, পাখির যত্ন ও খাদ্য সম্পর্কে টিপস দেন। ফলে প্রতি রোববার টঙ্গীর এই হাট হয়ে উঠে এক অনন্য সামাজিকতা ও আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু।
-
টঙ্গী বাজারের এই সাপ্তাহিক পাখির হাট শুধু ব্যবসার জন্য নয়, এটি শখ, ভালোবাসা আর সামাজিক সম্পর্কের এক অনন্য জায়গা।