মেলবোর্নে ঢাকার স্বাদ পাই

প্রিয় শহর, অবশ্যই ঢাকা। ঢাকার পরে আমার দ্বিতীয় প্রিয় শহর মেলবোর্ন। এতটাই প্রিয়; যেখানেই বেড়াতে যাই না কেন, সবসময়ই মন পড়ে থাকে মেলবোর্ন। শুধু মনে হয় কখন ফিরবো আমার প্রিয় শহরে। না ফেরা পর্যন্ত মনটা আমার ছটফট করে।
এখন মেলবোর্নকেই শুধু বাড়ি মনে হয়। কোথাও গেলে মনে হয় বেড়াতে এসেছি, হয়তো অনেক বছর ধরে আছি এজন্য। কেন জানি একটা অদ্ভুত মায়া পড়ে গেছে শহরজুড়ে। যে একবার থাকতে শুরু করেছে, সে আর কোথাও যেতে পারে না, গেলেও কদিন পর ঠিকই ফিরে আসে।
মেলবোর্নেও ইদানীং সকাল-বিকেল ঢাকার মতোই যানজট লেগে থাকে। মানুষ প্রচুর বেড়ে গেছে। অফিস আর স্কুলের সময়ে শহর কিছুক্ষণের জন্য হলেও থেমে যায়। যে যাই ভাবুন আমার কিন্তু দেখতে মন্দ লাগে না। প্ৰিয় শহর ঢাকাকে মনে করিয়ে দেয়।
ঘড়ির কাঁটা ধরে ছুটে চলা যান্ত্রিক জীবনে কয় সেকেন্ড জিড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। নয়তো ভুলেই যেতাম যে জীবনের একটা বড় সময় যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল। মানুষ যায়ই বলুক না কেন যানজট আমার বেশ ভালোই লাগে!
মেলবোর্ন সিটিতে যারা পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন তারা সবাই স্বীকার করবেন যে গ্রিক প্যাটার্নের শহরের প্রতিটি রাস্তায় ছড়িয়ে আছে আভিজাত্য। প্রাচীন ও আধুনিকতার একদম যুতসই সমন্বয় এই মেলবোর্ন।
কালের সাক্ষী বিশাল গাছ, দেয়াল চিত্র, ম্যুরাল, পুরোনো ভিক্টোরিয়া ঘরানার বিল্ডিং, কুকস কটেজ, স্রাইন অব রিমেম্বারেন্স, গ্রন্থাগার আর জাদুঘরের সঙ্গে টেক্কা দিতে দাঁড়িয়ে গেছে নতুন স্থাপত্য কলার বহুতল ভবন। ফেডারেশন স্কয়ার, সোনায় মোড়ানো ইউরেকা টাওয়ার, সাউথের্ন স্টার, ক্রাউন ক্যাসিনো, ডকল্যান্ডসহ ইত্যাদি নাম না শেষ হওয়া অনেক কিছুই।
পুরো শহরটা চারকোনা প্যাটার্নের লেন। স্ট্রিট আর এভিনিউগুলো মিলে মিশে তৈরি করেছে একরাশ সুন্দরের অলিগলি যা মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট আর এর মাঝেই বেশ কিছু পুরোনো ট্রামের চলাচল সেই সৌন্দর্যকে বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। দেখার মতো অনেক কিছুই আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। যদি আপনি ভ্রমণপ্রিয় হন!
এছাড়া কিছু ঐতিহাসিক বাগান, রয়াল বোটানিক্যাল গার্ডেন, আলবার্ট পার্ক, এম সি জি, আর স্রোতহীন কিন্তু ঢেউ তোলা ইয়ারা নদী। হাতে একবেলা নিয়ে হুড়াহুড়ি করে ঠিক মার্ক দিয়ে দেখা নয়, সময় নিয়ে ধীরে দেখলে বুঝতে পারা যায় কোনায় কোনায় লুকিয়ে থাকা গুপ্তধনগুলোকে।
মেলবোর্ন শহরের কাছে আমি ঋণী। সংসার জীবনের শুরু। প্রথম মা হওয়া। প্রথম সন্তান। প্রথম চাকরি। প্রথম গাড়ি। প্রথম ব্যবসায় হাত দেওয়া। প্রথম একা একা হাঁটা। প্রথম নিজেকে নিরাপদ ভাবা। এ রকম অনেক অনেক প্রথম আছে। যা বলে শেষ হবে না।
এত বছর ধরে আছি, তবুও মাঝে মাঝে এক প্রিয় শহরের মাঝে আর এক প্রিয় শহরকে খুঁজি। বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি শহরে থেকেও বিশ্বের অনেকের চোখে অনেক দোষে ভরা প্রিয় শহর ঢাকাকেই খুঁজে ফিরি।
এই খুঁজে বেড়ানো অনেকটা মনের শুকনো ঘাঁতে মলম দেওয়ার মতো। যেই মলম শুধু এই যানজটেই খুঁজে পাই। মন্দের ভালো, তবুও তো একটু পাই।
এমআরএম/এএসএম