স্ত্রীর ভাড়াটে সন্ত্রাসীরাই প্রবাসী ময়নালকে খুন করে


প্রকাশিত: ০২:৩৩ পিএম, ১০ মার্চ ২০১৬

কুমিল্লার মুরাদনগরে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে স্ত্রীর ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা আকাবপুর নোহাটি গ্রামের সৌদি প্রবাসী ময়নাল হোসেনকে নির্মমভাবে খুন করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ৮নং আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহদ বিন আমীন চৌধুরীর আদালতে প্রবাসীর স্ত্রী তাছলিমা বেগম চাঞ্চল্যকর এ জবানবন্দি প্রদান করেন।

গত বছরের ১ নভেম্বর রাতে মুরাদনগর উপজেলার জাড্ডা হাহাতি গ্রামের শ্বশুর বাড়ি থেকে স্ত্রীর পরিকল্পনায় প্রবাসী ময়নাল হোসেনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। গত ৮ মার্চ প্রবাসীর স্ত্রী এবং পর দিন তার প্রেমিক শরীফুল ইসলামকে গ্রেফতারের পরই বেরিয়ে আসে ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য।   

ডিবি পুলিশ ও আদালতে দেয়া জবানবন্দি সূত্রে জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলার আকাবপুর নোহাটি গ্রামের মৃত. আব্দুল কাদিরের সৌদি প্রবাসী ছেলে ময়নাল হোসেনের সঙ্গে প্রায় ১০ বছর আগে একই উপজেলার জাড্ডা হাহাতি গ্রামের মেয়ে তাছলিমা বেগমের বিয়ে হয়। তাদের দুইটি সন্তান রয়েছে। সৌদি যাওয়ার পর সকল অর্থ স্ত্রী তাছলিমার কাছে পাঠায় ময়নাল।

এদিকে, প্রবাসী স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাছলিমা বেগম একই গ্রামের শরীফুল ইসলাম নামে এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। গত বছরের ৩০ অক্টোবর ময়নাল হোসেন দেশে আসার পর শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করে বিদেশে থেকে পাঠানো অর্থের হিসাব এবং স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এতে তার স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে ছয়জন সন্ত্রাসীর সঙ্গে চুক্তি করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত বছরের ১ নভেম্বর রাতে ঘাতকরা প্রবাসী ময়নালকে খুন করে মরদেহ একটি খালে গুম করে।

এ বিষয়ে প্রবাসীর স্ত্রী গত ৭ নভেম্বর মুরাদনগর থানায় স্বামী নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন তার স্বামী ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফিরেনি। এতে মুরাদনগর থানা পুলিশ জিডির সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করলেও ঘটনার রহস্য বের করতে পারেনি। পরে ওই প্রবাসী মা আমেনা খাতুন কতৃক কুমিল্লা পুলিশ সুপার বরাবরে আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম অভিযোগের তদন্ত শুরু করেন।

অভিযোগের সূত্র ধরে ডিবি পুলিশ এরই মধ্যে প্রবাসী ময়নালের স্ত্রীর নিকট আত্মীয় জাকির ও জুয়েলকে গ্রেফতার করে। সর্বশেষ গত ৮ মার্চ কুমিল্লা নগরী থেকে ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ ও এসআই সহিদুল ইসলামসহ ডিবির একটি টিম তাছলিমাকে গ্রেফতার করার পরই তার স্বীকারোক্তিতে বেড়িয়ে আসে হত্যার লোমহর্ষক কাহিনী। পরদিন গ্রেফতার করা হয় তাছলিমার প্রেমিক শরিফুল ইসলামকে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম জানান, বিদেশ থেকে পাঠানো স্বামীর অর্থ দিয়ে স্ত্রীর নামে কেনা সম্পত্তি এবং স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়ে সন্দেহ থেকেই দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। আরই এর জের ধরে ওই প্রবাসীকে হত্যা করা হয়।

আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তাসলিমা জানান, ১ নভেম্বর গভীর রাতে পাঁচ লাখ টাকার চুক্তিতে ছয়জন সন্ত্রাসীকে ভাড়া করা হয়। আর এরই মধ্যে রাতেই তিন লাখ টাকা পরিশোধ করার পর সন্ত্রাসীরা কৌশলে ওই প্রবাসীকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে বাড়ির অদূরে খাল পাড়ে নিয়ে হত্যা করে মরদেহ সেখানে ফেলে দেয়।

আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঘাতকদের আটক এবং নিহতের মরদেহ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানায় পুলিশ।

কামাল উদ্দিন/এআরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।