‘সরকার ৫৪ ও ১৬৭ ধারা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়নি’
৫৪ ধারা ও ১৬৭ ধারা বাস্তবায়নের জন্য সরেকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েনি বলে অভিযোগ করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। মঙ্গলবার ৫৪ ধারা ও ১৬৭ ধারা নির্দেশনার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানিতে আদালতে তিনি এ অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে দীর্ঘ একযুগ পর আজ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ আপিলের শুনানি শুরু করেন। তবে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১১ মে দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
শুনানিতে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজা। উপস্থিত ছিলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম।
আদালতে ড. কামাল হোসেন বলেন, এক যুগ আগে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। হাইকোর্টের রায়ের নির্দেশনাগুলো এখনো বহাল আছে। কিন্তু সরকার ওই রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি। যদি রায় বাস্তবায়ন করা হতো তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো না।
শুরুতেই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা নিয়মিত আপিল আবেদন মঞ্জুরের আদেশ পড়ে শোনায়। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি মুলতবি করে সময় প্রার্থনা করেন। আদালত সময় আবেদন মঞ্জুর করে শুনানির জন্য নতুন তারিখ ধার্য করেন।
ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৫৪ ধারা অনুযায়ী গ্রেফতার ও ১৬৭ ধারা অনুযায়ী রিমান্ডের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেই নির্দেশনার বিষয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই আপিলের ওপর মঙ্গলবার শুনানি শুরু হয়।
হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনাসূমহ :
ক. আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না।
খ. কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে।
গ. গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃতকে এর কারণ জানাতে হবে।
ঘ. বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেফতারকৃতর নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে।
ঙ. গ্রেফতারকৃতকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়র সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।
চ. গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের অভ্যন্তরে কাঁচ নির্মিত বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন।
ছ. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে।
ট. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিষ্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।
এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে তখন ৬ মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিলো।
এফএইচ/এসকেডি/আরআইপি