টেনিস জগতে সবার নজর এখন জোকোভিচের ওপর

রহমান মৃধা
রহমান মৃধা রহমান মৃধা
প্রকাশিত: ১২:১৩ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০২১

ইতালির তুরিন শহরে চলছে বছরের শেষ টেনিস ইভেন্ট এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনালসের ৫২তম আসর। এবারের এটিপি ওয়ার্ল্ড ফাইনাল ট্যুরে নেই রজার ফেদেরার, নেই রাফায়েল নাদাল, তবে আছেন নোভাক জোকোভিচ। সেমিফাইনালে নোভাক জোকোভিচ (বিশ্ব নম্বর ওয়ান) পরাজিত হয়েছেন জার্মান টেনিস তারকা (বিশ্ব নম্বর থ্রি) আলেক্সজান্ডার জেরেভের কাছে।

যদিও টেনিসের সেরা রজার ফেদেরার, নোভাক জোকোভিচ ও রাফায়েল নাদালের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও জোকোভিচ এখন সবার শীর্ষে রয়েছেন। টেনিস জগতে তাহলে কি জোকোভিচ নতুন বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করবেন? এ প্রশ্ন আমার মনে, এ প্রশ্ন বিশ্বের সব ভক্তের মনে।

বিজ্ঞাপন

পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই প্রতিযোগিতা শুরু, বেঁচে বা টিকে থাকার প্রতিযোগিতা দিয়ে মানুষের যাত্রা। তারপর উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতা, ধর্মের প্রতিযোগিতা, রূপ ও গুণের প্রতিযোগিতা। বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতা, ভালোবাসার প্রতিযোগিতা, এমনকি ঘৃণারও প্রতিযোগিতা বিরাজমান সারা বিশ্বে।

খেলাধুলার প্রতিযোগিতা তো সর্বজনস্বীকৃত। খেলাধুলায় দুটি দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৃষ্টি হয়, সৃষ্টি হয় বিনোদনের, গড়ে ওঠে উত্তেজনা, উদ্দীপনা এবং সবশেষে জয়-পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় তার বহিঃপ্রকাশ। যুগ যুগ ধরে খেলাধুলার মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয় সেরাদের মধ্যে সেরা, যাকে বলে বিশ্বসেরা। আবার কখনোবা বিশ্ব রেকর্ড ধারণকারী হিসেবে অনেকের নাম ফুটে ওঠে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

পৃথিবী সৃষ্টির পর শুধু দৌড়ের ওপর কতবার বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে, তা কি আমরা জানি বা কতবার তা ভেঙে নতুন রেকর্ডের সৃষ্টি হয়েছে? তবে এ মুহূর্ত পর্যন্ত উসাইন বোল্টের রেকর্ডই সর্বকালের সৃষ্ট রেকর্ড। অতিসত্বর জাপানে শুরু হতে যাচ্ছে অলিম্পিক, দেখা যাক এমন কেউ আছে কি বিশ্বে যে এ যুগে বোল্টের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে?

আজ আমি টেনিসের জগৎ এবং তার রেকর্ড ও ভবিষ্যৎ রেকর্ড নিয়ে আলোচনা করব। অন্যান্য খেলাধুলার মতো টেনিসেও বিশ্ব রেকর্ড বা খ্যাতি অর্জন করা সম্ভব। কথায় বলে, ‘everything is impossible until someone makes it possible’ যেমন পৃথিবী সৃষ্টির পর পুরুষদের মধ্যে প্রথম যিনি টেনিসে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম (গ্র্যান্ড স্লাম হলো চারটি স্লাম টুর্নামেন্ট, যে টুর্নামেন্টগুলোকে বেশি পয়েন্ট, ঐতিহ্য, প্রাইজমানি ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টেনিস ইভেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গ্র্যান্ড স্লামকে মেজরও বলা হয়। গ্র্যান্ড স্লামগুলো হলো অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন ও ইউএস ওপেন) জয়লাভ করেন, তিনি হলেন রজার ফেদেরার। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, বর্তমানে তিনজন বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় ২০টি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা অর্জন করেছেন এবং তারা তিনজনই টেনিসের জগতে কিংবদন্তি চলমান খেলোয়াড়। তাদের তিনজনেরই নতুন বিশ্ব রেকর্ড তৈরির সম্ভাবনা ছিল এবারের ইয়ার অ্যান্ড ইউএস ওপেনে।

ভাবতেই অবাক লাগে একবার নয়, দুইবার নয়, ২০ বার গ্র্যান্ড স্লাম বিজয় এবং বর্তমান তিনজন রয়েছে একই সারিতে এবং তিনজনই অ্যাকটিভ খেলোয়াড়। যেহেতু খেলাধুলায় রয়েছে প্রতিযোগিতা, সেহেতু পুল এবং পুশ কনসেপ্টেটি ভীষণভাবে কাজ করে এখানে, ফলে টেনিসের জগতে বিশ্বের তিনজন নামকরা সুপারস্টার রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচ পরস্পর পরস্পরকে সারাক্ষণ পুল ও পুশ করার কারণেই এমনটি অবিরল ঘটনা ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বর্তমানের টেনিসে যা লক্ষণীয় তা হলো শারীরিক যোগ্যতা। যেহেতু রজার চল্লিশের দুয়ারে পা রেখেছেন, শারীরিক দিক দিয়ে আগের মতো পারদর্শিতা দেখাতে পারছেন না। তারপরও শুধু পদবির কারণে নয়, তাকে টেনিস কোর্টে সবাই দেখতে চায়, কারণ তিনি লিজেন্ড এবং টেনিসে সেরাদের মধ্যে সেরা। নাদালের বয়সও কম নয়, তারপর তার যে খেলার স্টাইল তাতে শারীরিক দক্ষতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সে ক্ষেত্রে বলা কঠিন কী অবস্থা তার।

