মর্গের দরজায় কান্নার প্রতিধ্বনি
রুপনগরের কেমিক্যাল অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ এখন স্বজনদের অশ্রুতে ভেজা এক প্রতীক্ষার স্থান। কেউ ছবি হাতে, কেউ আইডি কার্ডে ভরসা রেখে খুঁজছেন প্রিয়জনের শেষ চিহ্ন। সাদা কাপড়ে মোড়ানো দেহের পাশে চলছে সনাক্তের চেষ্টা, আর বাতাসে ভাসছে পোড়া গন্ধের সঙ্গে মিলেমিশে যাওয়া কান্নার প্রতিধ্বনি। এই গ্যালারিতে ধরা আছে সেই বেদনার মুহূর্ত, যেখানে প্রতিটি মুখ একেকটি অসমাপ্ত গল্প। ছবি: মাহবুব আলম
-
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে আজ সকাল থেকেই ভিড়। এখানে কেউ এসেছেন খোঁজে, কেউ প্রার্থনায়, কেউ আবার নিঃশব্দ কান্নায় ভেঙে পড়তে।
-
রুপনগরের ভয়াবহ কেমিক্যাল অগ্নিকাণ্ডের পর যেসব দেহ ঢাকা মেডিকেল মর্গে আনা হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই আর চেনার মতো নেই। পোড়া চামড়া, বিকৃত মুখ, গলে যাওয়া পোশাক-সবকিছু যেন সময়ের নিষ্ঠুর সাক্ষী হয়ে আছে।
-
হাসপাতালের মর্গের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কেউ ভাইয়ের ছবি হাতে, কেউ বাবার প্যান্টের অংশটুকু ধরে। কারও চোখে নেই অশ্রু, আছে কেবল এক ধরনের অবিশ্বাস, আমার প্রিয়জন কি সত্যিই নেই?
-
নিহতদের স্বজনদের এখন সনাক্তের কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিনিধি দল তাদের ভোটার আইডির কপি নিচ্ছেন, যাচাই করা হচ্ছে ছবি।
-
অনেক দেহ এতটাই পুড়ে গেছে যে, চেনা সম্ভব নয়-তাই নেওয়া হচ্ছে ডিএনএ নমুনা। এই পরীক্ষার ফলাফল মিললে তবেই হস্তান্তর করা হবে লাশ স্বজনদের হাতে। কিন্তু সেই অপেক্ষা যেন অসহ্য হয়ে উঠছে অনেকের জন্যই।
-
মর্গের বাতাসে মিশে আছে পোড়া গন্ধ আর হাহাকার। মর্গের ভেতর কাজ করছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশের সদস্যরা। কেউ নম্বর লিখছেন ব্যাগের ওপর, কেউ আবার ট্যাগ লাগাচ্ছেন শনাক্ত করা দেহে। বাইরে অপেক্ষায় স্বজনরা-প্রত্যেকে যেন মৃত্যুর দ্বারে দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে প্রিয়জনের একটুখানি চিহ্ন।
-
অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। মর্গে তার মরদেহ শনাক্ত করতে এসে কান্নায় ভেঙে পরেন নিহতের বড় বোন।
-
মর্গের ভেতর থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে দেহগুলো। সাদা কাপড়ে ঢাকা, পাশে নম্বর লেখা। স্বজনরা এগিয়ে যাচ্ছেন-কেউ চিনতে পারছেন, কেউ পারেন না। ডিএনএ টেস্ট শেষে যখন লাশ হাতে পাবেন, তখন হয়তো সান্ত্বনা মিলবে-কিন্তু যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা আর পূরণ হবে না কোনোদিন।