অন্য দেশ হলে স্বাস্থ্য ডিজি পদত্যাগ করতেন : রিজভী
চিকিৎসক হিসেবে অভয়বাণী না দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, অন্য কোনো দেশ হলে ডিজি পদত্যাগ করতেন।
শনিবার (২০ জুন) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
‘প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সহসাই নির্মূল হচ্ছে না, করোনা পরিস্থিতি তিন বছর বা তার চেয়েও বেশি স্থায়ী হবে।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে রিজভী বলেন, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে সিএমএইচে দুই-তিন সপ্তাহ করোনা চিকিৎসা শেষে ডা. আবুল কালাম আজাদ গতকাল দেশে আতঙ্ক ছড়ানোর এই তত্ত্ব কোথায় পেলেন? একজন চিকিৎসক এবং সরকারের ঊধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়ানোর অধিকার তার নেই।
তিনি বলেন, চিকিৎসক হিসেবে মানুষকে অভয়বাণী শোনানোই তার দায়িত্ব ছিল। ভবিষ্যদ্বানী দিতে গেলেও এর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের উল্লেখ থাকতে হয়। কিন্তু তিনি তা করেননি। এমন খেলো কথাবার্তা কি এই সময়ে ডিজি সাহেবের মানায়? করোনা চিকিৎসায় সুচিকিৎসা, মানুষকে সচেতন করা ও প্রকৃত সত্য তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের। কিন্তু মহামারির সময় দুনিয়াজুড়ে সবাই যেখানে পরিস্থিতি সামাল দেয়া নিয়ে ব্যস্ত সেখানে ডিজি আছেন দুই-তিন বছরের চিন্তায়!
এমনকি সবচাইতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ডাক্তার, সাংবাদিক, পুলিশসহ যারা করোনা মোকাবিলার সাথে যুক্ত আছেন তাদের জন্যও স্বাস্থ্য অধিদফতর বিশেষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
রিজভী বলেন, অসুস্থ মানুষের এখন করোনা টেস্টের জন্য রাত কাটে রাস্তায়! প্রতিদিনই করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার যে দৈন্য দেখা যাচ্ছে সেদিকে ডিজি সাহেবের ভ্রুক্ষেপ নেই, অথচ জনগণকে করোনা নিয়ে আরও ভয়ংকর ভীতির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন। টেস্ট করাতে গিয়ে অনেক সুস্থ ভালো লোকও আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন! মারা যাচ্ছেন। যারা করোনা আক্রান্ত হয়নি তাদের অনেকেরই নমুনা পরীক্ষায় আসছে পজিটিভ, আবার যারা করোনা আক্রান্ত তাদের আসছে নেগেটিভ। এভাবে করোনার নমুনা পরীক্ষায় এত ভুল ফলাফল আসছে যে, অন্য কোনো দেশ হলে ডিজি পদত্যাগ করতেন।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারদের সুরক্ষায় কেনা আসল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ না করে নকল সরবরাহ করা, এমনকি সরবরাহকারী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়া থেকে বোঝা যায় জনস্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার সমর্থক কত কালোবিড়াল বসে আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের অনেক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কেনাকাটায় পুকুর চুরির খবর থেকে বোঝা যায় আমাদের স্বাস্থ্যখাত বালির বাঁধের মতো হয়ে আছে। বৃহৎ দেখালেও মূলত এর ভেতরটা সারশূন্য। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি কাদের জন্য এ জিজ্ঞাসা এখন সকলের। দুদক মূলত বর্তমান একচক্ষু সরকারের প্রতিহিংসার পূরণের যন্ত্র।
স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে রিজভী বলেন, এই লুটের খবর শীর্ষ ব্যক্তিরা জানলেও এখনও পর্যন্ত কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সরকারের অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার মূল চেতনাই হচ্ছে বহুমাত্রিক দুর্নীতি ও লুটপাট। এতে প্রমাণ হয় করোনার চেয়ে দুর্নীতি এখন পরাক্রমশালী। দুর্নীতিবাজরা নিজদের রাষ্ট্রের চেয়েও প্রভাবশালী মনে করছে।
কেএইচ/বিএ/জেআইএম