মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোর অনীহা

বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম দেশ মালয়েশিয়া। দেশটির অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশি কর্মীদের রয়েছে অনেক অবদান। তবে প্রায়ই প্রবাসী কর্মীদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালগুলোর অনীহা দেখা যায়। লাখ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করলেও বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার চিকিৎসা সম্পর্কিত কোনো চুক্তি নেই।
এমতাবস্থায় রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, চিকিৎসা ঘাটতি ও জটিলতা বছরের পর বছর রয়েছে। প্রবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা ও কল্যাণ নিশ্চিতে সরকারকেই পথ খুঁজে বের করতে হবে।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া অনেক বাংলাদেশির টাকা বকেয়া রয়েছে। তারা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় কৌশলে অন্যের পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে ভর্তি হন এবং একটু সুস্থ হলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। যারা এজেন্ট থাকে বা আশ্রয় দেয় তারাও চিকিৎসা বিল পরিশোধ করে না। এজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশিদের সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করে।
আরও জানা যায়, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বকেয়া চিকিৎসা বিল নিয়ে এইচকেএল (হাসপাতাল কুয়ালালামপুর) প্রায়ই যৌথ সভা করে। সেখানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন। প্রতিবারই বিল পরিশোধের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু হাইকমিশন চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের কাছে থেকে যেমন বকেয়া বিল আদায় করে দেয় না এবং সরকারি উদ্যোগেও বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয় না। এছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় কেউ মারা গেলে হাসপাতালের বিল বকেয়া থাকলে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় না। বিল পরিশোধ করার জন্য দূতাবাসে চিঠি পাঠায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, দূতাবাস জোরালোভাবে মালয়েশিয়া সরকারকে জানিয়েছে, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী রোগীর তথ্য নিয়ে চিকিৎসা দেয়। সেখানে কর্মীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, ঠিকানা, কর্মস্থল, নিয়োগকর্তার নাম লেখা থাকে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে কর্মী ও নিয়োগকর্তার খুঁজে পাওয়া সম্ভব, সে অনুযায়ী তথ্য দিলে দূতাবাস বিল আদায়ে সহযোগিতা করতে পারবে। কিন্তু হাসপাতালে সে রকম তথ্য নেই।
মালয়েশিয়ার কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠান সিল কনসাল্টের সিইও প্রকৌশলী অমিরুল ইসলাম খোকন।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠান সিল কনসাল্টের সিইও প্রকৌশলী অমিরুল ইসলাম খোকন বলেন, বাংলাদেশি কর্মীরা অভিবাসন খরচ, দালালের খরচ, পাসপোর্ট, ভিসা, থাকা, খাওয়ার খরচ এবং পরিবারের দাবি মেটাতে গিয়ে দিন-রাত শুধু কাজ করেন। একই কারণে নিজের অসুস্থ হলেও চিকিৎসা করতেও অনীহা করেন। বাংলাদেশি কোনো হাতুড়ে ডাক্তারের কাছ থেকে কিছু ট্যাবলেট খেয়ে একটু সুস্থ হলে তারা আবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অবৈধ হোক বা বৈধ কর্মী হোক সবার ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে দূতাবাসের সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সিনিয়র প্রফেসর মো. জাহাঙ্গীর আলম
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার সিনিয়র প্রফেসর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মালয়েশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। আমাদের বাংলাদেশি কর্মীরা মালয়েশিয়ায় সম্মানের জায়গায় থেকে কাজ করছেন। মালয়েশিয়ার প্রত্যেকটি অবকাটামো উন্নয়নে আমাদের কর্মী ভাইদের হাত রয়েছে। সে দিক থেকে কালক্ষেপণ না করে প্রত্যেক কর্মীকে মালয়েশিয়া সরকারের বিধি অনুযায়ী বীমার আওতায় এনে তাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে দূতাবাসসহ সকলেই এগিয়ে আসতে হবে ।
৮০ দশক থেকে বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছে মালয়েশিয়ায়। তাদের কল্যাণ দেখার জন্য মিশন ও মিশনে লেবার উইং থাকলেও কিছু বিষয় গুরুত্ব কমেছে এবং সেগুলোর সমাধান করা হয়নি। নেপাল তাদের দেশের কর্মীদের চিকিৎসা নিয়ে অনেক বেশি সোচ্চার। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে নেপাল কর্মীর চিকিৎসা ও মৃত্যু বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করেছে, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমন কোনো নজির নেই।
মালয়েশিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন কিন্তু বিল পরিশোধ না করা বাংলাদেশের নাগরিকদের সংখ্যা ও তাদের নামের বিপরীতে সর্বোচ্চ বিল বাকি রয়েছে।
এদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী কল্যাণ নীতি, আইন ও বিধি অনুযায়ী দূতাবাসের শ্রম কর্মকর্তাদের নিয়মিত হাসপাতাল ভিজিট করে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশি কর্মীদের খোঁজ খবর নেওয়া এবং মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট করার বিধান রয়েছে। সেটি জোরদার করা হলে চিকিৎসা প্রাপ্তির অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
আরএডি/এমআরএম/জেআইএম