পরিবেশ দিবসে শপথ হোক পরিবেশবান্ধব কোরবানি

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১১:০৬ এএম, ০৫ জুন ২০২৫

বছরের প্রতিটি দিনই আমাদের জীবনে কিছু না কিছু গুরুত্ব বহন করে। তবে বিশেষ কিছুদিন আমাদের মনে করিয়ে দেয় দায়িত্ববোধ, সচেতনতা ও সমাজের প্রতি কর্তব্যের কথা। তেমনই একটি দিন ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস। আর এ বছর পরিবেশ দিবস এসেছে এমন সময়ে, যখন দুই দিন পরই পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ।

এই দুটি উপলক্ষ আমাদের একই সঙ্গে সচেতনতা ও আধ্যাত্মিকতার পরীক্ষায় ফেলে। একদিকে পরিবেশ রক্ষার অঙ্গীকার, অন্যদিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানির বিধান। এই দুইয়ের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই বরং সামঞ্জস্যতা তৈরি করা জরুরি। পরিবেশকে অক্ষুণ্ণ রেখে ঈদ উদযাপন করাই প্রকৃত দ্বীনদারির পরিচয়।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের নগরজীবনে কোরবানির ঈদ মানেই যেন রাস্তাঘাটে রক্ত, মাংসের বর্জ্য, দুর্গন্ধ আর বৃষ্টিতে নর্দমার গলিত জলাবদ্ধতা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্থান ব্যবহারের পরিবর্তে বাসার সামনে, গলিতে কিংবা ড্রেনের পাশেই কোরবানি করা হয়। এতে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয় এবং জলাবদ্ধতার আশঙ্কা বেড়ে যায়। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিও মারাত্মকভাবে বাড়ে।

ঈদুল আজহার আনন্দের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে পশু কোরবানির বিশেষ ধর্মীয় তাৎপর্য। তবে ধর্মীয় আচরণ পালনকালে পরিবেশের প্রতি সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কিছু সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই কোরবানিকে পরিবেশবান্ধব করে তোলা সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

প্রথমত, নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা প্রতি বছর ঈদের আগে নির্দিষ্ট কোরবানির স্থান নির্ধারণ করে তালিকা প্রকাশ করে। এসব স্থানে কোরবানি দিলে বর্জ্য সহজে পরিষ্কার হয় এবং পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে। এতে নাগরিকদের সুবিধা হয় এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, কোরবানির আগে মহল্লাটি পরিষ্কার রাখা দরকার, বিশেষ করে ড্রেন ও নর্দমা। পর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকলে পশুর রক্ত ও বর্জ্য জমে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং রোগজীবাণু বিস্তার লাভ করতে পারে। পানি চলাচলের পথ নিশ্চিত করে এসব সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা যায়।

তৃতীয়ত, কোরবানির সময় নিচে বড় পলিথিন শিট বা জল-চৌকি ব্যবহার করা উচিত। এতে রক্ত ও অন্যান্য তরল পদার্থ ছড়ায় না এবং চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। বিশেষ করে শহুরে আবাসিক এলাকায় এই ব্যবস্থা খুব কার্যকর।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

চতুর্থত, যাদের বাসায় কিছুটা খোলা জায়গা আছে, তারা কোরবানির বর্জ্য মাটিতে পুঁতে জৈব সার তৈরি করতে পারেন। এটি পরিবেশবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি গাছপালা ও ছাদবাগানের জন্য উপকারী। বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করার এই উদ্যোগ বাড়ির পরিবেশকেও সতেজ করে।

সবশেষে, কোরবানি দেওয়ার পর দ্রুত বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করতে হবে। পশুর রক্ত, চামড়া বা হাড় যেন দীর্ঘ সময় খোলা জায়গায় না পড়ে, সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় যত দ্রুত সম্ভব পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো গেলে, দুর্গন্ধ ও রোগজীবাণুর ঝুঁকি কমে যায়।

পরিবেশবান্ধব কোরবানির এই উদ্যোগগুলো শুধু আমাদের আশপাশকে সুন্দর রাখে না, বরং সচেতন নাগরিক সমাজ গঠনের মাইলফলকও স্পর্শ করে।

বিজ্ঞাপন

ইসলামে পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অংশ বলা হয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) কেবল কোরবানি করার নির্দেশ দেননি, পশুর প্রতি সদয় আচরণ, পশু জবাইয়ের আগে প্রস্তুতি ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই ঈদের আনন্দের মাঝেও আমাদের স্মরণ রাখতে হবে পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ রক্ষা ইসলামেরই অঙ্গ।

২০২৫ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে, আমাদের নিজের ভাবনায় হোক একটি নতুন প্রতিপাদ্য ‘কোরবানির আনন্দ ফুটে উঠুক পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনায়’। ঈদে কোরবানি দেওয়ার আগে ও পরে অবশ্যই সেই পরিবেশবান্ধব আচরণ বজায় রাখতে হবে যা বিশ্ব পরিবেশ দিবস আমাদের শিক্ষা দেয়। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা সম্ভব এবং কোরবানির আনন্দ হবে টেকসই ও সুস্থ পরিবেশের সঙ্গে সমন্বিত।

পরিবেশ রক্ষায় নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বের শেষ নেই। যেখানে সেখানে কোরবানি না করে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি, দ্রুত পরিচ্ছন্ন অভিযান, এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এসব উদ্যোগ একসঙ্গে আমাদের শহর, পরিবেশ এবং ঈদ উভয়কেই সুন্দর করে তুলবে।

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব আর আত্মত্যাগের শিক্ষা। অন্যদিকে পরিবেশ দিবস মানে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার শপথ। এই দুটি উপলক্ষ যদি আমরা সমন্বয়ে পালন করি, তাহলে ঈদের ধর্মীয় গুরুত্ব বজায় থাকবে, পরিবেশও সুরক্ষিত থাকবে। ঈদ হোক পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব ও মানবিকতার প্রতীক।

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।