মে দিবস
গ্রিসে মজুরি বৃদ্ধির দাবি প্রবাসী বাংলাদেশিদের

গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশি রফিক হাওলাদার কাজ করেন একটি পোশাক কারখানায়। আজ মে দিবসের ছুটি, তাই তিনি খুব খুশি। তবে কেন এই মে দিবস পালন করা হয় তিনি জানেন না। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বজুড়ে পালন হলেও শ্রমজীবী বেশিরভাগ মানুষের কাছেই তার মূল ইতিহাস অজানা। শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় অনেকের কাছে দিনটি যেন মেলা।
৩০ এপ্রিল দুপুরে রফিক হাওলাদার এর কাছে মে দিবসের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন—‘এই দিনে আমাদের সকল কারখানা বন্ধ থাকে। এই দিন ছুটির দিন। আমরা ছুটির দিনে ঘোরাঘুরি করি, পরিবারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলি।’
কৃষি কাজে নিয়োজিত আরেক প্রবাসী কাইয়ুম উল্লাহ বলেন, ‘মে দিবসের ইতিহাস জানি না, তবে মে দিবসের মিছিল হয় প্রতি বছর আমরা মিছিলে যাই। এবারও যাবো। আমরা বেতন বাড়ানোর জন্য দাবি জানাই।’
- আরও পড়ুন
- শ্রমিকদের কতটা কল্যাণ করছে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন?
- শ্রমিকদের জীবনচক্র আটকে আছে চা বাগানের গণ্ডিতে
বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে গ্রিসে। চলতি বছরের ১০ এপ্রিলও আন্দোলন করেছেন গ্রিসের শ্রমজীবী মানুষেরা। একদিনের ধর্মঘটে শহরটির ফেরি, বিমান ও ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। রাজধানীর বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রণকারী নাবিক ও রেল শ্রমিকদের পাশাপাশি, নগর কর্তৃপক্ষের কর্মী এবং বাস ও মেট্রো কর্মীরাও পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। এতে স্থবির হয়ে পড়ে সব যোগাযোগ ব্যবস্থা।
গ্রিসের সরকার ২০১৯ সালে মাসিক ন্যূনতম মজুরি ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৮৮০ ইউরো করেছে। তবে দেশটির সবচেয়ে বড় শ্রমিক ইউনিয়নগুলো জানিয়েছে, দ্রুত বর্ধনশীল খাদ্য, বিদ্যুৎ ও আবাসন ব্যয়ের জন্য অনেক পরিবারকে এখনো জীবিকা নির্বাহ করতে লড়াই করতে হচ্ছে।
গ্রিস ২০০৯-২০১৮ সালের ঋণ সংকট থেকে বেরিয়ে এসেছে। তবে তা করতে গিয়ে দেশটির কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মজুরি ও পেনশন ব্যাপক কমিয়ে আনা হয়েছিল। সে সময় প্রায় ২৯০ বিলিয়ন ইউরোর বেইলআউটের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়।
এ বছর গ্রিসের অর্থনীতিতে ২.৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যা অভিন্ন মুদ্রার ইউরোজোনের অন্যান্য অর্থনীতিকেও ছাড়িয়ে গেছে।
নিজেদের কথা বলছেন গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা-ছবি জাগো নিউজ
গ্রিসের সরকার ২০১৯ সালে মাসিক ন্যূনতম মজুরি ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৮৮০ ইউরো করেছে। তবে দেশটির সবচেয়ে বড় শ্রমিক ইউনিয়নগুলো জানিয়েছে, দ্রুত বর্ধনশীল খাদ্য, বিদ্যুৎ ও আবাসন ব্যয়ের জন্য অনেক পরিবারকে এখনো জীবিকা নির্বাহ করতে লড়াই করতে হচ্ছে।
বেসরকারি খাতের কর্মীরা জানান, শ্রমিকদের বেতন মাসের মাত্র ১০ বা ১৫ তারিখ পর্যন্ত চলে। এর ফলে বাসস্থান, খাদ্য, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে তারা সক্ষম হচ্ছেন না।
গ্রিসের শ্রমিক সংগঠন ‘জেনারেল কনফেডারেশন অব গ্রিক ওয়ার্কার্স’-এর সদস্য সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি। মুদ্রাস্ফীতির কারণে গ্রিক শ্রমিকরা ২০১৯ সালের তুলনায় ১০% কম পণ্য কিনছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। তারা উল্লেখযোগ্য বেতন বৃদ্ধি ও যৌথ শ্রম চুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
মে দিবসের ইতিহাস জানি না, তবে মে দিবসের মিছিল হয় প্রতি বছর আমরা মিছিলে যাই। এবারও যাবো। আমরা বেতন বাড়ানোর জন্য দাবি জানাই।
মে দিবস শ্রম দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবেই বেশি পরিচিত। শ্রমিকদের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও অর্জনের কথা মনে করিয়ে দিতে বিশ্বজুড়ে দিনটি পালিত হয়ে থাকে।
১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে দলে দলে শ্রমিক কাজের সময় সীমা আট ঘণ্টা নির্ধারণ, কাজের উন্নত পরিবেশ, মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট করেন। বর্বরোচিতভাবে সেই বিক্ষোভ দমন করা হয়েছিল।
সেই ঘটনায় গোটা বিশ্ব সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। শিকাগোর শ্রমিকদের সেই আত্মদানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রমজীবী মানুষের অধিকার। এরপর থেকেই দিনটি পালিত হয়ে আসছে।
প্রতিবারের মতো এবারও বিশ্বজুড়ে দিনটি পালিত হয়েছে। এশিয়াজুড়েও বিভিন্ন দেশে শ্রমিকরা বুধবার তাদের অধিকার আদায়ের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে।
এসএইচএস/এএসএম