ছিপের গ্রাম বাদেমাঝিরা, আগুনে বাঁশ সেঁকে স্বপ্ন গড়ার গল্প
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বাদেমাঝিরা গ্রামটি যেন এক জীবন্ত কর্মশালা। ঘরে ঘরে চুলার আগুনে বাঁশ সেঁকে তৈরি হচ্ছে মাছ ধরার ছিপ। শত বছরের পুরোনো এই কৌশল আজও ধরে রেখেছে গ্রামের পরিচিতি। কৃষিকাজের পাশাপাশি ছিপ বানিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামের মানুষ, বাড়তি আয় করছে নারীরাও। বর্ষা এলেই পাইকারদের ভিড়ে জমে ওঠে এই গ্রাম। বলা চলে, বাদেমাঝিরা এখন শুধু একটি গ্রাম নয়, এটি হয়ে উঠেছে ছিপ তৈরির ঐতিহ্য আর জীবিকার প্রতীক। ছবি: কামরুজ্জামান মিন্টু
-
আঁকাবাঁকা চিকন বাঁশকে আগুনে সেঁকে সোজা করা হয়। শত বছরের এই কৌশলেই আজও তৈরি হচ্ছে বাদেমাঝিরার বিখ্যাত মাছ ধরার ছিপ।
-
কোনো ঘরে কৃষিকাজের সরঞ্জাম, কোনো ঘরে মিটিমিটি আগুনে বাঁশ সেঁকা-এভাবেই পুরো গ্রামজুড়ে চলছে ছিপ তৈরির এক ঐতিহ্যবাহী কর্মযজ্ঞ।
-
গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে গ্রামের নারীরা ছিপ ছাঁটার কাজে যুক্ত হচ্ছেন। এতে প্রতিদিন আয় করছেন ১৫০-২০০ টাকা, যা পরিবারের খরচ চালাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
-
শুধু বাঁশ সেঁকেই থেমে নেই কাজ। ছিপে রঙবেরঙের নকশা আঁকা হয়, যা শৌখিন মৎস্য শিকারিদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে।
-
বাদেমাঝিরার প্রায় প্রতিটি বাড়িই যেন ছোট্ট একেকটি কারখানা। উঠান কিংবা ঘরের ভেতর সারি সারি করে রাখা ছিপ গ্রামটির পরিচিতি বহন করছে।
-
অভাব থেকে মুক্তি পেতে গ্রামের অনেকেই ছিপ তৈরির পেশায় যুক্ত হয়েছেন। এতে পরিবার চালানো যেমন সহজ হচ্ছে, তেমনি নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে।
-
যারা আগে শুধু কৃষিকাজ করতেন বা বেকার ছিলেন, তারাও এখন ছিপ তৈরির মাধ্যমে বাড়তি আয় করছেন। গ্রামীণ জীবনে এনেছে স্বস্তি।
-
বাড়ির আঙিনায় ছিপ চাঁছার কাজে গ্রামীণ নারীদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারাও পরিবারে অর্থনৈতিকভাবে অবদান রাখছেন।
-
নদী-খাল আর বিল-পুকুর পানিতে ভরে গেলে শুরু হয় মাছ ধরার মৌসুম। তখন পাইকাররা ভিড় জমান এই গ্রামে, ছিপ বিক্রি চলে জমজমাট।
-
বন্যায় পানিতে ভাসে চারপাশ, বাড়ে মাছ ধরার প্রবণতা। ফলে এই সময় ছিপের দামও বেড়ে যায়, আর বাদেমাঝিরা গ্রাম হয়ে ওঠে কর্মচঞ্চল।