বই ছাপার সঙ্কট এড়াতে এনসিটিবির নতুন উদ্যোগ


প্রকাশিত: ০৮:২০ এএম, ১৬ মার্চ ২০১৬

বিনামূল্যের বই ছাপার সঙ্কট এড়াতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এনসিটিবি এমন সিদ্ধান্ত  নিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।   
 
সূত্র জানায়, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মান সম্পন্ন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে দুই লটের বেশি কোন প্রতিষ্ঠানকেই ছাপার কাজ দেওয়া হবে না। এছাড়া বইয়ের অতরিক্ত দর আহ্বান করলে তা বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার  হবে।  ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের বই পৌঁছে যাবে।

সূত্র আরো জানায়, চলতি শিক্ষা বর্ষের মাধ্যমিকের ১৩০টি, মাদ্রাসার ১৭৫টি এবং প্রাথমিকের ৯৮ লটে মোট ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৬০টি বই ছাপানো হয়। প্রেস মালিকরা সিন্ডিকেট করে দরপত্র হাতিয়ে নিতেন প্রতি বছর। তাদের কাছে জিম্মি ছিল এনসিটিবি। এসব প্রেস মালিক এনসিটিবির বই ছাপা বন্ধ রেখে বেশি লাভের আশায় নোট বই ছাপাতো। ফলে বিনামূল্যের বই ছাপা নিয়ে সার্বক্ষণিক চিন্তিত থাকতো এনসিটিবি কর্মকর্তারা। এছাড়া প্রেস মালিকদের কারণে গত বছর বই ছাপায় চরম বিলম্ব হয়। এনসিটিবি কর্মকর্তাদেরর সকল ছুটি বাতিল করা হয়। তারা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন।   

অপরদিকে, দ্রুত ছাপার কারণে বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এছাড়া  নিউজ প্রিন্ট কাগজে বই ছাপার অভিযোগ রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে বর্তমানে অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক অনুসন্ধান করছে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বরাত দিয়ে গত ২৪ আগস্ট এনসিটিবিকে বই ছাপায় একটি নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ‘দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ও সেবা ক্রয় সংক্রান্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন` শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়েছে, একটি প্রতিষ্ঠানকে একই সঙ্গে দুইটি কাজ বা লটের বেশি না দেয়া এবং একই সঙ্গে দুটি কাজ পেলে যথাসময়ে শুরু এবং শেষ  নিশ্চিত হলে পরে আরো কাজ পাবে এমন বিধান সন্নিবেশ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (সমন্বয় ও সংসদ) মো. আখতারউজ জামান স্বাক্ষরিত পত্রে আরো বলা হয়, এমতাবস্থায় সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ও  সেবা ক্রয় সম্পাদনে প্রধানমন্ত্রীর উপর্যুক্ত অনুশাসন যথাযথভাবে প্রতিপালন নিশ্চিতের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এনসিটিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দেশিয় শিল্প ও উদোক্তাদের উৎসাহিত এবং অর্থনীতিকে গতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রী দুটি লটের বেশি কাজ কোন প্রতিষ্ঠানকে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে প্রতি বছর জুন মাসে বাজেট পাসের পরে বই ছাপার কাজ শুরু হতো। এ বছর ৩ জানুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়া হয়। যে কারণে গত বছরের চেয়ে এবার দুই শতাংশ বেশি শিক্ষার্থী ধরে বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে।

প্রাথমিকের ৩৭টি বই ছাপার কাগজ এনসিটিবি ছাপাখানার মালিকদের সরবরাহ করে। এসব কাগজ সংগ্রহে ইতোমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ৬ এপ্রিল ওয়াকওর্ডার দেওয়া হবে। গত বছর সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলি পেপার মিল নির্ধারিত সময়ের দুইমাস পরে কাগজ সরবরাহ করলেও এবার এরই মধ্যে তারা কাগজ দিতে শুরু করেছে।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এবার প্রাথমিকের বই ছাপানোর জন্য লটের সংখ্যা কমার কারণে প্রেস মালিকেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে। দাখিলে ১৩০টি ও মাধ্যমিকের ৪৭২টি লটে বই ছাপার জন্য শীঘ্রই টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এই দুই স্তরের বই শিট প্রেসে (সাধারণ প্রেস) ছাপানো হয়। এধরনের পাঁচশ প্রেস থাকায় এ ক্ষেত্রেও তুমুল প্রতিযোগিতা হবে। এবছরই প্রথম এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে এনসিটিবির সদস্য (টেক্সট) অধ্যাপক ড. মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকী বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই মান সম্পন্ন বই ছাপার কাজ শেষ করতে লটের সংখ্যা কমানো হয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই বই ছাপার কাজ শেষ হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রাথমিকের বই ছাপানোর জন্য দেশে ৩৫টির মতো ওয়েব মেশিন থাকায় যারা দৈনিক খবরের কাগজ ছাপে তাদেরও বই ছাপানোর কাজে সস্মৃক্ত করার চেষ্টা চলছে। আগামী এপ্রিল, মে ও জুনে পর্যায়ক্রমে বই ছাপার টেন্ডার আহ্বান করা হবে বলেও জানান তিনি।

এনএম/এমএমজেড/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।