জেগেছে তরুণ প্রজন্ম, জেগেছে বাংলাদেশ

রহমান মৃধা
রহমান মৃধা রহমান মৃধা
প্রকাশিত: ১১:৫৮ এএম, ০৫ নভেম্বর ২০২২

মানবিক ডাকে সাড়া ফেলতে একটি লেখা লিখেছে নতুন প্রজন্মের একটি ছেলে, যাকে আমি দূর থেকে চিনি যদিও তারে আমি চোখে দেখিনি। ছেলেটি ড্যাফোডিলে পড়ে। নতুন প্রজন্ম কীভাবে বিষয়টি দেখছে তা এখানে ফুটে উঠেছে। তার লেখাটি আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমার ভালোলাগা থেকে লেখাটি শেয়ার করলাম, আশাকরি সবার কাছে ভালো লাগবে।

আমি বাংলাদেশের পুরো মেডিকেল সেক্টরকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি! আমার নাম তাসকিয়া। আমার বাবা পেশায় ভ্যানচালক। জন্মের সময় বাড়িতে খুশির বন্যা বয়ে গেলেও, জন্মের সময় মাথার পেছনের অংশে টিউমার সদৃশ ছোট আকারের বস্তু দেখার পর নিমিষেই সকল আনন্দ শেষ হয়ে যায় আমার পরিবারের।

বিজ্ঞাপন

আমার বাবা মায়ের টাকা ছিল না রুটিন চেকআপের জন্য জার্মানি বা ইংল্যান্ড তো দূরের কথা বাংলাদেশের কোনো মেডিকেলে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রফি করে গর্ভধারণকালে আমি কেমন আছি সেটা দেখার। আমার মাথায় কি জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছিল সেটা তারা দেখতে পারেননি। আমার বাবা-মায়ের এখনও টাকা নেই, আমার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই।

তবুও আমার বাবা-মা আমাকে নিয়ে বসে থাকেনি। আমার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে আমাকে নিয়ে ছোটাছুটি করেন। মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছেন বেশ কয়েকবার। দিন দিন আমার ছোট টিউমার সদৃশ বস্তুটি বড় হতে থাকে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকগণ উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে ঢাকা মেডিকেল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল অথবা ঢাকা নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে রেফার করেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ওখানে কীভাবে আমাকে নিয়ে যাবে? তাদের কোন দিনে এনে দিনে খাওয়া, বাবা-মা তো আর্থিকভাবে কুলিয়ে উঠতে পারবে না। কারণ, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েও প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে চরা দামে পরীক্ষা নিরীক্ষা করারও সামর্থ্যও নেই আমার বাবা-মার!

কোনো উপায় না পেয়ে এলাকার শাহজাহান মিয়া আমার জন্য সুইডেন প্রবাসী মাহবুবুর রহমান মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. নাজমুল স্যারকে আমার বিষয়টি জানান। তিনি সাথে সাথেই আমার পরিবারকে সুচিকিৎসার আশ্বাস দেন।

আমার এখন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা চলছে। আমার চিকিৎসার টাকা যোগাড় করা যেমন আমার পরিবারের জন্যে একটা চ্যালেঞ্জ তেমনি আমার সুচিকিৎসা করাও চিকিৎসকদের জন্যে চ্যালেঞ্জ। আমার রোগটা হয়ত খুবই জটিল। আমি ঠিকমতো শুয়ে থাকতে বা ঘুমাতে পারি না।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

কারণ, মাথার নিচে যে ফুটন্ত মাংসপেশী বেড়ে চলেছে সেটাই বড় সমস্যা। আমি জানি না শেষ পর্যন্ত বাঁচবো কিনা! কিন্তু তবুও আশা করি আমার এই দেশের মেডিকেল সেক্টর নিশ্চয়ই আমার এই জটিল বিষয়টা নিয়ে গবেষণা করবেন, আমার চিকিৎসার দায়িত্ব যখন নিয়েছেন তখন জানবেন আমার কি হয়েছে, সেটা বিশ্লেষণ করে আমার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

যদি শেষে মারাও যাই তাহলে আমার যা ঘটেছে, কেন ঘটেছে, কীভাবে ঘটেছে, কীভাবে সমাধান করা যেত বা প্রতিরোধ করা যেত সেসব কিছু গবেষণাপত্রে লিখে রাখবেন যেন এটা কাজে লাগে। পরবর্তীতে আমার মত কোনো এক শিশুর এসব হওয়া থেকে আটকানো যায় বা হলেও তার জন্য যাতে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে। আমার চিকিৎসা সঠিক না হলেও তাদের যেন সুচিকিৎসা হয়।

আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার যাতে উন্নতি হয়, আমরা যাতে দেশেই সুচিকিৎসা পেতে পারি। রুটিন চেকআপের জন্য যাতে আর কাউকে বিদেশে যেতে না হয়। তোমরা আমাকে না হলেও আমার রোগটি সম্পর্কে জানো এবং নতুন প্রজন্মের মেডিকেলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জানতে সুযোগ করে দাও। আমি চেয়ে আছি তোমাদের অপেক্ষায়। আর দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে সুচিকিৎসার অপেক্ষায়।

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

আমার রোগ একটা চ্যালেঞ্জ, আমার বিশ্বাস তোমরা পারবে আমার জন্য কিছু করতে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ জানাই। আর যারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রতিও রইলো ভালোবাসা। আমার জন্য দোয়া কর যাতে সুস্থ হয়ে উঠি।

তাসকিয়ার পক্ষে
মো. গোলাম সারোয়ার সাইমুম
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com