এইচএসসি ফল, ব্যর্থতার অন্ধকারের মধ্যেও আছে আশার আলো
আজ সকালটা কারও জন্য আনন্দের, আবার কারও জন্য যেন এক নিঃশব্দ ঝড়। দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে একযোগে প্রকাশিত হলো ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল। তবে এবার ফলাফলে দেখা গেছে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধস-গড় পাসের হার মাত্র ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। ছবি: মাহবুব আলম
-
পরিসংখ্যান ঠান্ডা সংখ্যা, কিন্তু এর ভেতর লুকিয়ে আছে হাজারো কিশোর-কিশোরীর কান্না, হতাশা, আবার কেউ কেউ দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় দাঁড়িয়ে আছে নতুন করে শুরু করার আশায়।
-
ফলাফল প্রকাশের পর অনেকের চোখে জল, কেউ কেউ বোর্ডের ওয়েবসাইটে বারবার রিফ্রেশ দিচ্ছে অবিশ্বাসে। হয়তো মায়ের কণ্ঠ কেঁপে উঠেছে, হয়তো বাবার মুখে নীরব দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু সত্যিটা হলো-একটা পরীক্ষায় ব্যর্থতা জীবনের ব্যর্থতা নয়।
-
এ বছর পাস করেছে ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী, ফেল করেছে ৫ লাখেরও বেশি। সংখ্যাটা বড়, কিন্তু এই সংখ্যার প্রতিটি মানুষই আলাদা গল্প, আলাদা সম্ভাবনা। কারও স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার, কারও শিক্ষক, কারও উদ্যোক্তা। হয়তো এই ফলাফল তাদের গতিপথ বদলে দেবে-তবুও জীবন থেমে থাকে না।
-
যেখানে চারপাশে পরিসংখ্যানের হতাশা, সেখানে একটু আশার আলো ছড়িয়েছেন মেয়েরা। এ বছর ছাত্রীদের পাসের হার ৬২ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা ছেলেদের চেয়ে অনেক বেশি। জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও এগিয়ে তারা। ৬৯ হাজার ৯৭ জন মেধাবীর মধ্যে ৩৭ হাজার ৪৪ জনই ছাত্রী।
-
এই সংখ্যাগুলো শুধু ফল নয়, বরং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নারীর অগ্রযাত্রার নিঃশব্দ দলিল। হয়তো কোনও গ্রামের মাটির ঘরে বসে একটা মেয়ে আজ প্রথমবারের মতো নিজের ভাগ্যের দিশা দেখতে পাচ্ছে।
-
যে শিক্ষার্থী আজ ফেল করেছে, সে হয়তো আগামীকালই খুঁজে পাবে নিজের সত্যিকারের গন্তব্য। একদিনের ব্যর্থতা হয়তো তাকে শেখাবে স্থিতি, ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাসের পাঠ। জীবনের সবচেয়ে বড় পাঠ বইয়ে নয়-পড়ে না যাওয়া মানুষটার মধ্যেই লেখা থাকে তা।
-
এইচএসসি ফলাফল শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি আমাদের সমাজের আয়না। কেউ আজ উল্লাসে ভাসছে, কেউ নিরবে কাঁদছে। কিন্তু সময় একদিন সব কষ্টের মানে বুঝিয়ে দেয়। যারা আজ ব্যর্থ, তারা ভুলে যেও না-তুমি হারোনি, তুমি কেবল থেমে গেছ এক মুহূর্তের জন্য। আগামীকাল তোমার দিনও আসবে। কারণ ফল নয়, স্বপ্নই মানুষকে বড় করে।