অবশেষে দেশে ফিরছেন মালয়েশিয়ায় দুর্ঘটনায় আহত মাহবুব

অবশেষে দেশে ফিরছেন মালয়েশিয়ায় দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক মাহবুব আলম (৪৮)। প্রায় পাঁচ মাস মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
গত ২২ জুন মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের শাহ আলম শহরে পানির পাইপ মেরামত করতে গিয়ে গুরুতর আহত হন মাহবুব। তখন থেকেই তিনি স্থানীয় শাহ আলম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মুখের হাড় ভেঙে গেছে। ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তিনি মাথায়ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।
তবে মাহবুবের সেরে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী সেখানকার চিকিৎসকেরা। সেক্ষেত্রে বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় বহন করা তার পরিবারের পক্ষে খুব কঠিন। তাই দেশে ফিরিয়ে এনে সাধ্যমতো তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
আহত হওয়ার পর শুরুতে মাহবুবকে ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হলেও পরে তাকে স্থানান্তর করা হয় হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)। চিকিৎসা অব্যাহত না রাখলে তাকে বাঁচানো কঠিন বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
এ পর্যন্ত (১৮ নভেম্বর পর্যন্ত) সেখানকার শাহ আলম হাসপাতালে মাহবুবের চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে ৭৭ হাজার রিঙ্গিত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮ লাখ টাকার বেশি। এ টাকা পরিশোধ করা তার পরিবারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সরকার ও বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানায় পরিবার।
মাহবুবের স্ত্রী সিমা আক্তারের এ আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ৯ হাজার রিঙ্গিত (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই লাখ টাকা) সহায়তা করেন। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকেও সহায়তা দেওয়া হয়। মাহবুবের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন বাংলাদেশ ফোরাম অ্যাসোসিয়েশন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন মালয়েশিয়া, প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। এরইমধ্যে সবার সহযোগিতায় হাসপাতালের ৪৭ হাজার রিঙ্গিত বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
এদিকে মাহবুবকে দেশে ফেরাতে বিমান ভাড়া, চিকিৎসক ও নার্সদের খরচ বাবদ আরও প্রায় ২৭ হাজার রিঙ্গিত খরচ হচ্ছে। যা হাইকমিশন ও প্রবাসীদের সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে।
২০১৬ সালে ওয়ার্ক পারমিটে পাম অয়েল বাগানে কাজ নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি যান মাহবুব। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকে তিনি অবৈধভাবে দেশটিতে অবস্থান করছিলেন। পরে সরকারের রিক্যালিব্রেশন প্রক্রিয়ায় বৈধ হন। মাহবুবের স্ত্রী ও তিন মেয়ে থাকেন গাজীপুর বোর্ডবাজার এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। তার উপার্জনের ওপর নির্ভর পুরো পরিবার।
মালয়েশিয়ায় থাকা মাহবুবের ভাতিজা আনোয়ার বলেন, মাহবুব সাব-এজেন্ট নেওয়া এক ইন্দোনেশিয়ানের অধীনে কাজ করতেন। তিনি নিজেও একজন শ্রমিক। কাজের ফাঁকে সময় পেলেই হাসপাতালে চাচাকে দেখতে যান। মাহবুবের চিকিৎসায় এরইমধ্যে নিজের সামান্য আয় থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচও করেছেন আনোয়ার।
এমএএইচ/এএসএম/এমকেআর