ছবিতে রাজশাহীর বেত শিল্প
রাজশাহীর হোসনিগঞ্জ একসময় ছিল বেত শিল্পের জন্য সুপরিচিত। স্বাধীনতার আগেই এখানে গড়ে উঠেছিল ‘বেত পট্টি’। সেই সময়ে ১৫ থেকে ২০টি দোকানে তৈরি হতো দৃষ্টিনন্দন সব বেতের সামগ্রী। ঘর সাজানোর সৌখিন জিনিস থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাব সবই মিলত এই বাজারে। ছবি: ওমর ফারুক পলাশের তোলা
-
তখনকার দিনে সিলেট থেকে আগত দক্ষ কারিগররা রাজশাহীতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তাদের হাতের কাজ ছিল অসাধারণ। রাজশাহীর মানুষ সেই প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন, এবং ধীরে ধীরে নিজেরাও বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে এই শিল্পই হয়ে ওঠে এ শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ।
-
রাজশাহীর নববধূরা বিয়ের সময় উপহার হিসেবে বেতের তৈরি ট্রে, ঝুড়ি বা চেয়ার পেতেন। এটি তখন এক ধরনের সামাজিক মর্যাদা হিসেবেও বিবেচিত হতো।
-
কিন্তু আজ আর সেই দিন নেই। একসময়ের জমজমাট বেত পট্টি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আছে কেবল তিনটি মাত্র দোকান। হারিয়ে গেছে সেই কর্মচাঞ্চল্য, সেই উৎসবমুখর পরিবেশ।
-
তবে এই বেত শিল্পের এক বিশেষ দিক হলো এর পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্য। বেতের সামগ্রী শতভাগ প্রাকৃতিক ও জীবাণুমুক্ত। টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। স্থানীয়দের মতে, পর্যটন খাতের সঙ্গে যুক্ত করলে এবং আধুনিক ডিজাইনের সঙ্গে ঐতিহ্য মিশিয়ে নতুনভাবে বাজারজাত করলে এখনো এই শিল্পকে ঘুরে দাঁড় করানো সম্ভব।
-
এক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সহজ শর্তে ঋণ, কারিগরদের প্রশিক্ষণ এবং বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগ। বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলা ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে হোসনিগঞ্জের বেত পণ্য স্থান পেলে আবারো ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়তে পারে। পাশাপাশি অনলাইনে বিপণন ব্যবস্থাও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
-
রাজশাহীর হোসনিগঞ্জের বেত পট্টি একসময় ছিল শিল্প-সৃজন আর বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। আজ সেটি ধুঁকছে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে। বিকল্প সস্তা পণ্য, কাঁচামালের সংকট, কারিগরদের অনাগ্রহ এবং জায়গা হারানোর শঙ্কা সব মিলিয়ে ঐতিহ্যের এই শিল্প ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। যদি যথাসময়ে সরকারি ও সামাজিক উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে হোসনিগঞ্জের বেত শিল্প একদিন কেবলই ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেবে। হারিয়ে যাবে সেই সৃজনশীল হাতের কাজ, হারিয়ে যাবে রাজশাহীর একসময়ের ঐতিহ্যবাহী গর্ব।