সুয়েজ খালে কিছুক্ষণ

‘কা’নাত-আল-সুয়াইস’ বা সুয়েজ ক্যানেল, মিশরের পবিত্র ভূমি সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত একটি কৃত্তিম সামুদ্রিক খাল। এটি সুয়েজের ইস্তমাসের মাধ্যমে ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে এবং আফ্রিকা ও এশিয়াকে বিভক্ত করেছে। এই খালটি ভূমধ্য ও লোহিত সাগরের মাঝে সংযোগ স্থাপন করে এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের যোগাযোগ সহজতর করেছে।
পঁচিশ বছর আগে প্রথম দেখতে যাই সুয়েজ ক্যানেল, তখন খুব কাছে থেকেই দেখা যেত পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে। মনে হতো হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে জাহাজ। গতকাল ফের গিয়েছিল সুয়েজ ক্যানেল দেখতে। রাজধানী কায়রো থেকে বাসে চড়ে সুয়েজ সিটি। দু ঘণ্টার রাস্তা, ভাড়া বাংলাদেশি ২০০ টাকা আর মিশরের ২০ গিনি বা পাউন্ড।
সেখান থেকে টেক্সি করে সুয়েজ পোর্ট এলাকা। গাড়ি থেকে নেমেই ধাক্কা খেলাম। আগের সুয়েজ ক্যানেল আর এখনকার সুয়েজ ক্যানেল মধ্য অনেক পার্থক্য। পোর্টের আশপাশে নিরাপত্তার দেওয়াল তুলে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা কড়া নজর দারিতে রেখেছেন সুয়েজকে। জাহাজ দেখার জন্য পানির কাছাকাছি যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
পোর্টের পাশেই একটি মসজিদের ছবি তুলতে গিয়ে পড়ি বিপদে। মিশর সামরিক বাহিনীর সদস্যরা আমার মোবাইল নিয়ে জানতে চায় মসজিদের ছবি তুলছি কেন। আমার পরিচয় দেওয়ার পরও বিভিন্ন জেরা করতে থাকে। দূতাবাসের পরিচয়পত্র সঙ্গে থাকায় রক্ষা পেলাম। অবশেষে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে বাজার থেকে সুয়েজ ক্যানেলের সুস্বাদু চিংড়ি মাছ নিয়ে ফিরতে হলো কায়রো।
একটা সময় ইউরোপ থেকে এশিয়া যাওয়ার জন্য আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে যেতে হত। এতে করে সমুদ্র পথে প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার পথ বেশি পাড়ি দিতে হতো জাহাজগুলোকে। ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর মিশর ও সুদানের তৎকালীন খেদিভ ইসমাইল পাশা আনুষ্ঠানিকভাবে সুয়েজ খাল উদ্বোধন করেন।
এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বুকে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরকে জুড়ে দিয়ে নির্মিত সুয়েজ খাল যেন দুই মহাদেশের জন্য আশীর্বাদরূপে আবির্ভূত হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পণ্য পরিবহনেও বিপুল পরিমাণ অর্থের সঞ্চয় হয় এই পথ দিয়ে যাতায়াতের কারণে।
১৮৫৯ সালে শুরু হয়ে দশ বছর ধরে চলে সুয়েজ খননের কাজ। খনন শেষে ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে সর্ব সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় এটি। শুরুতে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৬৪ কিলোমিটার ও গভীরতা ৮ মিটার। এরপর বেশ কিছু সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ করা হয়। ২০১০ সালের হিসাব মতে, এর দৈর্ঘ্য ১৯০.৩ কিলোমিটার, গভীরতা ২৪ মিটার।
মিশর ১৯৫৬ সালে সুয়েল খালকে জাতীয়করণ করে এর মালিকানা পরিচালনার দায়িত্ব দেয় দেশটির সুয়েজ ক্যানেল কর্তৃপক্ষকে। আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, সুয়েজ খাল শান্তিকালীন অথবা যুদ্ধকালীন সব সময়েই যে কোনো দেশের পতাকাবাহী বাণিজ্যিক বা যুদ্ধ জাহাজের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
কিছুদিন আগে সুয়েজ খালে আটকেপড়া কনটেইনারবাহী জাহাজ ‘এভার গিভেন’ এর কারণে এটি বিশ্ববাসীর কাছে আবারও আলোচনায় আসে।
এমআরএম/এএসএম