জিপিএস-সিসি ক্যামেরায় সুরক্ষিত প্রিজন ভ্যানের যাত্রা
প্রিজন ভ্যান মানেই একসময় ছিল ভয়, অনিশ্চয়তা আর নিরাপত্তাহীনতার প্রতীক। আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার পথে হঠাৎ আসামি ছিনতাই-এমন খবর ছিল প্রায় নিয়মিত। তবে সময় বদলেছে। এখন সেই একই পথে চলছে আধুনিকতার চাকা। যুক্তরাষ্ট্রের উপহার হিসেবে পাওয়া অত্যাধুনিক এসি প্রিজন ভ্যানগুলোয় যুক্ত হয়েছে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম আর সিসি ক্যামেরা-যেখানে প্রতিটি দরজা, প্রতিটি চলাচল নজরে রাখছে প্রযুক্তির চোখ। আসামি ছিনতাই ঠেকাতে এটি শুধু এক নতুন উদ্যোগ নয়, বরং বাংলাদেশের কারা ব্যবস্থায় নিরাপত্তার এক নতুন যাত্রা। ছবি: জয়নব ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফেসবুক থেকে
-
অবশেষে বাংলাদেশের কারাগার ব্যবস্থায় যোগ হলো এক নতুন অধ্যায়। আর এখন সেই গল্পের কেন্দ্রবিন্দু পাঁচটি আধুনিক প্রিজন ভ্যান। যে গাড়িগুলোর যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে, এক বছরের বেশি সময় আগে।
-
যুক্তরাষ্ট্রের উপহার হিসেবে পাওয়া এই গাড়িগুলো ছিল নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির দিক থেকে একদম নতুন ধাঁচের। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস দীর্ঘদিন সেগুলো ধুলো জমিয়ে পড়ে ছিল কেরানীগঞ্জ কারাগারের প্রাঙ্গণে।
-
কারণ, হোয়াইট হাউসে আসন গ্রহণ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই বিভিন্ন দেশের অনুদান কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। তাই গিফট হিসেবে পাওয়া এই প্রিজন ভ্যানগুলোর রেজিস্ট্রেশন আটকে ছিল সময়ের জটিলতায়।
-
অবশেষে পরিস্থিতি বদলায় যখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। সেখানে এই ফাইল আবার আলোচনায় আসে। দ্রুত সম্পন্ন হয় রেজিস্ট্রেশনের অনুমোদন। এখন সেই পাঁচটি ভ্যান আর অচল নয়-চলছে নতুন আশার প্রতীক হয়ে।
-
কারা অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে দুটি গাড়ি কেরানীগঞ্জ কারাগারে, দুটি কাশিমপুরে আর একটি চট্টগ্রাম কারাগারে বরাদ্দ রয়েছে। মাঝেমধ্যে বিশেষ আসামি স্থানান্তর কিংবা আদালতে নেওয়ার সময় এসব ভ্যান ব্যবহৃত হচ্ছে।
-
এএসি, জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম আর সর্বাধুনিক সিসি ক্যামেরা এগুলোকে বিশেষ করে তুলেছে।
-
কারা অধিদপ্তরের এআইজি (উন্নয়ন) মো. জান্নাত-উল ফরহাদ বলেন, এই ভ্যানগুলো শুধু ভিআইপি বন্দির জন্য নয়, যেকোনো আসামি স্থানান্তরের সময় প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি গাড়িতেই সিসি ক্যামেরা ও জিপিএস সংযুক্ত আছে।
-
অর্থাৎ এখন প্রিজন ভ্যানের প্রতিটি চলাচল দেখা যাবে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের স্ক্রিনে-রিয়েল টাইমে। দরজা বা জানালা খোলার চেষ্টাও ধরা পড়বে মনিটরে। কেউ যদি আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, মুহূর্তেই সতর্ক হবে নিয়ন্ত্রণকক্ষ। এ যেন নিরাপত্তায় এক নতুন দিগন্ত।
-
কারা অধিদপ্তরের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আগে প্রিজন ভ্যান থেকে আসামি ছিনতাই ছিল এক ভয়ংকর বাস্তবতা। এখন প্রযুক্তির চোখ সব সময় তদারক করছে প্রতিটি পদক্ষেপ। তবে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থারও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। গাড়িগুলো শুধু অকটেনে চলে, ফলে ব্যয় তুলনামূলক বেশি। ঢাকা থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত একবার যাতায়াতে তেল খরচ হয় সাত থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। তবুও যারা প্রতিদিন বন্দিদের নিরাপদে আদালতে বা এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে নিয়ে যান, তাদের কাছে এই গাড়ি যেন এক আশীর্বাদ। এ যেন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া এক নিরাপত্তা যাত্রা। যেখানে লোহা, তালা আর শিকলকে পেরিয়ে যুক্ত হয়েছে বিশ্বাস আর সুরক্ষার নতুন অধ্যায়।