লাখো মানুষের অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

আহমাদুল কবির
আহমাদুল কবির আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া প্রতিনিধি মালয়েশিয়া
প্রকাশিত: ০৯:১১ এএম, ৩১ আগস্ট ২০২৫

লাখো মানুষের উচ্ছ্বাস আর দেশাত্মবোধের আবহে মালয়েশিয়া উদযাপন করেছে স্বাধীনতার ৬৮তম বার্ষিকী। প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ার দাতারান প্রাঙ্গণে আয়োজিত মহা-অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐক্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ‌‘মালয়েশিয়া মাদানি’–র চেতনা দৃপ্তভাবে ফুটে ওঠে।

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মাদানি মালয়েশিয়া: রাকিয়াত দিসানতুনি’। মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা, সামরিক শোভাযাত্রা এবং নাগরিক অংশগ্রহণে প্রতিফলিত হয় জাতির ঐক্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের অঙ্গীকার।

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

উৎসব শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টায়, সমাপ্তি ঘটে সুলতান ইব্রাহিম ও রাজা জারিথ সোফিয়ার আগমনের মাধ্যমে। বিশেষ মুহূর্তে রাজা নিজে নীল রঙের প্রোটন স্যাট্রিয়া নিও গাড়ি চালিয়ে আসেন—যা জনতার উচ্ছ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

এরপর জাতীয় সঙ্গীত ‘নেগারাকু’ গাওয়া হয় এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। রয়্যাল আর্টিলারি রেজিমেন্টের নেতৃত্বে ১৪ দফা তোপধ্বনিতে প্রতীকীভাবে উঠে আসে মালয়েশিয়ার ১৪টি রাজ্য।

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম, উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি, ফাদিল্লাহ ইউসুফসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিদেশি কূটনীতিক ও অতিথিদের উপস্থিতি উৎসবকে আন্তর্জাতিক মাত্রা দেয়।

পেরাকের তেলুক বাতিকে নৌকাডুবিতে উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ ফিরদৌস আরবাইন রুকুন নেগারার শপথ পাঠের নেতৃত্ব দেন। তার এই ভূমিকা দর্শকদের আবেগতাড়িত করে।

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

বিখ্যাত শিল্পী সিটি নুরহালিজার পরিবেশনায় ছিল উৎসবের আবেগঘন মুহূর্ত। তিনি স্বাধীনতা ও মালয়েশিয়া দিবস উপলক্ষে নতুন অফিসিয়াল থিম সং পরিবেশন করেন, যেখানে হাজারো দর্শক কণ্ঠ মিলিয়ে এক অনন্য সংহতির বার্তা তৈরি করে।

চূড়ান্ত আকর্ষণ ছিল কুচকাওয়াজ। এতে অংশ নেয় একুশটি মার্চিং ব্যান্ড, সাতটি ভাসমান ফ্লোট, ৫০৮টি স্থল ও আকাশযান, ১১৬টি জনসেবামূলক প্রাণী এবং ১৪,০৬২ জন অংশগ্রহণকারী।

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

প্যারেডটি ছয়টি ভাগে বিভক্ত ছিল: জাতীয়তা, জনগণের শোভাযাত্রা, মঙ্গল, জাতীয় নিরাপত্তা, বিমান প্রদর্শনী এবং বিশেষ মাদানি পরিবেশনা। সেলাঙ্গর ও ফেডারেল টেরিটরির ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই হাজার শিক্ষার্থীর মানব-গ্রাফিক ও কণ্ঠসংগীত পুরো পরিবেশকে রঙিন করে তোলে।

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

‘আজকের এই উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভিন্ন ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি সত্ত্বেও আমরা সবাই এক মালয়েশিয়ান,’—বললেন কুয়ালালামপুর থেকে আসা দর্শনার্থী নুরহানিজাহ।

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাজিফ জানান, সিটি নুরহালিজার গানটির সময় পুরো ভিড় এক হয়ে গেয়েছিল—এটাই আমাদের ঐক্যের প্রকৃত শক্তি।’

১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট মালয়েশিয়া ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শিল্পোন্নত এই দেশটি শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে মালাই জাতির গৌরবময় অধ্যায় রচনা করে।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]