সুপ্রিম কোর্ট মেডিকেল সেন্টারে নেই সেলাইয়ের ব্যবস্থা
বিচারপতি, আইনজীবী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসার জন্য ১৯৮০ সালে চালু করা হয় সুপ্রিম কোর্ট মেডিকেল সেন্টার। তৎকালীন প্রধান বিচারপতির প্রচেষ্টায় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরীর একান্ত উদ্যোগে আইনজীবী সমিতির মূল ভবনের একটি কক্ষে মেডিকেল সেন্টার যাত্রা শুরু করে।
তবে দীর্ঘ তিন যুগ বা ৩৬ বছর অতিক্রম হলেও পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সেন্টার তৈরি হয়নি এখনো। কবে মেডিকেল সেন্টার হবে সেটাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যাত্রার শুরুতেই একজন ডাক্তার ও একজন নার্স কাজ করতেন। ২০১৩ সাল থেকে সড়ক ভবনে আলাদাভাবে ছয়টি কক্ষ দেয়া হয় মেডিকেল সেন্টারের জন্য। বর্তমানে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য ডাক্তার রয়েছেন দুইজন। এর বাইরে সহযোগী হিসেবে রয়েছেন দুইজন মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট, একজন নার্স এবং দুইজন অফিস সহকারী।
জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী আইনজীবী- কর্মচারী আসেন ডাক্তার দেখাতে। এর বাইরে বিচারপতিরা কেউ অসুস্থ বোধ করলে যেতে হয় তার চেম্বারে। সুপ্রিম কোর্ট কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে এটি। বিনামূল্যে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার সঙ্গে ওষুধও সরবরাহ করা হয় এখান থেকে। ট্রাস্ট প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার টাকার ওষুধ দিয়ে থাকে বলে জানা যায়। মেডিকেল সেন্টারটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা।
কল্যাণ ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আজিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, জনবল বৃদ্ধির জন্য আমরা প্রধান বিচারপতির বরাবর দাবি করে আসছি। জনবল যা আছে একেবারেই কম।
সুপ্রিম কোর্টের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসক হিসেবে ১৯৯৭ সাল থেকে আছেন ডাক্তার জেসমিন আরা শেলি। তিনি বলেন, কাটা-ছেড়া হলে আমাদের এখানে তাৎক্ষণিকভাবে সেলাই দেয়ার কোনো ব্যবস্থাও নেই। নেই কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি। আর আমাদের লোকবলও নেই প্রয়োজনের অনুপাতে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মেডিকেল সেন্টারের জন্য পদ সৃষ্টি করতে ২০১৩ সালে ১০ ডিসেম্বর একটি চিঠি পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ডেপুটি রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়Ñ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে ১০০ জন বিচারপতি এবং ২০৪৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। আদালত চলাকালে কয়েক হাজার আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণ কোর্টে আসেন।
চিঠিতে বলা হয়, আদালত অঙ্গনে একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সেন্টার স্থাপনের জন্য একজন ডাইরেক্টরের অধীনে একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (নাক, কান, গলা), চারজন জুনিয়র কনসালটেন্ট, তিনজন মেডিকেল অফিসার, একজন ডেন্টাল সার্জন, তিনজন স্টাফ নার্স, একজন ফার্মাসিস্ট, চারজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, একজন স্টোর কিপার, একজন অফিস সহকারী, তিনজন ড্রাইভার, চারজন এমএলএসএস, দুইজন সুইপার, দুইজন দারোয়ানসহ ৩৩ জনের পদ সৃষ্টি করা আবশ্যক।
সুপ্রিম কোর্টের আবেদনের প্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালের ১১ মে এবং অর্থ বিভাগের ব্যায় নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগ একই বছর ৩১ আগস্ট শর্তসাপেক্ষে অস্থায়ীভাবে ১৪টি পদের বেতন স্কেল নির্ধারণ করে। পদগুলো হলো, সিনিয়র কনসালটেন্ট একজন, জুনিয়ার কনসালটেন্ট তিনজন, মেডিকেল অফিসার একজন, স্টাফ নার্স একজন, টেকনোলজিস্ট একজন, স্টোর কিপার একজন, অফিস সহকারী একজনসহ ১৪ জন।
সেখানে তাদের বেতন স্কেল ধরা হয় জাতীয় বেতন স্কেল গ্রেড ৯ অনুসারে। ওই বছরের ১৮ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব রাশিদা খাতুন স্বাক্ষরিত স্মারকে ১৪টি পদের বেতন স্কেল নির্ধারণে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হয়। তবে এক বছর তিন মাস পার হলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি নিয়োগ প্রক্রিয়া। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ১৪টি পদের নিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন এখানো বাকি।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, নিয়োগের বিষয়টি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। মেডিকেল সেন্টার নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। সব বিচারপতি ও কর্মকর্তার ডাটাবেজ তৈরি করছি। ১৫ দিন পর পর সব বিচারক এবং কর্মকর্তার চেকাপ হবে। আশা করছি নতুন নিয়োগ হলে বাকি কাজ শুরু করতে পারব।
মেডিকেলের তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্বে থাকা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ফারজানা ইয়াসমিন লোকবলের অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, আমরা মেডিকেল সেন্টারের উন্নয়নে নতুন করে চিন্তা করছি। তিনি বলেন, সকল বিচারপতির মেডিকেল হিস্ট্রি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের কথা ভাবছি আমরা। যাতে নিয়মিত ব্লাড প্রেসার মাপাসহ সকল মেডিকেল সুবিধাজনক হয়। আর জরুরি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে যা যা রাখা দরকার তা দ্রুতই ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
এফএইচ/এজেড/পিআর