তবে জোকোভিচের বর্তমান খেলার কৌশল, শারীরিক দক্ষতা এবং খেলার পারফরম্যান্স দেখে মনে হচ্ছে তিনিই ভবিষ্যৎ টেনিসের সর্বকালের সর্বশেষ বিশ্ব গ্র্যান্ড স্লাম রেকর্ডধারী হয়ে থাকবেন কমপক্ষে এক যুগের বেশি সময় ধরে। কত দিন এই রেকর্ড ধরে রাখবেন সেটা নয়, প্রশ্ন এখন কত বছর ধরে রাখবেন!

বর্তমান নতুন প্রজন্মের খেলা দেখে যতটুকু মনে হচ্ছে তাতে বলতে চাই বারবার একই খেলোয়াড় সেরা ট্রফি জয়ী হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, প্রতিযোগিতার যুগে বলা মুশকিল কে, কখন কাকে, কীভাবে পরাজিত করে!

বিজ্ঞাপন

আমি কিছুদিন আগে লিখেছি টেনিস এবং রজার ফেদেরারকে নিয়ে। যেমন উল্লেখ করেছি যা-ই হোক না কেন, আর যে যা-ই ভাবুন না কেন, কিছুই যায় আসে না। কারণ, রজার ফেদেরার টেনিস ক্যারিয়ারও একদিন শেষ হবে, প্রশ্ন কবে, কখন এবং কোথায়? তবে রজার ফেদেরারের টেনিসের ওপর যে আসক্তি, তা শুধু তার খেলা দেখলেই বোঝা যায়।

রজার শুধু বিশ্বের সেরা টেনিস খেলোয়াড়ই নন, তিনি একটি আনন্দঘন মুহূর্ত। তিনি সবার হৃদয়ের এক ভালোবাসা। একদিন টেনিস জগৎ তাকে ছাড়া টেনিস খেলবে, হয়তো তার কথাও ভুলে যাবে সময়ের সঙ্গে। নতুন চ্যাম্পিয়নের জন্ম হবে ঠিকই, তবে আমার মনে হয় রজার ফেদেরার সবার হৃদয়ে টেনিসের আইকন হয়ে বেঁচে থাকবেন দুনিয়াতে।

তবে যে বিষয়টি এখন তুলে ধরব, যা হয়তো নতুন ইতিহাসের এক পূর্বাভাস। সেটা আবার কী? রজার বা নাদাল যত সহজে বিশ্ববাসীর মন জয় করেছেন, জোকোভিচের পক্ষে সেটা তত সহজ হয়ে ওঠেনি। কারণ একটাই, সেটা হলো জোকোভিচের জন্ম হয়েছে ইস্ট ব্লকে। পশ্চিমা দেশগুলো খুব সহজে ইস্ট ইউরোপের কারও প্রতিভা মেনে নিতে এখনো অভ্যস্ত হয়নি, বিশেষ করে টেনিসের ওপর।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না। কারণ, জোকোভিচ ২০টি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা অলরেডি জিতেছেন। এ বছর ইউএস ওপেন ফাইনালে জোকোভিচকে ইতিহাস গড়তে দিলেন না দানিল মেদভেদেভ। ইউএস ওপেনের ফাইনালে বিশ্বের এক নম্বর পুরুষ খেলোয়াড়কে হারিয়ে প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জিতেছেন রুশ খেলোয়াড়। বিশ্বের দুই নম্বর খেলোয়াড় মেদভেদেভ এবার ম্যাচটি জিতেছেন ৬–৪, ৬–৪, ৬–৪ গেমে। জোকোভিচকে অপেক্ষা করতে হবে ২০২২ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন পর্যন্ত।

কয়েক দিন আগে রোলেক্স প্যারিস মাস্টার্স হলো সিজনের নবম এবং শেষ ATP মাস্টার্স ১০০০ ইভেন্ট শেষ হলো। বিশ্বের দুই নম্বর খেলোয়াড় মেদভেদেভ ম্যাচটি জোকোভিচের কাছে হেরে গেলেন ৪–৬, ৬–৩, ৬–৩ গেমে। এটা ছিল জোকোভিচের ৩৭তম মাস্টার্স ১০০০ শিরোপা বিজয়।

চলছে বছরের শেষ টেনিস ইভেন্ট এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনালসের ৫২তম আসর। পুরুষদের মধ্যে শীর্ষে থাকা প্রথম আটজন খেলোয়াড় টেনিসের এই ঐতিহ্যবাহী আসরে অংশ নিয়েছেন। রোববার (২১ নভেম্বর) শেষ হবে এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনালস জোকোভিচ ছাড়া। He is also a human after all, তারপরও সবার নজর ওয়ার্ল্ড নম্বর জোকোভিচের ওপর।

বিজ্ঞাপন

এখন আমার ভাবনা থেকে যেটা বলতে চাই, সেটা হলো জোকোভিচ যদি এভাবে খেলতে থাকেন, তাহলে কম করে হলেও আরও ৪-৬টা গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা অর্জন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। প্রশ্ন কে, কবে, কখন তাকে ব্রেক করে নতুন বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করবে!

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, rahman.mridha@gmail.com

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com