বেড়েছে ঢাক-ঢোলের কদর
দেশের উৎসব, মেলা কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঢাক-ঢোলের ধ্বনি যেন প্রাণের সঙ্গে মিলিয়ে ছন্দ তোলে। শুধু শোনার জন্য নয়, এই বাজনার মাধ্যমে মানুষের আবেগ, উচ্ছ্বাস আর ঐতিহ্যের অনুভূতিই প্রকাশ পায়। আজ থেকে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। পূজাকে কেন্দ্র করে বেড়েছে ঢাক-ঢোলের জনপ্রিয়তা ও কদর। নতুন প্রজন্মের মাঝেও এই রঙিন, প্রাণবন্ত সুর এখন আগের চেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করছে। ছবি: এসকে রাসেল
-
দেশের গ্রামগঞ্জে পূজামণ্ডপগুলো সাজছে রঙ, আলো আর প্রতিমার আভায়। কিন্তু কটিয়াদীর এক কোণে, আড়িয়াল খাঁ নদপাড়ে চলছে এক আলাদা কোলাহল। এখানে বসেছিল সেই বিখ্যাত ঢাকের হাট, যেখানে বাদ্যযন্ত্র নয়, বিক্রি বাদক দল।
-
শুক্রবার সকাল থেকেই জমে উঠেছে হাট। একপাশে ঢাক, ঢোল, কাঁসর, সানাই, বাঁশি, খঞ্জরি, করতাল সব বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নিজেদের নৈপুণ্য দেখাচ্ছে দলগুলো। অন্যপাশে দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছেন পূজারি ও আয়োজকরা। কার তাল কত নিখুঁত, কার বাজনায় দেবীর আগমন আরও মহিমান্বিত হবে তার ওপর নির্ভর করছে চুক্তির অঙ্ক। দাম উঠছে ১০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত।
-
কারও স্বপ্ন পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো, কারও লক্ষ্য নতুন জামাকাপড় বা সন্তানের পড়াশোনার খরচ।
-
এ হাটের জন্মও নাটকীয়ভাবে। স্থানীয়রা বলেন, ষোড়শ শতকে সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় দুর্গাপূজার জন্য ঢাকিদের খুঁজতে বিক্রমপুরে বার্তা পাঠাতেন। নৌকায় নৌকায় ঢাকি এসে ভিড়ত ব্রহ্মপুত্রের যাত্রাঘাটে।
-
রাজা নিজে দাঁড়িয়ে শুনতেন, সেরা দলকে দিতেন পুরস্কার। সেই আয়োজনই ধীরে ধীরে রূপ নেয় হাটে, যা পরে স্থান বদলে আসে কটিয়াদীর পুরাতন বাজার এলাকায়।
-
আজও সেই ঐতিহ্য বেঁচে আছে। শুধু পূজার আয়োজন নয়, এটি হয়ে উঠেছে মিলনমেলা। ঢাকের তালে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। তাক দুম তাক দুম বাজনায় যেন নদীপাড়ের বাতাসও দুলে ওঠে।
-
কটিয়াদীর ঢাকের হাট শুধু বাদক ভাড়ার জায়গা নয়, এটা বাঙালির সাংস্কৃতিক স্মৃতি। যখন দেবী দুর্গা প্রতিমায় আসন নেবেন, তখন এই ঢাকিদের সুর আর তালের ছন্দেই পূর্ণ হবে পূজার আনন্দ।