নিউইয়র্কে নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতির মিলনমেলা

নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতির উদ্যোগে মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২৮ আগস্ট) নিউইয়র্কের হ্যাকশেয়ার স্টেট পার্কে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে আয়োজিত হয়। এ সময় প্রবাসী বাংলাদেশিরা পরিবার-পরিজন নিয়ে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জবাসী ছাড়াও নিউইয়র্ক বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তা এবং মূলধারার রাজনীতিকরা উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- নিউইয়র্ক ডেমক্রেট পার্টির ডিস্ট্রিক্ট এট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান এবং সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী।
বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরাও এদিন বনভোজনে অংশ নেন। তারা নাগরিক কোলাহল ছেড়ে বনের ছায়ায় গল্প-আড্ডায় মেতেছিলেন। বনভোজনের উদ্বোধন করেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান। তিনি বেলুন উড়িয়ে বনভোজনের উদ্বোধন করেন। এ সময় সংগঠনের উপদেষ্টা এবং কর্মকর্তারা তার পাশে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের উপদেষ্টা আর্শাদুল বারী আসাদ, মোহাম্মদ মহসীন ও মোহাম্মদ সাঈদ শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ মজিবর ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামাল টিটু। বনভোজনকে সাফল্যমন্ডিত করায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য দেন বনভোজন কমিটির আহ্বায়ক মো. আব্দুল আউয়াল ও সদস্য সচিব সাদেকুর রহমান লিখন এবং সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক দর্পণ কবীর।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতির বনভোজনে ছিল বিভিন্ন বয়সের ছেলেমেয়েদের খেলাধূলা, নারীদের মিউজিক্যাল পিলো খেলা এবং পুরুষদের গোল করার প্রতিযোগিতা। শিশুদের খেলাধুলার মধ্যে ছিল দৌড়ে গিয়ে অংক করে সবার আগে ফিরে আসার প্রতিযোগিতা, সুঁইসূতো দৌড় প্রতিযোগিতা এবং দৌড়ে গিয়ে পাঁচবার চক্কর কেটে ফিরে আসার প্রতিযোগিতা। এই খেলাগুলোর পরিচালনা করেন জাতীয় সাবেক ফুটবলার জানে আলম বাবু।
বনভোজনের আকর্ষণ ছিল মনোজ্ঞা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং র্যাফেল ড্র। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন মরিয়ম মারিয়া এবং মাহফুজা মিতা। এছড়া কবিতা আবৃত্তি করেন সাদেকুর রহমান লিখন।
বনভোজনের মধ্যাহ্ন ভোজের আগে শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী বলেন, প্রবাসে আমরাই একে-অন্যের আত্মীয়। বনভোজন যারাই করুক, অংশ নিতে পারলে আমরাও আনন্দিত হই। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন আসন্ন। আমরা যেন যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচিত করি। সংগঠনের উপদেষ্টা আর্শাদুল বারী আসাদ নিউইয়র্কে নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতির ভবন হবে-এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো লক্ষ্যই আর অসম্ভব মনে হবে না। তিনি মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ মজিবর বনভোজন সফল করায় সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে বলেন, ন্যায়-নীতি বিবেচনা করে পথ চললে এবং আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে কোনো বাধা টিকতে পারবে না। সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে সংগঠনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। এই প্রমাণ দিয়ে আমরা আরো এগিয়ে যাব, আশা করি। তাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পালা শেষ হলে দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হয়।
বনভোজনে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ছাড়াও ছিল আম ভর্তা এবং ঝালমুড়ি। এর সঙ্গে ছিল বৈকালিক চা পান পর্ব। প্রবীণ প্রবাসী কালু মিয়া বনভোজনের মাঠে চা তৈরি করে আগতদের আপ্যায়িত করেন। বনভোজনে আকর্ষণীয় র্যাফেল ড্র’র প্রথম পুরস্কার ছিল নগদ এক হাজার ডলার পুরস্কার।
এ পুরস্কারটির স্পন্সর ছিলেন মার্কস হোম কেয়ারের ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুল হক। দ্বিতীয় পুরস্কার ছিল নগদ পাঁচ শ’ ডলার। এছাড়া টিভি, ল্যাপটপ, অ্যাপল ওয়াচসহ আরো আকর্ষণী পুরস্কার দেওয়া হয় লটারি বিজয়ীদের।
এসব পুরস্কারের স্পন্সর এবং অনুষ্ঠানে অনুদানদাতা হলেন চিকিৎসক শামীম আহমেদ এমডি, আর্শাদুল বারী আসাদ (হিউম্যান নেটওয়ার্ক), মোশতাক আহমেদ নিউটন (রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী), শাহ জে. চৌধুরী (প্রতিষ্ঠাতা, শাহ গ্রুপ), নুরুল আমীন বাবু (প্রেসিডেন্ট, বাংলা ক্লাব), রুহুল আমীন সিদ্দিকী (সা.স. বাংলাদেশ সোসাইটি), নুরুল আজিম (রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী), মহিউদ্দিন দেওয়ান (সি. সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ সোসাইটি), মইনুল ইসলাম (সা. স. জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন), বেলায়েত হোসেন বেলাল (সিইও, বাংলা ট্রাভেলস), অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, গিয়াস আহমেদ (সভাপতি, জেবিবিএ), ডক্টর জাফর ইকবাল (ফার্মাসিস্ট-রকল্যান্ড কাউন্টি), জাকির এইচ চৌধুরী (রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী), হাসান জিলানী (ব্যবসায়), মহসীন ননী (ব্যবসায়ী), হাটবাজার (ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) এবং এম. ডি. সরফরাজ (ব্যবসায়ী, ফ্লোরিডা)।
বনভোজনে আগতদের বিনামূল্যে কোভিড টেস্টও করা হয়। ৪০ জন কোভিড টেস্ট করিয়েছেন এদিন। বনভোজনে অধিকাংশজন আসেন নিজেদের গাড়িতে চড়ে। তবে যাদের গাড়ি নেই, তারা এসেছিলেন বাসে চড়ে। জ্যামাইকা এলাকা (সাগর চাইনিজ রেস্টুরেন্ট) থেকে বাস ছেড়েছিল এবং তারা ফিরেও যান ওই এলাকায়।
এমআরএম/এমএস