আলোর ফানুশে ভেসে থাকা প্রার্থনা
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। বছরের এই সময়টায় আকাশজুড়ে ফানুশের আলোয় যেন রঙ ছড়িয়ে পড়ে শান্তি আর আনন্দের বার্তা। দিনভর নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ভক্তরা পালন করেন এই মহিমান্বিত উৎসব। ছবি: মাহবুব আলম
-
এদিন রাজধানীর মেরুল বাড্ডা বৌদ্ধ ফেডারেশন বিহারে সকাল থেকেই ছিল উৎসবের আমেজ। সাদা পোশাকে নারী-পুরুষ, শিশু ও প্রবীণ-সবাই হাজির হয়েছেন প্রার্থনা ও পূজায় অংশ নিতে।
-
কেউ ফুল ও ধূপে পূজা দিচ্ছেন, কেউ বা মন্ত্রোচ্চারণে নিমগ্ন। বিহারের আঙিনায় ছড়িয়ে পড়েছে চন্দনের গন্ধ, ঘণ্টাধ্বনি আর শান্তির সুর।
-
দিনের প্রথম ভাগে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কঠিন চীবর দান ও প্রার্থনা সম্পন্ন করেন। এরপর ভক্তরা অংশ নেন দান-ধ্যান ও আলোচনায়।
-
সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় উৎসবের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর আয়োজন ফানুশ উড়ানো।
-
বিহারের ছাদে, উঠানে কিংবা খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে সবাই যখন হাতে জ্বালানো ফানুশ তুলে দেন আকাশে, তখন মনে হয় এই আলো যেন মুক্তি আর শান্তির প্রতীক।
-
শিশুদের উচ্ছ্বাস, তরুণদের সেলফি, প্রবীণদের প্রার্থনামগ্ন দৃষ্টি-সব মিলে এক অপার্থিব পরিবেশ।
-
বৌদ্ধদের বিশ্বাস অনুযায়ী, বর্ষাবাস শেষে এই দিনে ভিক্ষুরা নিজেদের ত্রুটি স্বীকার করে প্রবারণা করেন-যার অর্থ ‘নিজেকে শুদ্ধ করা’। তাই দিনটি শুধু উৎসব নয়, আত্মশুদ্ধি ও করুণার প্রতীকও বটে।
-
রাজধানীর নানা বৌদ্ধ বিহার, যেমন কমলাপুর, মগবাজার, বসুন্ধরা ও মেরুল বাড্ডায় ভক্তদের ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলে আকাশে অসংখ্য ফানুশ যেন তারার সঙ্গে মিশে যায়।
-
মেরুল বাড্ডা বৌদ্ধ ফেডারেশন বিহার থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায়, ফানুশের আলোর নিচে মুখভরা হাসি নিয়ে মানুষ একে অপরের মঙ্গল কামনা করছে। কারও হাতে প্রদীপ, কারও চোখে শান্তির দীপ্তি।
-
প্রবারণা পূর্ণিমা তাই কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ভালোবাসা, দয়া, ক্ষমা ও আলোর উৎসব-যা অন্ধকারে জড়ানো পৃথিবীকে মনে করিয়ে দেয়, মানবতার পথই শান্তির পথ।