গোলের বাইরে জীবনের লড়াই, মাইকেল চোপড়ার জীবনের গল্প
ফুটবল মাঠে গোল মানেই সাফল্য, উল্লাস আর করতালি। কিন্তু কিছু খেলোয়াড়ের জীবনে সবচেয়ে কঠিন লড়াইটা হয় গোলপোস্টের বাইরে। ইংরেজ সাবেক পেশাদার ফুটবলার মাইকেল চোপড়া তেমনই একজন নাম। স্ট্রাইকার হিসেবে তিনি মাঠে সুযোগ খুঁজেছেন প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ানোর আর মাঠের বাইরে লড়েছেন নিজের ভেতরের অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে। ২৩ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া এই ফুটবলারের জীবনের গল্প শুধুই ম্যাচ, গোল বা পরিসংখ্যানের নয়; এটি সাহস, ভাঙন আর আবার দাঁড়িয়ে যাওয়ার এক মানবিক দলিল। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
মাইকেল চোপড়ার জন্ম ইংল্যান্ডে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি তার ঝোঁক ছিল প্রবল। স্কুলজীবনে বলের পেছনে ছোটা ছিল তার নিত্যদিনের অভ্যাস। তবে তার পথচলা সহজ ছিল না।
-
ব্রিটিশ ফুটবলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের জন্য সুযোগ যেমন সীমিত, তেমনি চাপও ছিল বেশি। সেই বাস্তবতা মাথায় রেখেই চোপড়া নিজেকে তৈরি করতে শুরু করেন।
-
মাইকেল চোপড়া মূলত স্ট্রাইকার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দ্রুতগতির দৌড়, সুযোগ বুঝে পজিশন নেওয়া এবং কাছাকাছি থেকে গোল করার ক্ষমতা এই তিনটি ছিল তার প্রধান শক্তি। ক্লাব ফুটবলে তিনি ইংল্যান্ডের একাধিক দলে খেলেছেন, যেখানে কখনো মূল একাদশে, কখনো আবার লড়াই করে জায়গা করে নিতে হয়েছে।
-
তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। ইনজুরি, ফর্মের ওঠানামা কিংবা দল বদলের ধাক্কা সবকিছুর মধ্যেও মাঠে নামার তাগিদ তাকে এগিয়ে রেখেছে।
-
মাইকেল চোপড়ার জীবন শুধু গোল আর ম্যাচেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পেশাদার ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হন। বিষণ্ণতা ও বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো জটিল বাস্তবতা তাকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দেয়। অনেক ফুটবলার যেখানে এই বিষয়গুলো আড়াল করে রাখেন, চোপড়া সেখানে ব্যতিক্রম।
-
ফুটবল ছাড়ার পর তিনি খোলাখুলিভাবে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেন। সমাজে প্রচলিত ‘সব ঠিক আছে’ মুখোশ ভেঙে তিনি জানান, একজন পেশাদার অ্যাথলেট হয়েও ভেতরে ভেতরে কতটা ভেঙে পড়া সম্ভব। এই সাহসী স্বীকারোক্তিই তাকে নতুনভাবে পরিচিত করে তোলে।
-
অবসর-পরবর্তী জীবনে মাইকেল চোপড়া নিজেকে শুধু সাবেক ফুটবলার হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কাজ শুরু করেন, বিশেষ করে খেলোয়াড় ও তরুণদের মধ্যে। বক্তৃতা, সাক্ষাৎকার ও বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চান মানসিক সমস্যা দুর্বলতার লক্ষণ নয়, বরং তা স্বীকার করাই সবচেয়ে বড় শক্তি।
-
মাইকেল চোপড়ার গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ফুটবল শুধু গোল আর ট্রফির হিসাব নয়। এটি মানুষের গল্প, ভাঙা-গড়া আর আবার দাঁড়িয়ে যাওয়ার গল্প। স্ট্রাইকার হিসেবে তিনি যতটা লড়াকু ছিলেন, মানুষ হিসেবে তার লড়াই ছিল আরও গভীর।