লন্ডনে জাপানি ঐতিহ্যের মহোৎসব

এস ইসলাম
এস ইসলাম এস ইসলাম , লন্ডন থেকে
প্রকাশিত: ১০:৪২ এএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

লন্ডনের ঐতিহাসিক রয়্যাল অ্যালবার্ট হল যেন কয়েক দিনের জন্য রূপ নিয়েছে একখণ্ড জাপানে। শতাব্দী প্রাচীন সুমো কুস্তির ঐতিহ্য এবার পাঁচ দিনের ‌‘গ্র্যান্ড সুমো টুর্নামেন্ট’ এর মাধ্যমে ইউরোপের মাটিতে মুগ্ধ করছে দর্শকদের।

সুমো—যার ইতিহাস ২৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত—এ এমন এক খেলা যেখানে প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগে ৪৫ মিনিটের আচার-অনুষ্ঠানই দর্শকদের আবিষ্ট করে রাখে। লন্ডনের ভিক্টোরিয়ান যুগের এই কনসার্ট হলটি এখন সেজেছে একেবারে জাপানি মন্দিরের আদলে; ছয় টন ওজনের একটি মন্দিরের ছাদ ঝুলছে মঞ্চের ওপরে, আর তার নিচে ছোট্ট মাটির রিংয়ে হচ্ছে সুমোর যুদ্ধ।

কুস্তিগিররা, যাদের বলা হয় রিকিশি, লড়াইয়ের আগে পা ঠুকে অশুভ আত্মা তাড়ান, হাততালি দিয়ে দেবতাদের আহ্বান জানান এবং লবণ ছিটিয়ে রিং পরিশুদ্ধ করেন—সবই শতাব্দী পুরোনো রীতির অংশ। তবে ঐতিহ্যের এই আবহেও প্রযুক্তির ছোঁয়া রয়েছে; বিশাল ঘূর্ণায়মান এলইডি স্ক্রিনে ভেসে উঠছে মুহূর্তের রিপ্লে ও পরিসংখ্যান।

লন্ডনে জাপানি ঐতিহ্যের মহোৎসব

সুমোর প্রেমে পড়া নতুন প্রজন্ম

লন্ডনের এই টুর্নামেন্ট ঘিরে ভিড় জমেছে নানা দেশ থেকে আসা সুমোপ্রেমীদের। ব্রিটিশ নাগরিক সিয়ান স্পেন্সার জানালেন, ‘দুই বছর আগে এক এলোমেলো ভিডিওতেই প্রথম সুমো দেখেছিলাম। তারপর থেকেই আসক্ত হয়ে যাই। এবার সামনে থেকে দেখার সুযোগ, জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা।’

এডিনবরা থেকে আসা জুলিয়া ও সেজারও একইভাবে মুগ্ধ। জাপান ভ্রমণের সময় প্রথম সুমো দেখে তারা এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে ফিরে এসে অনলাইনে নানা গ্রুপে যোগ দেন, নতুন বন্ধু খুঁজে পান।

ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংযোগ

১৯৯১ সালের পর এই প্রথমবার লন্ডনে ফিরেছে গ্র্যান্ড সুমো টুর্নামেন্ট। এর আগে সর্বশেষ বিদেশ সফর হয়েছিল ২০১৩ সালে, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়। জাপানে প্রতি বছর ছয়টি বড় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন হলেও, সেগুলোর টিকিট পাওয়া এখন ভাগ্যের ব্যাপার। তাই লন্ডনের এই আয়োজন ইউরোপীয় দর্শকদের জন্য এক বিরল সুযোগ।

লন্ডনের বাসিন্দা কাসপার এলিয়ট বললেন, ‘টিভিতে দেখা আর বাস্তবে দেখা এক নয়। কাছ থেকে বুঝতে পারলাম, কত দ্রুত আর শক্তিশালী তারা।’

লন্ডনে জাপানি ঐতিহ্যের মহোৎসব

সুমো লড়াইয়ে প্রতিযোগীর লক্ষ্য সহজ—প্রতিপক্ষকে রিংয়ের বাইরে ঠেলে দেওয়া বা মাটিতে ফেলা। কিন্তু এই কয়েক সেকেন্ডের লড়াইয়ে যে বিস্ফোরণ ঘটে, তা পুরো অ্যালবার্ট হল কাঁপিয়ে তোলে।

ইতিহাসের গৌরব, বর্তমানের চ্যালেঞ্জ

যদিও দর্শকপ্রিয়তা বাড়ছে, সুমো এখনো নানা বিতর্কের মুখোমুখি। অতীতে বুলিং, ম্যাচ ফিক্সিং ও নারী অংশগ্রহণে বাধার মতো অভিযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এর ভাবমূর্তি। এমনকি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন রিকিশি যোগ দেওয়ার হারও কমেছে।

তবুও, রয়্যাল অ্যালবার্ট হলের এই মহোৎসব প্রমাণ করে দিচ্ছে—সুমো শুধু জাপানের নয় বরং এক অনন্য বৈশ্বিক সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]