পোড়া ছাইয়ের ভেতর ঘুরে বেড়ানো আশা
কাল রাতের আগুন গিলে খেয়েছে কড়াইল বস্তির বাসিন্দাদের সব স্বপ্ন। প্রায় ১৫০০ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মুহূর্তে। যে জায়গায় গতকালও রান্নার ধোঁয়া উঠত, বাচ্চাদের হাসির শব্দ শোনা যেত সেই জায়গা আজ ধুঁকছে পোড়ার তাপে। চারদিকে শুধু ছাই, কালো ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তূপ। সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ঘরহারা বস্তিবাসীরা ফিরে এসেছেন নিজেদের আগের ঠিকানায়। তবে সেই ঠিকানায় আর কিছু নেই; নেই দেয়াল, নেই দরজা, নেই থাকার মতো সামান্য কোনো জিনিসও। ছবি: মাহবুব আলম
-
ভোর থেকে অনেকেই হাতড়ে দেখছেন পোড়া ঘরের ধ্বংসাবশেষ। হয়তো কোথাও চকচকে একটি হাঁড়ি, ভাঙা একটি থালা বা অল্প কিছু কাপড় অবশিষ্ট আছে এই আশায়। কেউ কেউ হাতে ধরে আছেন পোড়া ছাই, মনে হয় যেন সেই ছাইয়ের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাদের হারানো জীবন।
-
এক নারী আগুনের ধ্বংসস্তূপের ধারে দাঁড়িয়ে বললেন, সবশেষ হয়ে গেছে। একটা চামচও পাইনি। কীভাবে আবার শুরু করব বুঝতে পারছি না।
-
যে বস্তিতে হাজারো মানুষ রাত কাটাতেন, আজ সেখানে শুধু ধোঁয়ার গন্ধ আর মোচড়ানো টিনের শব্দ। আগুন কোথা থেকে, কীভাবে? তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, সন্দেহ আর শঙ্কা। তবে এখন এসব নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। কারণ সামনে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে বড়-আজ রাতে ঘুমাবেন কোথায়? বাচ্চাদের খাবার আসবে কোথা থেকে? নষ্ট সংসার আবার কীভাবে দাঁড়াবে?
-
কড়াইল বস্তিতে তোলা ছবিগুলো যেন একেকটি অশ্রুবহ গল্প। পোড়া টিন, কুঁকড়ানো বাঁশ, কয়লার মতো কালো হয়ে যাওয়া ঘর সেখানে এখনও দাঁড়িয়ে আছে মানুষের ভাঙা স্বপ্নের অবশিষ্টাংশ। বাচ্চারা এক কোণে জমে থাকা ছাইয়ের মধ্যে খেলনা খুঁজছে, আর বড়রা খুঁজছেন জীবন চালানোর মতো সামান্য সম্পদ।
-
যা পুড়েছে তা শুধু ঘর নয়; পুড়েছে এতদিনের জমানো সঞ্চয়, পুড়েছে দরজার ছোট তালায় রাখা নিরাপত্তা আর পুড়েছে ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা। তবুও মানুষগুলো দাঁড়িয়ে আছে ভরসার আলো খোঁজার আশায়। কারণ তাদের লড়াই থেমে থাকে না, আগুনে পুড়লেও তারা আবার নতুন করে বানায় নিজের জীবন।
-
কড়াইল বস্তির পোড়া মাটিতে আজও ভাসছে ধোঁয়া, কিন্তু মানুষের চোখে ভাসছে আশা আবার দাঁড়াব, আবার গড়ব। এই গল্প সেই মানুষের, যারা ছাইয়ের ভেতর থেকেও উঠে দাঁড়ানোর শক্তি রাখে।